বেতন বাড়লেও দুর্নীতি থাকছে দুর্নীতিতেই
দুর্নীতি কমবে এই আশায় ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি অভিযোগ করে সম্প্রতি সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের দুই সাংসদ৷
বেতন দ্বিগুণ
২০১৫ সালে সব পর্যায়ের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়৷ এছাড়া ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে তাদের বেতন প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে (ইনক্রিমেন্ট)৷ এর সঙ্গে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে তারা মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবেও পাচ্ছেন৷ মূল্যস্ফীতির কারণে এই প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার৷
বেসরকারি চাকরিজীবীরা সমস্যায়
২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন শতভাগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সরকার অনিচ্ছাকৃতভাবে বেসরকারি খাতের অনেক স্বল্পদক্ষ কর্মীদের সাময়িকভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে বলে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়৷ শ্রমবাজারে যে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষ কর্মীরা তা মানিয়ে নিতে না পারায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়৷ তিনজন গবেষক গবেষণাটি করেছেন৷
বেতনের জন্য আড়াই পদ্মা সেতুর সমান বরাদ্দ
৬ জুন সংসদে পেশ করা বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এই বরাদ্দ প্রায় আড়াইটি পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের সমপরিমাণ৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ বাবদ খরচ ধরা হয় ৭৭ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বাবদ ব্যয় ছিল ৬৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন৷
দুর্নীতি না কমার অভিযোগ
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ালে দুর্নীতি কমবে এমন কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলে অভিযোগ৷ সম্প্রতি কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার খবর আলোচনায় এসেছে৷ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ সম্প্রতি সংসদে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানোর পরও দুর্নীতি কেন হবে?
সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সেবা নিতে গিয়ে নাগরিকেরা দুর্নীতির মুখোমুখি হন৷ এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ২০২২ সালে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল৷ এতে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা৷ এরপর যথাক্রমে আছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও ভূমি সেবা৷
গ্রেপ্তার করতে অনুমতি লাগে
গতবছর জুলাই মাসে পাস হওয়া ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল ২০২৩’-এ বলা হয়েছে, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে৷