যে বাগান স্বনির্ভর করে
সেনেগালের একটি বিশেষ গোলাকার বাগান চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে। বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে।
বাগানের মালি যিনি
৪৭ বছর বয়সি মুসা কামারা সারাদিন পাউরুটি তৈরি করেন। কাজ শেষে নিজের গোলাকার বাগানের দেখভাল করেন তিনি। সেনেগাল-মৌরিটানিয়া সীমান্তের কাছে বোকি দাওয়ে গ্রামের বাসিন্দা কামারার ২৫ সদস্যের পরিবারের জন্য এই বাগান অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।
কেন এই বাগান
সেনেগালিজ ভাষায় এই গোলাকার বাগানকে বলা হয় 'টোলোউ কেউর'। এই ধরনের বাগান এমন একটি প্রকল্পের অংশ, যা দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোয় ভূমিকা রাখে। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের সুবাদে কাজও পাচ্ছেন বহু স্থানীয় মানুষ।
গ্রিন ওয়াল ইনিশিয়েটিভ
২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে জমির উর্বরতা বাড়াতে চালু হয়। সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে অবস্থিত এই অঞ্চলে সেনেগাল থেকে জিবুতি পর্যন্ত আট হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ গাছের সারি রোপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
প্রকল্পের জন্য যা প্রয়োজন
এই প্রকল্পের যা লক্ষ্য, তার মাত্র চার শতাংশ বৃক্ষরোপণ সম্ভব হয়েছে এখন পর্যন্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ করতে প্রয়োজন ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জানাচ্ছে জাতিসংঘ।
গোলাকার বাগানের যা ভূমিকা
বৃক্ষরোপণে তেমন সাফল্য না পেলেও এই গোলাকার বাগান সাত মাসেই ফসল ফলাচ্ছে। বর্তমানে, শুধু সেনেগালেই রয়েছে এমন দুই ডজন গোলাকার বাগান, জানাচ্ছে দেশটির বন বিভাগ। একটি বাগানে তিনমাস কাজ করার পরেই কর্মীরা চলে যান নতুন বাগান তৈরির জন্য মানানসই জমির খোঁজ করতে।
বাগানে যে ধরনের গাছ
এই ধরনের বাগানে এমন গাছ রোপণ করা হয় যা প্রবল গ্রীষ্ম সইতে পারে, যেমন আম, মোরিঙ্গা, সেজ ও পেঁপে।
অভিবাসনের সাথে যা সম্পর্ক
কামারার মতে, এই ধরনের বাগান সংখ্যায় বাড়লে বাড়বে মানুষের কাজের সুযোগ। ফলে সাব-সাহারান অঞ্চল থেকে ইউরোপ ও অ্যামেরিকাগামী মানুষের বিপজ্জনক পথে অভিবাসনের চেষ্টা কিছুটা কমবে বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, "বিপজ্জনক অভিবাসনের দিকে যাওয়ার চেয়ে এখানে থেকে ফসল ফলিয়ে নিজে আয় করা অনেক ভালো।"
করোনাকালে গোলাকার বাগান
বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারির প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে সেনেগালও লকডাউনের দিকে যায়। বন্ধ হয় খাদ্যদ্রব্যের আমদানি, যার ফলে স্থানীয় মানুষদের খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ে। এই ধরনের বাগানের সংখ্যা বাড়িয়ে সেনেগালের গ্রামগুলিকে স্বনির্ভর করে তোলা যাচ্ছে বলে মনে করেন এই গোলাকার বাগানের উদ্ভাবক আলি এনদিয়ায়ে।
ছোট অথচ স্থায়ী সমাধান
আলি এনদিয়ায়ে'র মতে, এক হাজার এমন গোলাকার বাগান মানেই ১৫ লাখ নতুন গাছ। ফলে যদি এই বাগানের ধারণাকে জনপ্রিয় করে তোলা যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ বৃক্ষরোপণ সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।