1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে হাতির দেখাশোনার অভিনব ব্যবস্থা

৩০ অক্টোবর ২০২৪

পশুপাখির প্রতি তাচ্ছিল্য, সহানুভূতির অভাব আজও বড় সমস্যা৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের ফলে প্রাণিজগতের আবাস কমে চলেছে৷ ভারতে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর এক উদ্ধার কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে৷

https://p.dw.com/p/4mPSX
ভারতে হাতির চিকিৎসায় গড়া হয়েছে হাসপাতাল৷
ভারতের হাতি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে একটি হাতিছবি: DW

সুজি চোখে দেখতে পায় না৷ তা সত্ত্বেও সে কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এক সার্কাসে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে এসেছে৷ কিন্তু এর বিনিময়ে সুজি ঠিকমতো খাবার ও যত্ন পায়নি৷ তাকে উদ্ধার করে যখন মথুরার হাতি সংরক্ষণ ও দেখাশোনার জন্য গঠিত কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল, প্রাণীটি খুবই দুর্বল ও খারাপ অবস্থায় ছিল৷

সেখানকার সব হাতিরই এমন করুণ কাহিনি রয়েছে৷ ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস সংস্থার সহ প্রতিষ্ঠাতা কার্তিক সত্যনারায়ণ বলেন, ‘‘প্রতি বছর হাতির সংখ্যা কমে চলেছে৷ আমরা তাদের হারাচ্ছি৷ বসতি ধ্বংসের কারণে শত শত হাতি মারা হচ্ছে৷ বনজঙ্গল উধাও হয়ে যাচ্ছে, শহরের সম্প্রসারণ ঘটছে৷ অনেক হাতি ধরে নির্যাতন, শোষণ করা হচ্ছে, বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এ আমরা হাতি উদ্ধার করে প্রাণীগুলির পুনর্বাসন করি৷'' 

ভারতের প্রথম হাতির হাসপাতাল

বর্তমানে প্রকৃতির কোলে যে সব এশীয় হাতি টিকে রয়েছে, সেগুলির মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ভারতেই পাওয়া যায়৷ কিন্তু সেই হাতিও কোনো রকমে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷

বর্তমানে ভারতের জঙ্গলগুলিতে এশীয় হাতির সংখ্যা ২২,০০০-এরও কম৷ প্রায় ২,৭০০ হাতি মানুষের হাতে বন্দি রয়েছে৷ সেগুলিকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়৷

হাতির যত্ন নিতে ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস ২০১০ সালে এই কেন্দ্রটি খোলে৷ বর্তমানে ৩০টিরও বেশি হাতি সেখানে বাস করছে৷

জিঞ্জারের বয়স ৫০-এরও বেশি৷ ২০২১ সালে তাকে এখানে আনা হয়েছিল৷ শরীরে ক্ষত এত গভীর ছিল, যে প্রাণীটি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি৷ ডাক্তাররা সেই হাতির দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে পারেননি৷ তবে তাঁরা পায়ের ক্ষত সারানোর চেষ্টা করছেন৷ পশুচিকিত্সক ড. প্রমোদ রাজপুত বলেন, ‘‘বর্তমানে আমরা জিঞ্জারকে লেজার থেরাপি দিচ্ছি৷ সেটির পিছনের জয়েন্টগুলো অত্যন্ত দুর্বল৷ তাই আমরা থেরাপির মাধ্যমে সেই অংশকে শক্তিশালী করে নিরাময়ের প্রক্রিয়ায় উন্নতি আনার চেষ্টা করছি৷ হাতি এখানে এলে আমরা প্রায়ই দেখি, যে সেগুলির জয়েন্ট দুর্বল অথবা বিকৃত হয়ে গেছে৷ মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ অথবা অপুষ্টির কারণে এমনটা ঘটে৷'' 

হাতি জঙ্গলের প্রাণী৷ সেখানেই তাদের থাকার কথা৷ কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এই প্রাণীকে পোষ মানিয়ে চলছে৷ সেনাবাহিনীর কাজ থেকে শুরু করে ভারি মালপত্র বহন, পিঠে চাপা অথবা উৎসবে মনোরঞ্জনের উপকরণ হিসেবে হাতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে৷

প্রাণী অধিকার অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, মানুষ আসলে কখনো হাতিকে সঙ্গী হিসেবে দেখেনি, বরং ক্রীতদাস করে রাখতে চেয়েছে৷ হাতি প্রকল্পের সমন্বয়ক শিবম রাই বলেন, ‘‘কোনো প্রাণীকে আমাদের সভ্যতার অংশ হয়ে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই৷ প্রকৃতি, পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমেই সেগুলির ভূমিকা থাকার কথা৷ কিন্তু মানুষ এমন প্রাণী ধরে, তাদের বিরক্ত করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, ক্রীতদাস করার চেষ্টা করেছে৷ সেটা খুব ভুল কাজ এবং সব রকমভাবে এটা বন্ধ করা উচিত৷''

শুধু হাতি নয়, ভালুক, বাঘ, চিতা এবং সরিসৃপও উদ্ধার করে ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস সংগঠনের সাহায্য নেওয়া হয়৷ উদ্ধারের কাজ, খোরাক ও চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়৷ কার্তিকের মতে, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রাণী সম্পর্কে মানুষের মনোভাব বদলানো জরুরি৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রাণী দেখাশোনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ মানুষের কাছে চাঁদা চাওয়া, এই কাজের জন্য সমর্থন চাওয়া কঠিন কাজ৷ কিন্তু এই সব হাতির প্রতি সহানুভূতি, ভালবাসা এবং দয়া দেখানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে বোঝানোই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷

সেন্টারে আসার আগে এই সব হাতি অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ কিন্তু ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস প্রাণীগুলির বাকি জীবন যতটা সম্ভব মনোরম করে তোলার চেষ্টা করছে৷

প্রতিবেদন: অশোক কুমার/এসবি