বুদ্ধদেব ও সন্ধ্যা পদ্ম-সম্মান ফিরিয়ে দিলেন
২৬ জানুয়ারি ২০২২প্রতি বছর সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে পদ্ম সম্মানের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। এবারেও করেছে। পদ্ম সম্মান মানে ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী সম্মান। বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতী মানুষদের এই সম্মান দেয়া হয়। এবারও ১২৮ জনকে দেয়া হয়েছে। সেই তালিকায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নামও ছিল। তাকে পদ্মভূষণ দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু ঘোষণার পরেই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি পদ্ম-সম্মান প্রত্যাখ্যান করছেন।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দিতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি তা নিতে চাননি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যিনি এই সম্মান দেয়ার কথা সন্ধ্যাকে জানিয়েছিলেন, তাকেই তিনি বলে দেন, পদ্মশ্রী নেবেন না। শ্রোতাদের ভালবোবাসার পুরস্কার নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন।
কেন প্রত্যাখ্যান?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পদ্ম সম্মান প্রত্যাখ্যান করার কারণ আলাদা। দুজনের ক্ষেত্রে আরেকটা ফারাক আছে। সন্ধ্যা নাম ঘোষণার আগেই তা প্রত্যাখ্যান করেন। বুদ্ধদেবের ক্ষেত্রে নাম ঘোষণার পর তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
আনন্দবাজারকে সন্ধ্যা জানিয়েছেন, ‘‘এ ভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়? এরা জানে না আমি কে! নব্বই বছরে আমায় শেষে পদ্মশ্রী নিতে হবে? আর ফোন করে বললেই চলে যাব আমি? শিল্পীদের কোনও সম্মান নেই?'' সন্ধ্যা বলেছেন, তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই সম্মানের তার দরকার নেই। তার কাছে শ্রোতাই সব।
গত অক্টোবরে ৯০-এ পা দিয়েছেন সন্ধ্যা। বহু দশক ধরে তিনি সুরের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন করে রেখেছেন গানপ্রেমীদের। আধুনিক বাংলা গানের জগতে তিনি প্রবাদপ্রতিম শিল্পী। সন্ধ্যার খারাপ লেগেছে, তিনি অপমান বোধ করেছেন তাকে পদ্মশ্রী দিতে চাওয়ায়। পদ্ম-সম্মানের মধ্যে পদ্মশ্রী হলো সবচেয়ে নীচে। তার উপরে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ ও একেবারে উপরে আছে ভারতরত্ন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পদ্মভূষণ দিতে চাওয়া হয়েছিল সামাজিক ক্ষেত্রে তার কাজের জন্য। কিন্তু তিনি এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে কোনো কারণ দেখাননি। দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, মতাদর্শগতভাবে বুদ্ধদেব বিজেপি-র তীব্র বিরোধী। তিনি কিছুদিন আগেও বিজেপি-র কড়া সমালোচনা করেছেন। তাছাড়া সিপিএমও এই ধরনের পুরস্কার নেয়ার বিরোধী। এর আগে মনমোহন সিং সরকার জ্যোতি বসুকে ভারতরত্ন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। দলও চায়নি।
আর কারা পেয়েছেন
পশ্চিমবঙ্গ থেকে পদ্মশ্রী পেয়েছেন অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্প-বাণিজ্যে প্রহ্লাদ রাই আগরওয়াল, বিজ্ঞান ও কারিগরিতে সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহিত্য ও শিক্ষায় কালীপদ সরেন এবং শিল্পকলায় কাজী সিং। গায়ক রশিদ খান পদ্মভূষণ পেয়েছেন, তবে তাঁকে উত্তরপ্রদেশের শিল্পী বলা হয়েছে। রশিদ খান আদতে উত্তরপ্রদেশের মানুষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে কলকাতায় থাকেন। তিনি পুরোপুরি পশ্চিমবঙ্গবাসী।
এছাড়া সদ্যপ্রয়াত চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নান্দেলা, গুগলের সুন্দর পিছাই, সেরাম ইনস্টিটিউটের সাইরাস পুনাওয়ালা, ভারত বায়োটেকের কৃষ্ণ ও সুচিত্রা এল্লা, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ পদ্ম-পুরস্কার পেয়েছেন।
মমতার প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''যা হয়েছে, তাতে রাজনীতি স্পষ্ট। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী দিতে চাওয়া বাংলার অপমান, জাতীয় লজ্জা। বাংলার রশিদ খান পদ্মভূষণ পেলেও তাকে উত্তরপ্রদেশের মানুষ বলা হয়েছে। বাংলার অনেক গুণী মানুষ আছেন, তাদের দিল্লির মনে পড়ে না। তবে বাংলা কারো কাছে করুণা ভিক্ষা চায় না।''
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ''বুদ্ধদেব সম্মান প্রত্যাখ্যান করে আজাদ হয়েছেন, গুলাম নয়।'' তার কথা থেকে স্পষ্ট, গুলাম নবি আজাদকে লক্ষ্য করে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই, আনন্দবাজার)