1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্নফাঁস: নেট বাতিল হলেও নিট কেন হবে না?

২১ জুন ২০২৪

নিট নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বাতিল নেট। পরীক্ষা হওয়ায় একদিনের মধ্যে ইউজিসি নেট বাতিল করে দিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4hLId
দিল্লিতে শাস্ত্রী ভবনের সামনে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ।
নিট পরীক্ষা বাতিল করে আবার নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ছবি: Hindustan Times/IMAGO

ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই জলঘোলা চলছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, অতিরিক্ত নম্বর দেয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক গড়িয়েছে শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্বে রয়েছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ সংস্থার। নিট নিয়ে রাজনীতি যখন সরগরম সেই সময় আরো একটি পরীক্ষা আতসকাচের তলায়।

বাতিল নেট

গত মঙ্গলবার ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট বা নেট নিয়েছিল এনটিএ। দেশ জুড়ে বহু পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসেছিলেন। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে নেট ছাড়পত্র দরকার হয়। এই ছাড়পত্র লাগে গবেষণার জন্যও। 

কিন্তু পরীক্ষা হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পরীক্ষা ঘিরে অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন সাইবার ক্রাইম থ্রেট অ্যানালিটক্স-এর কাছ থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি।

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, "নেট পরীক্ষার দিন বিকেল তিনটে নাগাদ ডার্ক ওয়েবে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। এরপর তা সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রশ্ন ও পরীক্ষার প্রকৃত প্রশ্নপত্র হুবহু এক হওয়ায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।"

শিক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, নতুন করে নেট নেয়া হবে। পরীক্ষার দিনক্ষণ দ্রুত ঘোষণা করা হবে। কীভাবে এই অনিয়ম হল, তা খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। বিবৃতিতে মন্ত্রক বলেছে, পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্তরের স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিরোধীদের আক্রমণ

বিগত কয়েক মাস পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল। একের পর এক মামলায় থমকে গিয়েছে স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া। অভিযোগ, বিপুল টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেয়া হয়েছে। 

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এ নিয়ে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছে। তাদের দলের একসময়ের মহাসচিব ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনো জেলে। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান বিরোধী হিসেবে বিজেপি নিশানা করেছে তৃণমূলকে। এবার নিট ও নেট অনিয়ম বিজেপিকে তুলেছে কাঠগড়ায়।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী পরীক্ষা পে চর্চা করেন, কবে নিট পে চর্চা করবেন। নেট পরীক্ষা বাতিল হওয়া লাখো পরীক্ষার্থীর জয়। এটা মোদী সরকারের অহংকারের পরাজয়। তারা আমাদের যুবাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের কুৎসিত চেষ্টা করেছিল।"

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বলেছেন, টাকার জন্য বিজেপি দেশের সর্বনাশ করছে।

সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লিখেছেন, "বিজেপি সরকারের দুর্নীতি যুব প্রজন্মের পক্ষে ক্ষতিকর। পরীক্ষায় অনিয়মের পর এবার নেট পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেল। শিক্ষামন্ত্রী কি দায় স্বীকার করবেন?"

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দায় স্বীকার করেছেন। প্রধান বলেন, "দায়িত্ব অস্বীকার করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে গোটা ঘটনার নৈতিক দায় আমার।" তবে দায় স্বীকার করলেও তিনি ইস্তফা দেননি।

প্রশ্ন ফাঁসের পরীক্ষা

নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর পরই শিক্ষা ক্ষেত্রে দুটি বড় মাপের অনিয়ম সামনে এসেছে। 

সর্বভারতীয় দুটি পরীক্ষা নিট ও নেট প্রশ্ন ফাঁস হলেও দুটির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, ডার্ক ওয়েবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় নেট বাতিল হলেও নিট অর্থাৎ ডাক্তারির প্রবেশিকা বাতিল হচ্ছে না।

দুটি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অবস্থান কেন ভিন্ন সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান। তার বক্তব্য, "নিটের প্রশ্ন শুধু বিহারে ফাঁস হয়েছে। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর জন্য কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী প্রভাবিত হোক, সেটা সরকার চায় না। তাই গোটা পরীক্ষা বাতিল হয়নি।" বিহারে বিরোধী নেতার পিএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

যদিও শুধু বিহার নয়, অন্যান্য রাজ্যেও প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে বিক্রির অভিযোগ সামনে এসেছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন নিট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যোগসাজসের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তার প্রতিকার কী হবে, সে ব্যাপারে এখনো অবস্থান স্পষ্ট নয় কেন্দ্রের।

বিকেন্দ্রীকরণের দাবি

প্রচুর টাকার খেলা আছে: অম্বিকেশ

দুটি বড় মাপের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় হইচই পড়ে গিয়েছে। ফের দাবি উঠেছে বিকেন্দ্রীকরণের।

মোদী সরকার যে এনটিএ তৈরি করেছিল, তা তুলে দেয়ার দাবি উঠেছে। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক, অধ্যাপক তরুণ নস্কর ডি ডব্লিউকে বলেন, "এনটিএ বাতিল করতে হবে, এটি জাতীয় শিক্ষানীতির ফসল। শিক্ষার কেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে, অথচ আমাদের বহু বৈচিত্রের দেশ। আগে রাজ্যভিত্তিক জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় গরিব মেধাবী ছেলেমেয়েদের সুযোগ পাওয়ার অবকাশ থাকত। এখন সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায় বসতে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে কোচিং নিতে হবে। সবটাই ধনীদের হাতে চলে যাচ্ছে।"

এই সূত্রে উঠছে শিক্ষার বেসরকারিকরণের অভিযোগ। অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, "এই যে দুর্নীতি হয়েছে, তাতে এনটিএ র সরাসরি যোগ আছে। প্রচুর টাকার খেলা আছে। বিজেপির নেতা, মন্ত্রীরা এর সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হচ্ছে, তা রাজনৈতিক পরিকল্পনা মোতাবেক। শিক্ষা বেসরকারিকরণ হাতে তুলে দিয়ে, সরকারি চাকরিকে সংকুচিত করে রাজনৈতিক দলগুলি টাকা তুলবে। সেই টাকা ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকবে।"

ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ভবিষ্যতের চিকিৎসক হোক বা শিক্ষক, বাছাই প্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ না হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠান বা পরিষেবার কোথায় নেমে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা বড়রা এমন একটা গোলমেলে ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি যে, ছাত্ররা পড়াশোনার পরিবেশ পাচ্ছে না। তারা দেখছে, পড়াশোনা করে কী লাভ। পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যাবে না, চাকরি মিলবে না। পরীক্ষা একটা প্রহসন হয়ে উঠেছে। ৯০-এর নীচে নম্বর না পেলে আত্মহত্যা করতে হয়। বিদ্বান শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ৬০-এর বেশি নম্বর পাননি এমএ পরীক্ষায়।"

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুব্রত সাহা ডি ডব্লিউকে বলেন, "সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এই ব্যবস্থা একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তারা আর এই শিক্ষক বা চিকিৎসকদের বিশ্বাস করতে পারবে না। এটা একটা সামাজিক সংকট। তাই সরকার বাহাদুরকে বলব, শিক্ষাকে বাণিজ্যের পণ্য করে না তুলে, সকলের সমান অধিকারের ব্যবস্থা করা হোক।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷