যোদ্ধা ও পুলিশ পশুপাখি
আইএস এর সাবেক প্রধান বাগদাদির বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে অংশ নেয়া এক কুকুরকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ সামরিক বাহিনীতে কুকুরের ব্যবহার সবারই জানা৷ কিন্তু ক্যানারি পাখি, ঈগল, সিল কিংবা ইঁদুরের ভূমিকা জানা আছে কি?
সবচেয়ে জনপ্রিয় কুকুর
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের বাহিনী বিভিন্ন প্রাণী মোতায়েন করে৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা আর শুল্ক বাহিনীর প্রিয় অবশ্য কুকুরই৷ মাদক, বিস্ফোরক এমনকি প্রযুক্তিগত যন্ত্র খোঁজায় তাদের জুড়ি নেই৷ জেনারেল ম্যাককেনজি মার্কিন সামরিক বাহিনীতে কুকুরের ভূমিকা নিয়ে বলেছেন; ‘‘মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা, বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষা, যোদ্ধা আর সাধারণ মানুষকে আলাদা করা সেই সঙ্গে শত্রুকে নিথর করে দিতে পারে কুকুর৷’’
ঈগল বনাম ড্রোন
মাটিতে না হয় অনেক সুবিধাই দিতে পারে কুকুর৷ কিন্তু আকাশে? ডাচ পুলিশের কাছে এক্ষেত্রে কার্যকরী ঈগল, বিশেষ করে যদি লড়াইটা হয় ড্রোনের বিরুদ্ধে৷ ধরা যাক শত্রুপক্ষ দূর নিয়ন্ত্রিত কোন ড্রোন দিয়ে পারমানবিক প্ল্যান্টে হামলার পরিকল্পনা করল৷ এক্ষেত্রে ঈগলটি যেন আগে ভাগেই আকাশ থেকে সেই ড্রোনকে ভূপাতিত করতে পারে সেই প্রশিক্ষণই দিচ্ছে ডাচ কর্তৃপক্ষ৷
ট্র্যাজিক পাখি ক্যানারি
পোষার জন্য অনেকের কাছে প্রিয় পাখি ক্যানারি৷ বর্ণিল রং আর সুরে যে কারো মন ভোলাবে, কিন্তু নিরাপত্তায় কী কাজে আসবে? কুকুরের মত শত্রুপক্ষকে তাড়া করা কিংবা ঈগলের মত ড্রোনকে পাকড়াও করার সক্ষমতাতো এই নিরীহ প্রকৃতির পাখিটির নেই! কিন্তু উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্তে এদের ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি বোঝার জন্যে৷ কীভাবে?
ছোট্ট হলদে পাখি
উত্তর কোরিয়া যেকোন সময় তার প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাস হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে সিউলের৷ সেটি আগেভাগে টের পাওয়ার জন্য খাঁচাভর্তি ক্যানারি পাখি রেখে দেয়া হয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে৷ সেগুলো যদি মারা যায় তাহলেই বোঝা যাবে উত্তর কোরিয়া গ্যাস হামলা চালিয়েছে আর দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষকে মাস্ক পরতে হবে৷ কেননা ক্যানারি পাখি খুব অল্প গ্যাসও সহ্য করতে পারে না৷
প্রথম মহাকাশচারী
মাহকাশে মানুষ নয় সবার আগে পাড়ি জমিয়েছিল একটি কুকুর৷ নামটি অনেকেরই জানা- লাইকা৷ দিনটি ছিল ৩ নভেম্বর, ১৯৫৭ সাল৷ মহাকাশে গেলে মানুষকে কী ধরণের সমস্যায় পড়তে হতে পারে তা বোঝার জন্য কুকরটিকে পাঠিয়েছিল রাশিয়া৷ সেই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছিল লাইকা৷ ধারণা করা হয় অতিরিক্ত চাপ আর উত্তাপে তার মৃত্যু হয়৷
কবুতর যখন গুপ্তচর
কবুতর চিঠি আদান প্রদানের পুরনো প্রথা অনেকেরই জানা৷ ডাকপিয়নের ভূমিকা ছাড়াও মানুষ কবুতর নিয়োজিত করেছে গোয়েন্দাগিরিতেও৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পাখিটিকে ব্যবহার করা হয়েছে শত্রুপক্ষের ঘাঁটির ছবি তোলার কাজে৷ তবে যেই ক্যামেরাটি সেসময় ব্যবহার হত সেটি বড়জোর একটি কি দুটি ছবি তুলতে পারত৷
মাইন অনুসন্ধানকারী
কুকুরের মত ইঁদুরেরও রয়েছে প্রখর ঘ্রাণশক্তি৷ সেই সঙ্গে হালকা হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাণীটিকে ব্যবহার করা হয় মাইন অনুসন্ধানে৷ চাপে পড়ে কোন কারণে মাইন বিস্ফোরণের ঝুঁকি এতে কম থাকে৷ কিন্তু পানির নীচে থাকা মাইনের কী হবে?
ফটোগ্রাফার ডলফিন
পানির নীচে রাখা মাইন খোঁজায় কার্যকর ডলফিন৷ ছবিতে যে ডলফিনকে দেখা যাচ্ছে তার নাম দেয়া হয়েছে কে-ডগ৷ যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর সদস্য সে৷ পাখায় থাকা ক্যামেরাটি দিয়ে সে পানির নীচের ছবি তুলে আনে৷ স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন দুই পক্ষই তাদের নৌ বাহিনীর কার্যক্রমে ডলফিনদের যুক্ত করার একটি প্রকল্প চালু করে৷ রাশিয়ার দাবি তারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের তা এখনও চালু আছে৷
পারদর্শী সিল
মাইন অনুসন্ধানে ডলফিনের পাশাপাশি মার্কিন বাহিনী সামুদ্রিক সিলকেও ব্যবহার করে৷ যেমনটা উপরে দেখা যাচ্ছে৷ বাহরাইনে একটি প্রশিক্ষণের ছবি এটি৷ মাইনের বাইরে সিল কিংবা ডলফিন ডুবুরিদের সন্ধানও দেয়, শত্রুপক্ষের আক্রমণের হাত থেকে জাহাজ আর বন্দর রক্ষায় সহযোগিতা করে৷ গুঞ্জন রয়েছে ডলফিন ব্যবহার করে এমনকি শত্রুপক্ষের নৌযানে হামলাও চালানো হয়৷
পুলিশ অফিসার
সামরিক কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীতে প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্য ঘোড়া৷ কয়েক হাজার বছর ধরে এই প্রাণীটি ব্যবহার হয়ে আসছে যুদ্ধক্ষেত্রে৷ মধ্যযুগে ঘোড়া নাইট উপাধি পেত, এখন তারা পায় পুলিশ অফিসারের মর্যাদা৷ যেমনটা ছবির ঘোড়াগুলো৷ লন্ডনের একটি ফুটবল ম্যাচ চলাকালের স্টেডিয়ামের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত তারা৷