ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশ নিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ব্যাগ-বার্তা
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ওয়েনাড় থেকে উপনির্বাচনে জিতে এসে জীবনে এই প্রথমবার লোকসভার সাংসদ হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সাংসদ হিসাবে তার এটাই প্রথম অধিবেশন। প্রথম অধিবেশনেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে এবং রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ভারতের ডিজিটাল মিডিয়ায় তিনি দুইদিন ধরে শিরোনামে, প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে উঠে এসেছে তার ছবিসহ খবর। কিন্তু সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, প্রিয়াঙ্কা কি সিরিয়াস রাজনীতি থেকে সরে এসে প্রচারসর্বস্বতার দিকে চলে গেলেন?
কী করেছেন প্রিয়াংকা গান্ধী?
গত সোমবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাঁধে দেখা গেছে একটা ব্যাগ, যাতে লেখা ‘প্যালেস্টাইন'। এরপর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় সেই ছবি। শুরু হয়ে যায় প্রবল বিতর্ক। টিভি এবং সংবাদপত্রের পাতাতেও দেখা গেছে ব্যাগসহ প্রিয়াঙ্কার ছবি।
মঙ্গলবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাঁধে দেখা গেছে আরেকটি ব্যাগ। সেখানে লেখা, 'বাংলাদেশে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের পাশে দাঁড়াও'। সেই ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
দুইদিনই প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কংগ্রেসের অন্য সাংসদরাও ছিলেন। কিন্তু হইচই শুরু হয় প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে। বুধবার অবশ্য দাদা রাহুল গান্ধীসহ অন্য সাংসদদের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাকে আম্বেদকরের ছবি নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হতে দেখা যায়।
বিজেপি-র সমালোচনা
'ফিলিস্তিন' লেখা ব্যাগ বহন করার পরই বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রবল সমালোচনা শুরু করে দেন। দিল্লির সাংসদ মনোজ তিওয়ারি বলেন, ''প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (ভারতের) সংখ্যালঘুদের তোষণ করতে চাইছেন।'' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসপি সিং বাঘেল বলেন, ''কংগ্রেস এভাবে মুসলিম ভোট পেতে চাইছে।''
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ''আমরা ইসারায়েলে যুবকদের পাঠাচ্ছি, আর প্রিয়াঙ্কা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। উত্তরপ্রদেশ থেকে পাঁচ হাজার ছয়শ যুবক ইসরায়েলে গেছেন নির্মাণশিল্পে কাজ করার জন্য। তারা সেখানে বিনা পয়সায় খাবার ও থাকার জায়গা পাচ্ছে, দেড় লাখ টাকা বেতন পাচ্ছে।''
প্রিয়াঙ্কা কী বলছেন?
প্যালেস্টাইন লেখা ব্যাগ বহনের কারণ জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রিায়াংকা বলেছিলেন, ''এটা হলো পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয়। আমি কী পরবো, কোন ব্যাগ নেবো, সেটা তো অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারেন না।''
প্রিয়াঙ্কা আরো বলেন, ''আমি আমার ভাবনার কথা আগে সামাজিক মাধ্যমে বলেছি। আপনারা চাইলে আমার টুইট দেখে নিতে পারেন। আমি নতুন করে কোনো কথা বলছি না।''
শুধুই কি প্রচারসর্বস্ব রাজনীতি?
কোনো সন্দেহ নেই, গত দুইদিন ধরে প্রিয়াঙ্কা সামাজিক মাধ্যম, তথা ভারতের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি প্রবলভাবে উপস্থিত। কেউ তার সমালোচনা করেছেন, কেউ প্রশংসা করেছেন।
কিন্তু তার মধ্যেই যে প্রশ্নটা উঠেছে, এটা কি নিছক প্রচারসর্বস্ব রাজনীতি? প্রিয়াঙ্কা এতদিন সিরিয়াস রাজনীতির জন্য পরিচিত ছিলেন। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। কোনো ঘটনা ঘটলে সেখানে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি যখন দলের তরফে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে, তখন দলিতদের উপর আক্রমণ হলে, নারীদের উপর আক্রমণ হলে তিনি সেখানে গিয়েছেন। অনেকবার তাকে পুলিশ-প্রশাসন আটকে দিয়েছে। তিনি অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। সেই প্রিয়াঙ্কা প্রথমবার সাংসদ হয়ে কি সেই সিরিয়াস রাজনীতি থেকে সরে এলেন? নাকি, ডিজিটাল যুগের রাজনীতিকেই অস্ত্র করতে চান তিনি?
যোজনা কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা এবং সাহিত্যিক অমিতাভ রায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''মনে হচ্ছে, এটা একটা প্রচারসর্বস্ব রাজনীতি।''
অমিতাভ রায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে একমত ডিজিটাল প্রচারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ আশিস। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''কোনো সন্দেহ নেই, প্রচারের অভিমুখ নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসার জন্য প্রিয়াঙ্কা এটা করেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে যখন হইচই হচ্ছিল, তখন তিনি এই কাজ করতে পারতেন। কিন্তু তখন তিনি এটা করেননি। এখন সংসদ ভবন চত্বরে এই ব্যাগ নিয়ে তিনি যে প্রচারের কেন্দ্রে থাকলেন, তা আর যা-ই হোক সিরিয়াস রাজনীতি নয়।''
তবে আশিস মনে করেন, ''এখন সময় বদলে গেছে। ইন্টারনেটের যুগে, ডিজিটাল সময়ে দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টি খুব জরুরি। প্রতিটি দলই ভোটের সময় এখন অভিনব প্রচার করছে। সেখানে একটাই লক্ষ্য ভাইরাল হয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং ধারণা বদল করা।''
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তাও মনে করেন, ''রাজনীতি হলো ধারণাবদলের খেলা।'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রিয়াঙ্কা সেই চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে তার একটা বড় ক্ষতিও হতে পারে। সিরিয়াস রাজনীতিক হিসাবে তার যে পরিচয়, তাতে আঘাত লাগতে পারে। বর্তমান সময়ে অল্প আয়াসে পরিচিতি ও প্রচার পাওয়ার চেষ্টা সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। সেই হাতছানি প্রিয়াঙ্কাও এড়াতে পারলেন না।''