ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ভালো করতে দিল্লি সফরে শলৎস
২২ অক্টোবর ২০২৪ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর দিল্লিতে দুই দেশের সপ্তম ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কনসালটেশন(আইজিসি) হবে। এই বৈঠকে যোগ দিতেই বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে শলৎস আসছেন।
শলৎসের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, বিশিষ্ট শিল্পপতিদেরও ভারতে আসার কথা আছে।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, আইজিসি-র বৈঠকের ফলে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো জোরালো হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০০০ থেকে ভারত ও জার্মানির মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ গভীর হয়েছে। দুই দেশ তাদের এই বিশেষ সম্পর্কের ২৫ তম বছরে পা দিচ্ছে। শলৎসের এই সফরের ফলে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পথে যাবে দুই দেশ।
কী নিয়ে আলোচনা হবে?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সপ্তম আইজিসি বৈঠক যুগ্মভাবে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং চেয়ারম্যান শলৎস। জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে সিনিয়র মন্ত্রীরা থাকবেন। দুই দেশের মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তারপর সেই আলোচনায় নেয়া সিদ্ধান্তের কথা প্রধানমন্ত্রী মোদী ও চ্যান্সেলর শলৎসকে জানাবেন।
এছাড়া দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে বিষয়গুলি গুরুত্ব পাবে তার মধ্যে আছে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দুই দেশের প্রতিভাবাবানরা যাতে আরো বেশি সুযোগ পান সেই বিষয়টি, আরো গভীর আর্থিক সম্পর্ক, গ্রিন ও পুনর্ববহারয়োগ্য শক্তি, কৌশলগত প্রযুক্তি। এছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়েও দুই দেশের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করবেন।
দুই নেতাই ১৮তম এশিয়া প্যাসিফিক কনফারেন্স অফ জার্মান বিজনেস(এপিকে ২০২৪)-এ ভাষণ দেবেন। সেখানে জার্মানি ও ইন্দো-প্যাসিপিক দেশগুলির শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিনিধি, রাজনীতিক ও প্রশাসকরা উপস্থিত থাকবেন। প্রায় ৬৫০জন বিজনেস নেতা ও সিইও এই ইভেন্টে অংশ নেবেন।
জার্মানির রাষ্ট্রদূত সপ্তাহ দুয়েক আগে জানিয়েছিলেন, ইজ ইফ ডুইং বিজনেস, অভিবাসন, ভূ-রাজনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
ইন্দো-জার্মান চেম্বার অফ কমার্সের ডিজি স্তেফান হালুসা জানিয়েছেন, জার্মানির শিল্পপতিদের সামনে মেক ইন ইন্ডিয়ার অংশীদার হওয়ার ও ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেরা সুযোগ এসেছে। তিনি বলেছেন, জার্মানির শিল্পপতিরা চান, ভারত এক্ষেত্রে তাদের নিয়মবিধি আরো সরল করুক, সব ধরনের পরিকাঠামো আরো উন্নত করার চেষ্টা করুক এবং আরো উদার বাণিজ্য নীতি নিক।
পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ সি রাজামোহন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লিখেছেন, জার্মানি ভারতের শক্তিশালী নিরাপত্তা-অংশীদার হতে চায়। শলৎস ও মোদী যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করবেন, তার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়গুলি গুরুত্ব পাবে।
ভারতকে কেন পছন্দ করেন জার্মানির শিল্পপতিরা?
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিত কর্মী, রাজনৈতিক স্থিরতা এবং কম পয়সায় শ্রমিক পাওয়া যায় বলে জার্মানির শিল্পপতিরা ভারতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করছেন।
সমীক্ষায় অংশ নেয়া মানুষদের ৮২ শতাংশ মনে করছেন, আগামী পাঁচ বছরে তাদের টার্নওভার বাড়বে, ৭২ শতাংশ মনে করছেন, তাদের লাভের পরিমাণ বাড়বে।
জার্মানির সাবমেরিন
ভারতের নৌবাহিনীর জন্য জার্মান সাবমেরিন কেনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চালাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন দুইটি দেশের সাবমেরিনকে শর্টলিস্ট করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো জার্মানির টিকেএমএস এবং অন্যটি স্পেনের নাভানতিয়া।
সূত্র জানাচ্ছে, আইজিসি-র বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকছে। শলৎস ভারত থেকে চলে যাওয়ার একদিন পরেই আসছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী স্যাঞ্চেজ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের ভদোদরা যাবেন, টাটা-এয়ারবাস প্রকল্পের উদ্বোধন করতে। তখন স্পেনের সঙ্গেও সাবমেরিন কেনার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
জিএইচ/এসজি(পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি)