মানিকতলা উপনির্বাচনে টান টান লড়াই
বুধবার মানিকতলায় উপনির্বাচন। জিততে পারবেন প্রয়াত সাধন পাণ্ডের স্ত্রী?
পশ্চিমবঙ্গে চার বিধানসভায় ভোট
লোকসভা নির্বাচন মিটতেই আবার ভোট। বুধবার পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা, মানিকতলা, রায়গঞ্জের পাশাপাশি দেশের সাতটি রাজ্যের ১৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। ভোটগণনা হবে ১৩ জুলাই।
কেন উপনির্বাচন
উপনির্বাচন হবে বাংলার চারটি কেন্দ্র— নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, কলকাতার মানিকতলা এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। এর মধ্যে মানিকতলায় বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন হচ্ছে। বাকি তিন বিধায়ক লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।
কল্যাণের চ্যালেঞ্জ
গত বিধানসভা ভোটে মানিকতলা থেকে জিতেছিলেন প্রয়াত সাধন পাণ্ডে। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে তার মৃত্যুর পরে দু'বছর কেটে গেলেও মানিকতলায় উপনির্বাচন হয়নি। কারণ বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে সাধনের জয়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে নির্বাচনী মামলা করেছিলেন। সেই মামলা ঝুলে থাকায় উপনির্বাচন হয়নি। এরপর শীর্ষ আদালত জানায়, ২ মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। না হলে ফল ভুগতে হবে কমিশনকে।
সাধনের এলাকা
১৯৮৪ সালে বড়তলা বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন সাধন। কিন্তু ২০০৯ সালের আসন পূর্নবিন্যাসে বড়তলা বিধানসভা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই ২০১১ সালে নবগঠিত মানিকতলা কেন্দ্রে প্রার্থী হন তিনি। সেবার জিতে রাজ্যের মন্ত্রীও হন। ২০১৬ ও ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে জয় পেয়েছিলেন সাধন।
লোকসভায় ধাক্কা
উত্তর কলকাতা লোকসভা আসনে তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেও মানিকতলা বিধানসভায় তিনি এগিয়ে ছিলেন মাত্র সাড়ে তিন হাজার ভোটে। সেই মানিকতলাতেই উপনির্বাচন বুধবার। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন প্রয়াত মন্ত্রীর স্ত্রী সুপ্তি পাণ্ডে। সাড়ে তিন হাজারের ব্যবধান যে ‘নিরাপদ’ নয়, তা তৃণমূল মানছে।
বিপক্ষে ফুটবলার
মানিকতলায় বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সাবেক ফুটবলার তথা এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে। ২০২১ সালে সাধনের কাছে কল্যাণই পরাস্ত হয়েছিলেন। তার পরে তার দায়ের করা মামলার জন্যই আটকে ছিল মানিকতলার উপনির্বাচন।
মহুয়ার কাছে হার
এআইএফএফ সভাপতি এর আগেও ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ২০১৯-এ প্রথম ভোটের ময়দানে। সে বার কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের কাছে ৬৩ হাজারেরও বেশি ভোটে হেরেছিলেন।
তৃণমূলের লড়াই
সুপ্তিকে ‘সম্মানজনক’ ব্যবধানে জিতিয়ে তৃণমূল লোকসভার ক্ষতে প্রলেপ দিতে চাইছে। শাসকদল সূত্রে জানা গেছে, মূলত দু’টি ওয়ার্ড এবং আবাসনগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই মতো শেষ ক’দিনের কর্মসূচিও চালিয়েছে।
বিজেপির সংগঠন
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাধন পাণ্ডের কাছে আবার হারেন কল্যাণ। এবার তার স্ত্রীর মুখোমুখি তিনি। প্রচার করেছেন বটে, তবে এই এলাকায় বিজেপির সংঠন যে তেমন মজবুত নয় তা প্রচারে সমর্থকদের ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
মমতা দাওয়াই
তৃণমূল চাইছে ওই দু’টি ওয়ার্ড থেকে ‘সম্মানজনক’ ব্যবধানে সুপ্তিকে ‘লিড’ দিতে। তাই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই উত্তর কলকাতার চার তৃণমূল নেতাকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। সেখানেই ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার, বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকে নিয়ে কোর কমিটি গঠন করে দেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী।
কল্যাণের ফুটবল
বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ তার ফুটবলার ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে সকালে স্থানীয় খেলার মাঠগুলিতে খেলার অছিলায় প্রচার চালানোর চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের সঙ্গে বলে পা লাগিয়ে চালিয়ে গিয়েছেন প্রচার।
বাম-কং প্রার্থী
বাম এবং কংগ্রেসের জোট প্রার্থী করেছে রাজীব মজুমদারকে। এর আগেও এই কেন্দ্র থেকে লড়েছেন তিনি। তবে প্রচারে খুব বেশি দাগ কাটতে পারেননি রাজীব। মানিকতলার লড়াই মূলত দ্বিমুখী।
সুপ্তির মিছিলে ফুটবলার
খেলার ব্যাপারে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও। প্রাক্তন গোলরক্ষক যাতে গোল করে না বেরিয়ে যেতে পারেন, তাই তৃণমূলও সুপ্তির মিছিলে অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে জড়ো করেছেন একঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলারকে, যারা তৃণমূলপন্থি খেলোয়াড় হিসেবে বাজারে পরিচিত।
রাস্তায় নুসরত
সন্দেশখালির ঘটনার জেরে এবার বসিরহাট থেকে টিকিট পাননি অভিনেত্রী নুসরত জাহান। রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন তিনি। ১৯৫ দিন পর ফের তাকে প্রচারে দেখা গেল। সুপ্তির হয়ে রোড শো করলেন তিনি।