বাংলাদেশে আইনের কিছু ফাঁকফোকর
বাংলাদেশের প্রায় সব আইনেই আছে ফাঁকফোকর৷ এ কারণে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার নজিরও অনেক৷ অপরদিকে আইনের এই ফাঁকফোকরের কারণে নিরীহ মানুষও অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ফাঁকের কারণে মূল আসামীরা প্রায় সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়৷ এ আইনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আলামত জব্দ করা৷ অর্থাৎ কার দখলে কিংবা কোন জায়গা থেকে মাদক জব্দ করা হয়েছে সেটাই প্রধান বিবেচ্য৷ তাই এ ধরনের মামলায় মাদক দ্রব্যের বাহক, অর্থাৎ চুনোপুটিরা ধরা পড়লেও আসল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে৷
যৌতুক নিরোধ আইন
যৌতুক নিরোধ আইনে নানান ফাঁকের কারণেও অনেকক্ষেত্রেই পার পেয়ে যায় অপরাধী৷ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গে পরিপন্থি না হলে এ আইনে যৌতুক বলতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রদত্ত যে কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে বোঝাবে৷ তবে কোনো উপঢৌকন যৌতুক হিসেবে গণ্য হয় না এ আইনে৷ ফলে হালে সমাজে উপঢৌকন বা উপহারের নামেও যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে৷
নারী ও শিশু নির্যাতন আইন
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এ সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলে কী হবে, তা বলা নেই৷ তবে এরপর মামলার বিচারকাজ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী চলার কথা৷ তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচারকাজ বা তদন্ত শেষ করতে না পারলে আসামিরা জামিন পেতে পারে – উচ্চ আদালতের এমন সিদ্ধান্তও রয়েছে৷ এ সিদ্ধান্তের কারণেও এ আইনে তৈরি হয় ‘ফাঁক’ আর সেই ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায় আসামীরা৷
অর্থঋণ আইন
অর্থঋণ আইনেরও সমালোচনা রয়েছে৷ আইনে ফাঁক থাকায় ঋণখেলাপিরা ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েও তা পরিশোধ করেন না বা করতে চান না৷ বাংলাদেশে আইনের ফাঁক গলে ঋণখেলাপিদের পার পেয়ে যাওয়ার নজির অনেক৷ উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের অর্থঋণ আইনে ঋণখেলাপির কোনো সংজ্ঞাই নেই৷
অস্ত্র আইন
বাংলাদেশে যে অস্ত্র আইন প্রচলিত আছে, তা ১৮৭৮ সালে প্রণীত৷ বিভিন্ন ধারায় সরকারি অনুমোদন ছাড়া অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার, প্রদর্শন, ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ করা এ আইনের ১৯এ আর ১৯এফ ধারায়ই সাধারণত অবৈধ অস্ত্র দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ তবে যারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না৷
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন
পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যু নিবারণের উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন’৷ এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ তবে এ আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কারাদণ্ড অথবা জরিমানা করতে পারবেন আদালত৷ ফলে হেফাজতে নির্যাতন করে মৃত্যু ঘটিয়েও শুধু জরিমানা দিয়েই মুক্তি পেতে পারবে অপরাধী৷