ফ্রান্সে মেয়েদের জন্য নতুন আইন
৫ মার্চ ২০১০এ ধরণের অপমানের হাত থেকে মহিলাদের রক্ষা করতে ফ্রান্স গ্রহণ করতে যাচ্ছে নতুন পদক্ষেপ৷ স্ত্রীকে হুমকি দেয়া, অপমান করা বা কটুক্তি করা আইন করে নিষিদ্ধ করা হবে ফ্রান্সে৷ কারণ এই অপমানও এক ধরণের মানসিক অত্যাচার৷ বলা প্রয়োজন যদি এই আইন পাশ হয় তাহলে ফ্রান্সই হবে প্রথম দেশ যেখানে স্ত্রীকে কটুক্তি বা অপমান করা দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ কারণ দেখা গেছে এসব গালিগালাজের চাপ এবং মানসিক অত্যাচার এক পর্যায়ে শারীরিক অত্যাচারে পরিণত হয়৷ কিন্তু অনেকেই বলেছে এ ধরণের অপমান বা হুমকি প্রমাণ করা একেবারেই অসম্ভব৷ কারণ আদালতে তখন ‘সে বলেছে, আমি বলিনি' - এ ধরণের কথাগুলো বারবার শুনতে হবে৷
প্রস্তাবিত আইনে স্ত্রীর প্রতি সব ধরণের কটুক্তি, হুমকি, অপমানসূচক উক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ স্ত্রী দেখতে কেমন, কোন ধরণের পোশাক পরেছে সে নিয়ে কটুক্তি করা বা হাসাহাসি করাও নিষিদ্ধ৷ বেশ কিছু প্রচারমাধ্যম ব্যঙ্গ করে জানিয়েছে, সাবধান, স্ত্রীর সঙ্গে উঁচু গলায় চেঁচামেচি কোরো না, তাহলে ফ্রান্সে তুমি অপরাধী হয়ে যাবে৷ এই আইনের খসড়া তৈরি করেছেন সাংসদ মার্তিন বিয়ার্দ৷ তিনি জানান, দাম্পত্য জীবনে এ ধরণের মানসিক অত্যাচার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুতর চাপ৷
তিনি জানান, অনেক ঘটনা আমাদের সামনে রয়েছে যেখানে দেখা গেছে একজন স্বামী কিভাবে প্রতিনিয়ত স্ত্রীকে অপমান করছে, গালিগালাজ করছে৷ এসব কারণে যে কোন মহিলা তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতে পারে৷ এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব ঘটনা ঘটছে বাচ্চাদের সামনেই৷ এই আইনের সাহায্যে যে কোন মহিলা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারেন৷ নিজেকে এ অপমানের হাত থেকে মুক্ত করতে পারেন - শুরু করতে পারেন নতুন জীবন৷
ছোটখাটো ঝগড়ার কারণেও এবার দম্পতি হাজির হবে আদালতে - এই ধরণের সমালোচনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেন বিয়ার্দ৷ তিনি বলেন, স্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে যে এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে এবং এর লক্ষ্য হল স্ত্রীকে অপমান করা যেন সে সবসময়ই এক ধরণের হীনম্মন্যতায় ভোগে৷ কর্মস্থলে কোনো কর্মীকে অপমান করা বা কটুক্তি থেকে রক্ষা করতে ইতিমধ্যেই আইন করা হয়েছে এবং সে আইন কার্যকরও করা হয়েছে৷
ফ্রান্সে স্বামী বা বন্ধুর হাতে মেয়েরা মারাও যায়৷ সম্প্রতি ফরাসি সরকার ঘোষণা করেছে - মহিলাদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করা - জাতীয় দায়িত্ব৷ টেলিভিশনে প্রতিনিয়ত দাম্পত্য কলহ নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে একই সঙ্গে জানানো হচ্ছে হটলাইনের নম্বর, যেখানে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য পাওয়া যাবে, পরামর্শ দেয়া হবে৷
একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে দেখানো হচ্ছে কিভাবে বাচ্চারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে - বকাঝকা করা, বড়দের মত কথা বলা শেখে৷ টেলিভিশনের পর্দায় দেখানো হচ্ছে, ছোট দু'টি ছেলে-মেয়ে চা খাচ্ছে৷ তাদের পোশাক বড়দের মত, পায়ের জুতোগুলো বাচ্চাদের নয় বড়দের পায়ের মাপের৷ শুধুমাত্র টেবিলের নীচেই তাদের পা দুটো দেখা যাচ্ছে৷ একসময় দেখা যায় মেয়েটির কাপ থেকে চা টেবিলের ওপর গড়িয়ে পড়ে এবং ছেলেটি চোখ মুখ শক্ত করে উঠে দাঁড়ায়৷ মেয়েটিকে মারতে শুরু করে৷
ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ফ্রাসোঁয়া ফিয়োঁ সম্প্রতি জানিয়েছেন গৃহনির্যাতন বন্ধ করতে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে৷ যেসব পুরুষ স্ত্রীর ওপর এ ধরণের অত্যাচার চালান তাদের চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ ধরণের ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট-এর ব্যবস্থা করা হবে৷ মেয়েদের জন্য আরো বেশি করে ‘নারী ভবন' তৈরির ওপর জোর দেন তিনি৷ অভিবাসী পরিবার এবং অভিবাসী প্রজন্মকে এ বিষয়ে আরো ভালভাবে জানানোর জন্য সমানাধিকার বিষয়ে বই-পত্র, লিফলেট বিতরণ করা হবে৷
ফিয়োঁ বললেন, যে সব ক্ষেত্রে নির্যাতনের কারণে মেয়েরা মানসিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু তাদের শরীরে কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়না, সে সব ক্ষেত্রে এই নতুন আইন আমাদের সক্রিয় হতে সাহায্য করবে৷
প্যারিসের উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত একটি নারী ভবন৷ বেশ কয়েকজন মহিলা বাচ্চা নিয়ে সেখানে বসবাস করছে৷ ছোট ছোট বসার ঘর৷ এক কোনায় বাচ্চাদের খেলার ঘর৷ আরেক কোনায় ওয়াশিং মেশিন চলছে৷ এই নারীভবনে কিছুদিনের জন্য সেসব মহিলাকে আশ্রয় দেয়া হয় যারা প্রতিনিয়ত স্বামীদের হাতে মানসিকভাবে অত্যাচারিত হতেন৷ নারী ভবনের পরিচালক ভিভিয়ান মোনিয়ের আশংকা প্রকাশ করে জানান, নতুন আইনের মাধ্যমে স্বামীরাও স্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারবেন৷
ভিভিয়ান জানান, পুরুষদের বিরুদ্ধে আনা হবে শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ৷ অনেকেই বলছে মহিলাদের বিরুদ্ধেও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ আনা যেতে পারে৷ আমরা মুখোমুখি হচ্ছি ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির৷ যেখানে অত্যাচারীই পাল্টা অভিযোগ আনতে পারবে এবং আসলে যে অত্যাচারের শিকার তাঁর কথা হয়ত আমরা শুনতেই পারবো না৷
প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক