বার্লিনের পরিত্যক্ত ভবনে আর্কিটেকচার ফার্মের কার্যালয়
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩৪৩ মিটার দীর্ঘ কংক্রিটের তৈরি সাবেক এই সাইলো বর্তমানে বার্লিনের একটি স্থাপত্য কোম্পানির কার্যালয়৷ বাইরে থেকে দেখতে আকর্ষণীয় মনে না হলেও বিপ্লাস কোম্পানির স্থপতিদের কাছে এটি আবেগের বিষয়৷
স্থপতি আর্নো ব্রান্ডলহুবার বলেন, ‘‘দেখতে কুৎসিত জিনিসও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে, যদি সেটাকে ভালো কাজে লাগানো যায়৷''
বার্লিনের লিশটেনব্যার্গ এলাকায় ২০১২ সালে হঠাৎ করেই ঐ সাইলোর সন্ধান পান তারা৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রীয় ‘ভিইবি ইলেক্ট্রোকোলে' কোম্পানি এটি ব্যবহার করতো৷
এমন ভবন দেখার পর বেশিরভাগ মানুষ হয়ত তা ভেঙে ফেলতে চাইতেন৷ কিন্তু এটি আর্নো ব্রান্ডলহুবারকে ইটালির অন্যতম সুন্দর স্থাপত্য টাস্কানি অঞ্চলের সান জিমিনিয়ানোর টোরে গ্রোসা টাওয়ারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে৷ প্রকল্পের নামও এসেছে সেখান থেকে: সান জিমিনিয়ানো লিশটেনব্যার্গ৷
ব্রান্ডলহুবার বলেন, ‘‘এখানকার টাওয়ার দুটি এত সরু ও লম্বা যে টাস্কানির সান জিমিনিয়ানোর কথা মনে করিয়ে দেয়৷ এখানকার মতো শিল্পাঞ্চলে টাস্কানির ভাব আনা গেলে তা মনের উপর অবশ্যই প্রভাব ফেলে৷ পরিত্যক্ত ভবন নিয়ে কাজ করার এটি একটি অন্যতম উদ্দেশ্য, কারণ এমন ভবন সম্পর্কে সাধারণত নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা হয়৷''
শহরের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে হওয়ায় শুরুতে এই প্রকল্প নিয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন৷ কিন্তু স্থপতিরা বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে সক্ষম হন৷ ফলে পরিত্যক্ত শিল্পাঞ্চলে প্রাণ ফিরে এসেছে৷
প্রায় দশ বছর ধরে সংস্কার কাজ চলেছে৷ খরচ হয়েছে প্রায় নয় কোটি টাকা৷ পুরনো ভবনটি মোটামুটি একইরকম রাখা হয়েছে৷
সাইলোর নিচতলায় একটি ওয়ার্কশপ চালু করা হয়েছে যেখানে নতুন মডেল ও প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করা হয়৷ ধূসর, কৌণিক আর কংক্রিট কাঠামো- এগুলো ঐ আর্কিটেকচার ফার্মের কাজের বৈশিষ্ট্য৷
ব্রান্ডলহুবার বলেন, ‘‘সৌন্দর্যকে অনেকভাবে দেখা যায়৷ এর মধ্য একটি, বাইরের সৌন্দর্য৷ কিন্তু আমাদের কাছে বিষয়টা সেরকম নয়৷ আমাদের যারা গ্রাহক কিংবা আমরা যেসব প্রকল্পে কাজ করি সেখানে বাইরের সৌন্দর্য বিবেচনায় থাকে না৷ যদি কেউ এমন স্থপতি চান, যারা রং আর উজ্জ্বল বহিরাবরণে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তাহলে তারা অন্যদের কাছে গেলে ভালো করবেন৷''
ভালো হয় যদি তাদের গ্রাহকরা শারীরিকভাবেও ফিট হয়ে থাকেন৷ কারণ ভবনে কোনো লিফট নেই৷ ওঠানামা করতে প্রতিদিন ১৯৯টি সিঁড়ি ভাঙতে হয়৷
ব্রান্ডলহুবার জানান, ‘‘অনেকে কাজ শেষে জিমে গিয়ে কার্ডিও মেশিনে সিঁড়িতে ওঠানামার মতো অনুশীলন করেন৷ কিন্তু আমরা দেখেছি, আমাদের তার প্রয়োজন নেই৷ কারণ অফিসে ওঠানামা করতে গিয়ে একদিনে যতটা পরিশ্রমের প্রয়োজন, সেটা হয়ে যায়৷''
পুরনো ভবনকে নতুন রূপ দেয়া: একটি জরাজীর্ণ সাইলো টাওয়ারকে রোমাঞ্চকর কিছুতে পরিণত করে একটি পরিত্যক্ত শিল্পাঞ্চলে কীভাবে প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায়, সান জিমিনিয়ানো লিশটেনব্যার্গ প্রজেক্ট তার উদাহরণ৷
ক্রিস্টিন লেবার্ট/জেডএইচ