প্রবল উত্তাপ থেকে প্যারিসকে রক্ষার উদ্যোগ
৩ জুলাই ২০২৪সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফল অনুযায়ী, ১৮৮৫ সাল থেকে প্যারিসের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে৷ সে তুলনায় ফ্রান্সের বাকি অংশে সেই বৃদ্ধির হার ছিল এক দশমিক সাত ডিগ্রি৷ তাই পৌরসভা এখন শহরটিকে শীতল করার লক্ষ্যে কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে৷ প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ডান লেয়ার বলেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক শহর নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল৷ এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনভাবে নির্মিত শহরগুলির একটি৷ সে কারণে শহরটি আসলে চুলার মতো৷ আরো বড় এলাকা জুড়ে ছড়ানো বসতির তুলনায় অনেক বেশি গরম৷ সেন্ট মার্টিন খাল ইতোমধ্যেই সাঁতারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে৷ আমরা সেন নদীর তীরে তিনটি জায়গা স্নানের জন্য খোলার পরিকল্পনা করছি৷ কংক্রিটের বদলে মাটি ব্যবহারের একটা পরিকল্পনা রয়েছে৷ সেই মাটি বৃষ্টির পানি টেনে নিয়ে বাতাস শীতল করতে পারবে৷ আমরা সংস্কারের মাধ্যমে পাবলিক ভবনগুলিও ইনসুলেট করছি৷''
শহরের অনেক চত্বর ইতোমধ্যেই সবুজ গাছপালায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন প্লাস দ্য লা নাসিওঁ৷ প্যারিসের দক্ষিণের এই রাউন্ডঅ্যাবাউটটিকে ‘আর্বান ফরেস্ট'-এ রূপান্তরিত করা হচ্ছে৷ কারণ গাছপালাও শহরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে৷ সেইসঙ্গে সেন নদী শুধু খোলা আকাশের নীচে সুইমিং পুল হয়ে উঠছে না, এখনই সেটি শহরের উত্তাপ কমাতেও অবদান রাখছে৷
সেই পরিবেশবান্ধব কুলিং সিস্টেমের নাম ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি'৷ মাটির নীচে পানির পাইপের সেই নেটওয়ার্ক শহরজুড়ে ৭০০-রও বেশি ভবনের ওয়াটার টিউব সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত৷ সেই প্রণালীর অন্যতম প্রধান প্লান্টে গেলে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷ প্রণালীর মহাসচিব রাফায়েল নাইরাল বলেন, ‘‘এই পাম্পগুলি বরফের মতো শীতল পানি সিস্টেমে ঠেলে দেয়৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় পানি শীতল করার রেফ্রিজারেশন ইউনিটগুলি গরম হয়ে ওঠে৷ সেই উত্তাপ সেন নদীতে বিলীন হয়ে যায়৷ নদীর পানি দ্বিতীয় এক সার্কিটের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়৷ প্রচলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ইউনিটের তুলনায় এই প্রণালী চালাতে অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷''
তার উপর সেই বিদ্যুৎ সম্পূর্ণভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি থেকে আসে৷ সৌর প্যানেলই মূলত সেই বিদ্যুতের উৎস৷ বর্তমানে সেই নেটওয়ার্কে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ ছড়িয়ে রয়েছে৷ আগামী দুই দশকে কোম্পানি পাইপের দৈর্ঘ্য তিন গুণ বাড়াতে চায়৷
‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি' ইতোমধ্যেই লুভ্র মিউজিয়াম ও প্যারিস সিটি হলের মতো জায়গাগুলিকে শীতল রাখতে সাহায্য করছে৷ কিন্তু ফ্রান্সের এক বিশেষজ্ঞের মতে, নদীর পানি ব্যবহার করে চালানো এয়ার কন্ডিশানিং সিস্টেম অন্তহীনভাবে সম্প্রসারণ করা সম্ভব নয়৷ এফিকাসিটি প্রকল্পের ম্যানেজার মর্গান কলোমব্যার বলেন, ‘‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি-র মতো প্রণালী নদীর পানি উষ্ণ করে তোলে৷ স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষার স্বার্থে একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সেটা নিরাপদ৷ অর্থাৎ এমন সিস্টেম একটা গোটা শহর শীতল করতে পারে না৷ কোন ভবন এভাবে শীতল রাখতে চাই, আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷''
ভবিষ্যতে ‘ফ্রেশ্যোর দ্য পারি' স্কুলগুলির সঙ্গেও সংযুক্ত করা হবে৷ কয়েকটি স্কুল ইতোমধ্যেই আরো সবুজ সড়ক ও পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার সুবিধা ভোগ করছে৷ সেইসঙ্গে গোটা শহর জুড়ে রাজপথে গাড়ির অংশ কমিয়ে সাইকেলের ট্র্যাক আরো বাড়ানো হচ্ছে৷ কিন্তু বাইসাইকেলের এমন রমরমার ফলে সবাই মোটেই খুশি নয়৷ এর ফলে ব্যস্ত এলাকায় যানজট বাড়ছে৷
অন্যান্য পরিকল্পনাকে ঘিরে বিতর্কের মাত্রা কম৷ যেমন নতুন এক ইনস্টলেশন, যা প্যারিসের উত্তরে স্বল্প আয়ের পাড়াগুলিতে ছায়া দিয়ে মাথার উপর কড়া রোদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে৷ প্যারিসের ডেপুটি মেয়র ডান লেয়ার বলেন, ‘‘সেই ছাদের নীচে দশ ডিগ্রি পর্যন্ত শীতল হতে পারে৷ আমরা এখানে নতুন এক স্প্রে ফাউন্টেনও বসিয়েছি৷''
প্যারিসে গ্রীষ্মকালে উত্তাপ বাড়লে এমন সব পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরো জরুরি হয়ে উঠবে৷
লিসা লুইস/এসবি