প্রমোদতরী ভ্রমণের কাহন
প্রমোদতরী ভ্রমণ কারো কাছে সহজে দেশ-বিদেশ ঘুরার সুযোগ, কারো কাছে উপভোগের বিলাসী ব্যবস্থা৷ কেউ পছন্দ করেন, কেউবা অপছন্দ৷ অবকাশ কাটানোর জন্য ক্রুজ ভ্রমণ দিনকে দিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ এর ভাল দিক যেমন আছে, তেমনি আছে খারাপও৷
ঝামেলাহীন ভ্রমণ
আজকে স্পেনের পালমায় তো কাল বার্সেলোনায়, পরসু মার্সেইতে৷ এমন ভ্রমণের জন্য আপনার বারবার স্যুটকেস গোছানোর দরকার নেই৷ ক্রুজ শিপ বা প্রমোদতরীর ভাসমান হোটেলই আপনাকে নিয়ে যাবে দর্শনীয় সব স্থানে৷ পর্যটকরা দেখতে পাবেন বিশ্বখ্যাত নগরগুলো, চেখে দেখতে পারেন খাবার, আছে স্থানীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য উপভোগের সুযোগ৷ প্রতিদিনই ঘুমাতে পারছেন একই বিছানায়৷ প্রমোদ তরীর চেয়ে ঝামেলাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ আর কোথায় মিলবে?
প্রবীণ-তরুণের মিলনমেলা
একটা সময়ে প্রমদতরীতে ভ্রমণে বের হতেন বয়স্করাই৷ চাকরীশেষে অবসর জীবনে সমুদ্রে ভেসে আয়েশ করে ঘুরে বেড়াতেন তারা দেশ বিদেশে৷ কিন্তু দিনকে দিন ক্রুজ ভ্রমণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরুণদের কাছেও৷ আধুনিক এসব জাহাজে থাকে সব বয়সীদের বিনোদনের ব্যবস্থা৷ খেলাধুলা, বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে উপভোগের নানা ব্যবস্থা৷
অভিযাত্রী জাহাজ
অতিরিক্ত ভিড় যাদের পছন্দ নয়, তারা ভিড়ে যেতে পারেন কোন অভিযাত্রী দলের জাহাজে৷ প্রচলিত ক্রুজগুলোর চেয়ে সেগুলো আলাদা, আকারে ছোট আর পরিবেশবান্ধবও৷ কিন্তু আপনাকে নিয়ে যাবে উত্তর মেরু কিংবা এন্টার্কটিকার দুর্গম উপকূলে৷ তবে এর জন্য টাকাও কিছুটা বেশি গুণতে হবে৷
খাবার চিন্তা
বড় ট্যুর অপারেটরদের আয়োজনে আপনার প্রয়োজনীয় কোন কিছুরই কমতি থাকে না৷ থাকে পর্যাপ্ত খাবার, পানীয়র ব্যবস্থা৷ দাম প্যাকেজেই অন্তর্ভুক্ত থাকে৷ খরচও তুলনামূলক কম৷
পরিবেশ দূষণ
তবে চিন্তা একটাই, পরিবেশ দূষণ৷ যে কারণে পরিবেশবিদরা এই ধরনের ক্রজের ঘোর সমালোচক৷ বিশ্বের বেশির ভাগ প্রমোদতরী চলে অপেক্ষাকৃত বিষাক্ত জ্বালানি তেলে৷ তবে অনেক জাহাজ কোম্পানি তরলীকৃত গ্যাস, হাইব্রিড ইলেকট্রিক সিস্টেমের মতো তুলনামূলক কম ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহার শুরু করেছে৷
বায়ুর উপর চাপ
জাহাজগুলো অনেক সময়ই নোঙ্গর করে বড় শহরগুলোর তীরে৷ যার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য তৈরি হয় বাড়তি চাপ৷ বন্দরে এসব জাহাজ চালু রাখতে হয় মেরিন ডিজেলের মাধ্যমে৷ যা গাড়িতে ব্যবহৃত ডিজেলের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকর৷
পর্যটকের ঢল
একটি জাহাজ কোন একটি শহরে ভিড়লে কয়েক হাজার নতুন পর্যটকের চাপ সামলাতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদেরকে৷ আর তা যদি ইতালির ভেনিস বা ক্রোয়েশিয়ার ডুবরোভনিকের মত ছোট আকারের হয় তাহলেতো কথাই নেই৷ রাস্তা, দর্শনীয় স্থানগুলো গিজগিজ করতে থাকে পর্যটকের ভিড়ে৷ কিছু শহরের কর্তৃপক্ষতো স্থানীয়দের প্রতিবাদের এমন জাহাজ আসার অনুমোদনই কমিয়ে দিয়েছে৷
কর ফাঁকি
ক্রুজ জাহাজের বেশিরভাগই ইতালি, মালটা আর বাহামাতে নিবন্ধিত৷ কেন জানেন? এইসব দেশে করের হার কম৷ এতে মুনাফা বেশি হয় ক্রজ জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের৷ কিন্তু তার যথাযথ ভাগ পান না কর্মচারীরা৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিষেবা কর্মীদের বেতন জার্মানির ন্যূনতম মজুরির চেয়ে কম৷