মহারণের আগে ভারত-পাকিস্তান কে কোথায় দাঁড়িয়ে
২০২৩-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের সবচেয়ে চর্চিত ও হাই ভোল্টেজ ম্যাচ হলো ভারত ও পাকিস্তানের মহারণ। সেই ম্যাচের আগে কে কোথায় দাঁড়িয়ে।
সাত বছর পর
সাত বছর পর ভারতে খেলতে এসেছে পাকিস্তান। প্রথম দুইটি ম্যাচের মধ্যে দুইটিতেই জিতেছে তারা। পয়েন্টস টেবিলে চার নম্বরে। ফলে আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আর পাঁচটা ম্যাচের মতো নয়। তাতে প্রবল উত্তেজনা থাকে। তেমনই থাকে ক্রিকটারদের উপর চাপ। ভারতে এত বছর পর এই ম্যাচ হওয়ায় সেই চাপ এবার বহুগুণ বেশি।
ফর্মে রোহিত শর্মা
চার বছর আগে ২০১৯-এর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন রোহিত শর্মা। এবার আফগানিস্তান ম্যাচে তিনি ৬৩ বলে শতরান করেছেন। যেভাবে ব্য়াট করেছেন রোহিত, তাতে বোঝা গেছে তিনি ফর্মে আছেন। রোহিত ভালো খেলা মানে ভারতের শুরুটা ভালো হওয়া। ভারতের অধিনায়ক যে কোনো ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন।
ভালো খেলছেন কোহলি
বিরাট কোহলির উপরও ভারত নির্ভরশীল। পরপর দুইটি ম্যাচে কোহলি ভালো খেলেছেন। দুইটিতেই অর্ধশতরান করেছেন। তবে এবার পাকিস্তানের বোলারদের মোকাবিলা করতে হবে বিরাটকে। কিন্তু বিরাট যে মানের প্লেয়ার, ফর্মে থাকলে, তিনি একাই দলকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। তার ফর্মে থাকা ভরসা যোগাচ্ছে সমর্থকদের।
নির্ভরযোগ্য কে এল রাহুল
চোট পেয়ে দল থেকে ছিটকে গেছিলেন। চোট সারিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে দলে ফেরেন। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছেন। বিশ্বকাপে তিনি ও বিরাটই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলকে জিতিয়েছেন।
বুমরাহ ভালো বল করছেন
যশপ্রীত বুমরাহ-ও চোট সারিয়ে ফিরেছেন। তারপর থেকে ভালো বল করছেন। যত সময় যাচ্ছে ততই তার বলে আগের ধার ফিরছে। ভারতের পেস অস্ত্রের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। তবে আমেদাবাদে লক্ষাধিক দর্শক, ঘরের মাঠে খেলা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার চাপ থাকবে তার উপর। বুমরাহ ভালো বল করলে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
স্পিনাররা ফর্মে
ভারতের তিন স্পিনার হলেন রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ এবং অশ্বিন। ভারত তিন স্পিনার নিয়ে খেলবে নাকি দুইজন সুয়োগ পাবেন, তা নির্ভর করছে পিচের উপর। তবে তিনজনই স্পিনারই ভালো বল করছেন। অশ্বিনের অভিজ্ঞতা, কুলদীপের বলের বৈচিত্র এবং জাদেজার হার না মানা মনোভাব কাজে আসতে পারে। তবে পাকিস্তানের ব্য়াটাররা স্পিন ভালো খেলেন।
সিরাজ ফর্মে নেই
ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য পেসার মহম্মদ সিরাজ ফর্মে নেই। আফগানিস্তান ম্যাচে তিনি সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন। তাকে নিয়ে সমর্থকদের চিন্তা বেড়েছে। তবে এই ধরনের বড় ম্যাচেই তো নিজেকে উজাড় করে দেন ক্রিকেটাররা। প্রথম দুইটি ম্যাচে শামি সুযোগ পাননি, যা নিয়ে গাভাস্কার ক্ষুব্ধ।
গিলের অনুপস্থিতি
ডেঙ্গু হওয়ায় শুভমন গিল খেলতে পারছেন না। অসুস্থ হওয়ার আগে খুবই ভালো ফর্মে ছিলেন গিল। তার জায়গায় সুযোগ পাচ্ছেন ইশান কিশান। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শূন্য করে আউট হওয়ার পর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে রান পেয়েছেন। বড় ম্যাচে তার উপরে ভরসা করবেন রোহিত। কিন্তু গিলের অনুপস্থিতি চিন্তায় ফেলতে পারে রোহিতকে।
বাবরের ব্যাটে রান নেই
পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম পরপর দুইটি ম্যাচেই ব্যর্থ। তার ব্যাটে রান নেই। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অন্যতম ভরসা তিনিই। তার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল পাকিস্তানের ব্যাটিং। ফলে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার রান না পেলে পাকিস্তান চাপে পড়বে।
ফর্মে রিজওয়ান
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শতরান করেছেন মহম্মদ রিজওয়ান। তাছাড়া ভারতের বিরুদ্ধে ভালো খেলার রেকর্ড আছে তার। বাবর ব্যর্থ হলেও রিজওয়ান দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। পাকিস্তানের বড় ভরসা তিনিই।
পাকিস্তানের ভরসা শাহিন শাহ আফ্রিদি
তার বাঁহাতি মারাত্মক পেস বোলিং সামলানো যে কঠিন, তার বিরুদ্ধে খেলা ক্রিকেটাররা তা ভালো করেই জানেন। তার মোকাবিলা করতে গিয়ে ভারতীয় ব্য়াটাররাও অতীতে প্রবল অসুবিধায় পড়েছেন। তবে আমেদাবাদের মাঠ থেকে শাহিন শাহ খুব বেশি সাহায্য পাবেন না। আবহাওয়াও অনুকূল নয়। তবে বড় বোলাররা বড় ম্যাচের মঞ্চে জ্বলে ওটেন। সেটাই পাকিস্তানের ভরসা।
পাকিস্তানের অলরাউন্ডাররা
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের টিমে ভালো অলরাউন্ডার আছে। তবে পাকিস্তানের শাদাব খান ও ইফতিকার আহমেদ যে কোনো ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। ব্যাট ও বল হাতে তারা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারেন।
পাকিস্তানের চিন্তা
গত ম্যাচে নতুন ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক রান পেয়েছেন। কিন্তু অপর ওপেনার ইমাম উল হক রানে নেই। তার ফর্মে না তাকা বাবরকে বিচলিত করতেই পারে। ছবিতে পাকিস্তানের করিকেটার ইফতিকার আহমেদ।
মাঠভরা দর্শক
আমেদাবাদের মাঠে এক লাখ ৪০ হাজার দর্শক বসার জায়গা আছে। এই ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। আমেদাবাদের প্রায় সব হোটেল ভর্তি। ফলে লক্ষাধিক দর্শক ভারতের হয়ে গলা ফাটাবে। সেই চাপও নিতে হবে পাকিস্তানকে। তবে সবমিলিয়ে আমেদাবাদে একটা উপভোগ্য ম্যাচ দেখার আশায় আছে ক্রিকেট বিশ্ব।