1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরা মানুষকেও ‘বাঁচিয়ে তোলে’ ডিজিটাল প্রযুক্তি

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হলিউডের ‘অবতার’ ছবিতে মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তির কারসাজি দেখে গোটা বিশ্ব মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ বার্লিনের এক কোম্পানি সেই অসাধ্যসাধন করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে৷ এভাবে মৃত ব্যক্তিকেও জীবন্ত করে তোলা সম্ভব হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3QTJ9
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa

যেভাবে ‘বেঁচে ওঠে’ মৃত মানুষ

স্টুডিওর মধ্যে এক মিউজিক ভিডিওর শুটিং হচ্ছে৷ কম্পিউটার সঙ্গে সঙ্গে নাচের তাল নথিভুক্ত করছে৷ সব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে প্রযুক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বার বার শুটিং থামাচ্ছেন৷ বিশেষ করে নৃত্যশিল্পীদের পোশাকে লাগানো ধূসর সেন্সর সরে গেলে চলবে না৷

সিলিং-এ বসানো থ্রিডি ক্যামেরাগুলি সেই সেন্সরের অবস্থান রেকর্ড করে সফটওয়্যারে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ মোক্যাপ পরিচালক অলেক্সঁদ্র ডঁসিউ-জুল্যাঁ এই প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘এখানে দুটি ভিন্ন সিস্টেম কাজ করছে৷ অপ্টি ট্র্যাক নামের সিস্টেম বডি মোশন বা শরীরের সঞ্চালন নথিভুক্ত করছে৷ অর্থাৎ ত্বকে বসানো মার্কারের গতিবিধি রেকর্ড করছে৷ অন্য সিস্টেমটি একেবারে ভিন্ন৷ এই প্রণালীর মাধ্যমে স্মার্টফোন বা অন্য ক্যামেরার মাধ্যমে মুখের অভিব্যক্তি রেকর্ড করা হয়৷''

এক ডিজে এই কাজের বরাত দিয়েছেন৷ তিনি নিজের গানের মাধ্যমে সেরা সংগীতের তালিকার শীর্ষে পৌঁছতে চান৷ তাঁর মুখচ্ছবি ও শরীর পরে ধাপে ধাপে রোবটের অবয়বের উপর বসানো হবে৷ দেখলে মনে হবে ডিজে নিজেই যেন নাচছেন৷ 

‘মোশন ক্যাপচার' প্রযুক্তির মাধ্যমে হুবহু আসলের মতো দেখতে হাজার হাজার নকল সৃষ্টি করা হয়৷ যেমন ক্লোদ ফ্রঁসোয়া৷ বহুকাল আগেই এই গায়কের মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে অবতার হিসেবে আবার সংগীত চার্টে আনা হয়েছে৷

বার্লিনে ‘মিমিক প্রোডাকশন্স' নামের এই কোম্পানির ২০ জন কর্মীর মধ্যে বেশিরভাগই গ্রাফিক ডিজাইনার৷ হার্মিয়ন ফ্লিন ও ডেভিড বেনেট নামের দম্পতি কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ ২০০৯ সালে বিখ্যাত হলিউড চলচ্চিত্র ‘অবতার'-এ তিনি ভিন্ন গ্রহের না-ভি জাতিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন৷ সে যুগের সবচেয়ে সফল ছবি ছিল অবতার৷ মিমিক প্রোডাকশন্সের প্রধান নির্বাহী ডেভিড বেনেট বলেন, ‘‘প্রথমবার মুখের অভিব্যক্তির গোটা প্রণালী এমন বড় মাত্রায় সফল হয়েছিল৷ কত বড় চলচ্চিত্র হতে চলেছে, কাজের সময় তা ভাবতেই পারি নি৷''

ছবি তোলার পর পোস্ট-এডিটিং প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হওয়ায় মোশন ক্যাপচার প্রক্রিয়ার ব্যয় আসল ভিডিওর তুলনায় বেশি৷ তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে৷ মিমিক প্রোডাকশন্সের সহ প্রতিষ্ঠাতা হার্মিয়ন ফ্লিন বলেন, ‘‘যেমন বিখ্যাত কোনো তারকার সঙ্গে কাজ করলে৷ সেটে প্রতিটি মিনিটের জন্য তাঁরা পারিশ্রমিক নেন৷ এ ক্ষেত্রে তাঁদের সাক্ষাৎ হাজির করার কোনো প্রয়োজন নেই, তাঁদের চরিত্র নিয়েই কাজ করা যায়৷ অনেক সস্তায় কাজ হয়ে যায়৷''

মুখচ্ছবির উপর সেন্সর বসিয়ে হার্মিয়ন ফ্লিন নিজেরই এক ত্রিমাত্রিক অবতার সৃষ্টি করেছেন৷ তাঁর নকল যমজ একই সঙ্গে একাধিক সম্মেলনে কথা বলতে পারে এবং আসল বক্তার মুখের অভিব্যক্তি নকল করতে পারে৷

বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারায় বিষয়টি অনেকের কাছে কিছুটা ভয়ের কারণ বটে৷ হার্মিয়ন ফ্লিন অবশ্য বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করেন৷ তাঁর নিজের ডিজিটাল ‘নকল' সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া সুখকর হয় নি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন৷ বার বার তাঁরা প্রশ্ন করেন, আমি সত্যি মাথা কামিয়েছি কিনা৷ তখন বলতে হয়, না এটা আমি নই৷ যারা আমাকে চেনেন ও আমার ডিজিটাল যমজের দেখা পান, আমার মনে হয় তাঁদের মনে বিস্ময় জাগে৷''

এক বিজ্ঞাপনের জন্য ফুটবল তারকা নেইমারের হলোগ্রাম প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এককালের সবচেয়ে সফল কম্পিউটার গেমসের জন্য অ্যানিমেটেড ব্যাটম্যান সৃষ্টি করা হয়েছে৷ জেফ কুন্স নামের শিল্পীর জন্য এভাবে এক ব্যালেরিনাও সৃষ্টি করা হয়েছে৷ এই প্রযুক্তির প্রায় সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে৷ হার্মিয়ন ফ্লিন মনে করেন, বিশ্বে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠছে এবং এর ব্যয়ও কমছে৷

প্রতি বছর অ্যানিমেশন প্রযুক্তির বিশাল উন্নতি হচ্ছে৷ সে কারণেই বিভ্রান্তির এই ব্যবসার ভবিষ্যতও অত্যন্ত উজ্জ্বল৷

প্রতিবেদন: ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/এসবি