মিশরে চিরায়ত পদ্ধতিতেই ঘরে তাপ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ
২৩ মার্চ ২০২২কায়রোর স্থপতি সারাহ এল বাটুতি তাপ নিয়ন্ত্রণে ঐতিহ্যগত জ্ঞান সমসাময়িক স্থাপত্যে প্রয়োগ করতে চান৷ তাঁর টিম এমন ভবন ডিজাইন করে, পরিবেশ ও সমাজের উপর যেগুলির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ সারাহ বলেন, ‘‘মিশরে চরম উত্তাপের কারণে আমরা চাপের মুখে রয়েছি৷ আমাদের এখানে অনেক জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে৷ মিশরে কেন কোনো ‘গ্রিন বিল্ডিং’ নেই? থাকলেও এত কম কেন? দেশজ জ্ঞান কাজে লাগালে প্রচলিত প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া সম্ভব বলে আমি সত্যি বিশ্বাস করি৷ অনেকে জানেই না, যে এমন প্রযুক্তি হাতের নাগালে রয়েছে৷’’
মিশরে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে৷ কংক্রিটের তৈরি ভবনের ভিড়ে উত্তাপ মারাত্মক হয়ে ওঠে৷ যে সব বাসিন্দাদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা এয়ার কন্ডিশনর লাগিয়ে ফ্ল্যাট ঠাণ্ডা রাখেন৷ সারাহ এল-বাটুতি বলেন, ‘‘উপার্জনের প্রায় ৩০ শতাংশই ঘর ঠান্ডা রাখতে চলে যায়৷ তাহলে কেন এমন ভবন থাকবে না, যেখানে প্রচলিত সমাধানসূত্রের বদলে ঠাণ্ডা রাখার সার্বিক ব্যবস্থা থাকে?’’
কায়রো থেকে আড়াইশো কিলোমিটার দূরে রয়েল হার্বস ইজিপ্ট কোম্পানি টেকসই সমাধানসূত্র খুঁজছে৷ ১৪০ জন কর্মীর জন্য সারাহ এল বাটুতির কোম্পানিকে নতুন আবাসনের ডিজাইন করতে দিয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ শীতল রাখার ব্যবস্থা থাকবে৷
স্থপতিরা বাতাস চলাচল ও সূর্যের আলোর দিক পরীক্ষা করে আলো-বাতাস ও ছায়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলি লক্ষ্য করেছিলেন৷ আশপাশ থেকে নুড়িপাথর ও চুনাপাথরের ইট সংগ্রহ করে আবাসনের কাঠামো গড়ে তোলেন৷ স্থপতি হিসেবে আহমেদ এল শরিফ বলেন, ‘‘এই এলাকায় বাতাস বইলে প্রাচীরের গাঢ় রং উত্তাপ শুষে নেয়৷ প্রাচীরের মধ্যে ইনসুলেশনও রয়েছে৷ এই দুটি বিষয় বাতাস চলাচল ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে৷ সেইসঙ্গে ঘরের মধ্যে বাড়তি থার্মাল কমফোর্টও পাওয়া যায়৷’’
ঘরের মধ্যে এখন সারা বছর ধরে সর্বদা ১৯ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় থাকে৷ সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে ঘরের ভেতরের পাখা চালানো হয়৷ সৌরশক্তি চালিত ওয়াটার হিটার দিয়ে পানি গরম করা হয়৷
এই প্রকল্প ‘গোল্ডেন পিরামিড' ইকো লেবেল পুরস্কার পেয়েছে৷ সরকার সালাহ এল হাগ্গারকে এক জাতীয় রেটিং প্রণালী চালু করার দায়িত্ব দিয়েছেন৷ বেড়ে চলা জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে মিশর ঘরবাড়ির জ্বালানি ব্যবহার কমাতে চায়৷ মিশরীয় গ্রিন বিল্ডিং পরিষদের সভাপতি সালাহ এল হাগ্গার বলেন, ‘‘আমার মতে, স্থাপত্যের ডিজাইন পুরোপুরি টেকসই স্থাপত্যে রূপান্তরিত করা উচিত৷ গ্রিন বিল্ডিংয়ের সাহায্যে আমরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারি৷ আমরা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পানিও সাশ্রয় করতে পারি৷ অনেক উপকরণের ব্যবহার কমাতে পারি৷ সবার উপরে আমরা ভবনের ভিতর ও বাইরের পরিবেশগত মানের উন্নতি করতে পারি৷’’
গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যগত ঘরবাড়ি থেকেই এই প্রেরণা এসেছে৷ প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলি ডিজাইন করা হয়৷ যারা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ভবনগুলি ব্যবহার করবে, তাদের জীবনযাত্রার উপর ইতিবাচক প্রভাব রাখাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷
সে ক্ষেত্রে শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষেরও উপকার হবে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রাম ছেড়ে শহরাঞ্চলে বাস করার প্রবণতার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে কায়রোর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷ সারাহ এল-বাটুতি জানান, ‘‘আমাদের কিছু প্রকল্পে কোনো যান্ত্রিক কাঠামো ছাড়াই আমরা তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি কমাতে পেরেছি৷ সে কারণে আমরা গ্রামাঞ্চলেও আরও ভালো সমাধানসূত্রের জন্য চেষ্টা করতে পারি৷ বিশেষ করে স্বল্প আয়ের আবাসনের ক্ষেত্রে এমনটা করা প্রয়োজন, যাতে মানুষ এমন কিছু সংশোধনের চেষ্টা না করে, শুরুতে আমরা যার বিহিত করতে পারি নি৷’’
সারাহ এল বাটুতি সম্প্রতি মিশরের প্রেসিডেন্টের ‘ডিসেন্ট লাইফ’ নামের উদ্যোগের দূত নিযুক্ত হয়েছেন৷ পরিবেশ সংক্রান্ত নির্দেশিকা রচনা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে প্রচার চালানোই হবে তার ভূমিকা৷
আরও উষ্ণ হয়ে চলা পৃথিবীর অবকাঠামোর বড় অংশকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবার প্রচেষ্টায় মিশর একা নয়৷ গোটা বিশ্বে এই সমস্যার সমাধানে গ্রিন আর্কিটেকচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷
মুরাদ এল-তুনি/এসবি