1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঘের খোঁজেই কি পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলে বাঘিনী জিনাত?

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ওড়িশা থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে বাঘিনী জিনাত। বাঘ ধরতে কালঘাম ছুটছে বন দপ্তরের কর্মীদের। সে কি এখানে এসেছে সঙ্গীর খোঁজে?

https://p.dw.com/p/4oaUk
মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড়ের রয়্য়াল বেঙ্গল টাইগার।
পশ্চিমবঙ্গে কি বাঘের সন্ধানে এসেছে বাঘিনী জিনাত?ছবি: RealityImages/Zoonar/picture alliance

ওড়িশার সিমলিপালে বড় ব্যাঘ্র প্রকল্প রয়েছে। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমানা বেশি দূরে নয়। ওই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটি বাঘিনী জিনাত জঙ্গলপথ দিয়ে সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ে। তাকে পাকড়াও করতে নাজেহাল হচ্ছেন বন দপ্তরের কর্মীরা। 

‘সাধারণ মানুষকে ওই জঙ্গল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে’

দিনকয়েকের লুকোচুরি

সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে প্রথমে ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রবেশ করে জিনাত। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের একটি সড়ক দিয়ে বাঘিনী দুলকি চলে হেঁটে চলেছে। পর্যটকদের গাড়ি দেখেই সে পালিয়ে যায়। খুব দ্রুত জায়গা বদল করছে বাঘিনি। রবিবারের মধ্যে জঙ্গলমহলের আর এক জেলা পুরুলিয়ায় ঢুকে পড়ে সে। এখন আছে রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে।

জিনাতকে বাগে আনতে নানা পদ্ধতি গত কয়েকদিনে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানত খাবারের টোপ। ঝাড়খণ্ডে থাকাকালীন টোপ হিসেবে দেয়া হয়েছিল মোষ। এই মোষ মেরে কিছুটা খিদে নিবৃত্ত করে বাঘিনী। সাধারণভাবে বাঘ আবার তার শিকারের কাছে ফিরে আসে। 

এক্ষেত্রে জিনাত মোষের দেহাবশেষের কাছে এলে তাকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেই টোপের কাছে আর ফেরেনি বাঘিনী। অনুমান করা হচ্ছে, রাইকার জঙ্গলে সে অন্য কোথাও খাবারের খোঁজ পেয়ে গিয়েছে। 

বন দপ্তরের কর্মীরা এর নমুনাও দেখতে পেয়েছেন। জঙ্গলের মধ্যে মিলেছে ছাগলের দেহাংশ। রাইকা পাহাড় লাগোয়া গ্রামে একটি ছাগল অর্ধেক খেয়ে চলে যায় বাঘিনী। তার কাছাকাছি ছিল জিনাতের  শেষ অবস্থান। বিশেষজ্ঞদের মতে, যতক্ষণ না পর্যাপ্ত খাবারের অভাব হবে, ততক্ষণ অরণ্যের ঘেরাটোপ থেকে বাঘিনী বাইরে বেরোবে না।

টোপ দেয়া সত্ত্বেও কেন তা কাজ করছে না? রাজ্যের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বোর্ডের সদস্য এবং ‘শের' সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জয়দীপ কুণ্ডু ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই বাঘ খাঁচা জিনিসটা চেনে, খাঁচা করেই তাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অতীতে। তাই সে খাঁচা থেকে দূরে থাকছে। আর সে এই  জঙ্গল থেকে খাবার পেয়ে যাচ্ছে, তাই টোপের দিকে খুব একটা আকৃষ্ট হচ্ছে না। এখন সাধারণ মানুষকে ওই জঙ্গল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।"

মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম সার্কেল) বিদ্যুৎ সরকারের বক্তব্য, "বাঘিনী কখন ভুল করে সেই অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"

পাকড়াও করার উদ্যোগ 

দফায় দফায় জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় টোপ দেয়া হচ্ছে যাতে বাঘিনী ধরা দেয়। সুন্দরবন থেকে আনানো হয়েছে নতুন দুটি খাঁচা। বন দপ্তরের কর্মীরা রাইকা পাহাড়ের ভাড়ারিয়ার জঙ্গলে খাঁচা বসানোর পাশাপাশি চারপাশে ট্রাক ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছেন। বাঘিনীর অবস্থান জানাচ্ছে তার গায়ে লাগানো রেডিও কলার। এই কলারের সঙ্গে উপগ্রহের যোগাযোগ থাকায় সেখান থেকে জানা যাচ্ছে বাঘিনী কোথায় আছে। 

মহারাষ্ট্র থেকে তাকে যখন সিমলিপালে আনা হয়, সেই সময় রেডিও কলার পরানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অধরা থেকে যাচ্ছে বাঘিনি।

জয়দীপ বলেন, "একটা রেডিও কলার অ্যানিম্যালকে কেন ট্র্যাক করতে পারল না, তার জবাব ওড়িশার বন দপ্তর দিতে পারবে। তাদের অদক্ষতাই এজন্য দায়ী। সে কারণেই বাঘ আপন ছন্দে এগিয়ে আমাদের রাজ্যে উপস্থিত হয়েছে। পুরুলিয়ার যে জঙ্গলে এখন বাঘিনী রয়েছে, সেটা খুবই সমৃদ্ধ। সেখানে বাঘিনী খাবার ঠিকঠাক পাচ্ছে। খুব স্বচ্ছন্দে সেখানে থাকতে পারছে বলে অন্য জায়গায় যাচ্ছে না।"

সিমলিপাল থেকে থেকে জিনাতের বেরিয়ে পড়ার অনেক কারণ নিয়ে জল্পনা চলছে। জয়দীপ বলেন, "সিমলিপালে এই বাঘিনীকে আনার পর সম্ভবত সে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পায়নি। কোনো নতুন পরিবেশে ক্যাট ফ্যামিলির সদস্যকে আনা হলে তারা আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখে, নিজের জন্য অনুকূল বাসস্থান খুঁজতে থাকে। সিমলিপালের সম্ভবত সেটা পায়নি বলেই খুঁজতে খুঁজতে বাঘিনী আমাদের রাজ্যে এসে পড়েছে। আমাদের জঙ্গল অনেক সমৃদ্ধ, এখানে একটা আরামদায়ক পরিবেশ খুঁজে পাওয়ায় হয়তো সে থিতু হতে চাইছে।"

অভিজ্ঞ বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর শিবাজী ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "বাঘ খুব বুদ্ধিমান প্রাণী। নিজের এলাকার ছেড়ে সে যখন বেরিয়েছে, তার মানে বুঝতে হবে খুব সতর্ক রয়েছে। সতর্ক মানুষকে দিয়ে যেমন ইচ্ছা মতো কাজ করানো যায় না, এই বাঘিনীকেও করানো যাচ্ছে না। হয়তো ওর ফাঁদে পড়ার পুরনো অভিজ্ঞতা আছে, তাই ফাঁদে ধরা দিচ্ছে না। টোপের খাবার খেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।"

খাবারের লোভ নয়, সম্ভবত প্রজননের তাগিদে জিনাত এলাকা বদল করেছে। শিবাজী বলেন, "বাঘ একা থাকতে ভালোবাসে। একমাত্র প্রজননের সময় সে সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। বেড়াল প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে ফিমেলরা স্বয়ংবরা হয়। তারা নিজেরাই সঙ্গী খুঁজে নেয়। এই বাঘিনী সেই তাগিদে সম্ভবত কোনো বাঘকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। পছন্দের বাঘ না মেলায় সে একটার পর একটা এলাকা অতিক্রম করে আমাদের রাজ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে।"

তার বক্তব্য, "বাঘিনীরা  ফাঁদে কম পড়ে, বেশি পড়ে বাঘেরা। বুদ্ধি বেশি থাকে মেয়েদের। এছাড়া বাঘিনীর ছবি দেখে তাকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট মনে হয়েছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য ভালো। ও খাবারের অভাবে এতদূর এসেছে, এটা আমার মনে হয় না। বর্ষা এবং শীতের যে সময়টা বেশ ঠান্ডা থাকে, সেটাই বাঘের ব্রিডিং সিজন। তাই এই সময়ে সে সঙ্গীর খোঁজে বেরিয়েছে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷