পশ্চিম ইউরোপে ফিরে আসছে নেকড়ে
২৩ মার্চ ২০১০সম্প্রতি জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ-রাইন ভেস্টফালিয়ায় কমপক্ষে একটি নেকড়ের উপস্থিতির খবর জনমনে বেশ আতঙ্কের ছাপ ফেলে দেয়৷ উল্লেখ্য, এই রাজ্যের পরেই রয়েছে ফ্রান্সের সীমান্ত রেখা৷ বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বেশ তড়িঘড়ি করেই ঐ নেকড়ের উপস্থিতি প্রমাণে উঠে-পড়ে লাগেন৷ ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং এর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয় যে, ঐ নেকড়ের হাতেই খুন হয়েছিল এক কৃষকের ভেড়া৷ ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে ইউরোপের ঐ অঞ্চলে নেকড়ের হাতে কোন গৃহপালিত জন্তু শিকার হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম৷
ঐ অঞ্চলে লাল শেয়ালদের আনাগোনা বৃদ্ধিও নেকড়ের আগমনের বার্তা দেয়৷ কারণ খাবার হিসেবে শেয়াল এবং তাদের বাচ্চাদেরকেই বেশি পছন্দ নেকড়েদের৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ শতকে বনবিড়াল এবং বাদামি ভাল্লুকদের বিলুপ্তি শেয়ালদের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে৷ এছাড়া মধ্য ইউরোপে প্রভাবশালী মাংসাশী প্রাণী হিসেবেও নিজেদের জায়গা করে নিতে সমর্থ হয়েছে শেয়াল শ্রেণী৷ পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলে শেয়ালদের উৎপাত বাড়ার সাথে সাথে বেশ স্বাভাবিকভাবেই নেকড়েরাও আনাগোনা শুরু করেছে বলে লক্ষ্য করছেন জীববিজ্ঞানীরা৷
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োজেফ রাইশহল্ফ বলেন, ‘‘নেকড়েরা যেভাবে পশ্চিমমুখী হয়েছে তাতে গোটা জার্মানি জুড়ে নেকড়েদের বিস্তার শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র৷'' তিনি মনে করেন, নেকড়েদের জন্য একটি ঘুরে দাঁড়ানোর স্থানে পরিণত হবে জার্মানি৷ তাঁর ধারণা, মধ্যযুগ থেকে অনুপস্থিত বন্যপশুদের ফিরে আসারই সূচনা ইঙ্গিত হচ্ছে নেকড়ে এবং শেয়ালদের আনাগোনা৷ তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঐ অঞ্চলে বেজি, ভোঁদড় এবং রাকুন নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে৷ ইউরোপের চমরি গাইগুলোও পশ্চিমমুখী৷ প্রকৃতপক্ষে চমরি গাইগুলো এখন চেক প্রজাতন্ত্রে তুলনামূলকভাবে সচরাচর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের শিকারী গোষ্ঠীর প্রধান ফোল্কার বোয়েনিং বলেন, নেকড়ের আগমন যেহেতু এই অঞ্চলে স্থানীয় বন্যপ্রাণীর জগতকে আরো সমৃদ্ধ করবে সেজন্য এটিকে স্বাগত জানাই৷ তবে এগুলোর উৎপাত অতিরিক্ত হয়ে গেলেও তাদের প্রতিরোধের কাজও করবেন শিকারীরাই, বলেন বোয়েনিং৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী