‘রাশিয়ার ওপর স্যাংশনে অ্যামেরিকার মানুষও কষ্ট পাচ্ছে’
৭ জুলাই ২০২২রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানুষকেও যে ভুগতে হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেছেন, ‘‘স্যাংশন দিয়ে কখনো কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেটা নিশ্চয় এখন দেখতে পাচ্ছেন৷ যুদ্ধ যারা করার, করতে থাকেন৷ কিন্তু পণ্য পরিবহণ বা আমদানি রপ্তানিটা যাতে সহজভাবে হয়, আর সাধারণ মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়৷
সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আট তলা অফিস ভবন উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ একই অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক' বিতরণ করা হয়৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘উৎপাদন বাড়াতে গেলে আমাদের সার প্রয়োজন, আমাদের ডিজেল প্রয়োজন৷ আমাদের বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন, সেটা আমরা পাচ্ছি না৷''
গত এক যুগে উন্নয়নের গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া বাংলাদেশকেও এখন অন্য অনেক দেশের মত মহামারীর ধাক্কা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ভুগতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
প্রধানমন্ত্রী জানান, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে৷ বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও সঙ্কটে পড়েছে, ফলে সরকারকে এখন নিয়ম করে লোড শেডিং দিতে হচ্ছে, তাতে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে আমি ঠিক জানি না৷ এখানে তো আমি বলব… একদিক থেকে বলতে গেলে এটাও তো মানবাধিকার লঙ্ঘন করার শামিল৷ মানুষের যে অধিকার আছে, সেই অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়৷''
পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমরা আশা করি, একটা দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া… এখান থেকে সরে আসাটা বোধহয় বাঞ্ছনীয় এবং সকলে সেটাই চাইবে৷''
বাংলাদেশ যে সব সময় শান্তির পক্ষে, সেই পররাষ্ট্রনীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য, যখন সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, ঠিক সেই সময় ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরো করুণ হয়ে যাচ্ছে, আরো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তার উপর অ্যামেরিকা যে স্যাংশান দিয়েছে, এই স্যাংশান দেওয়ার ফলে আমাদের পণ্যপ্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি, সেখানে বিরাট বাধা আসছে৷ শুধু তাই না, পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পাব, সেই প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সঙ্কুচিত হয়ে গেছে৷''
যুদ্ধের প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সে কথাও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে, এটা আসলে উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত, অ্যামেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত যে তারা যে স্যাংশন দিচ্ছেন, তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে৷ সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই স্যাংশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন, তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন৷ কিন্তু আসলে কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, সব দেশে৷ সে উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ বা সকল দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে৷''
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ওই নিষেধাজ্ঞাকে বাংলাদেশের জন্যও ‘বিরাট এক চ্যালেঞ্জ' হিসেবে বর্ণনা করেন সরকারপ্রধান৷ তিনি বলেন, ‘‘খাদ্যটা মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা, আর সেখানে সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশও৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবনটাও দুর্বিসহ হয়ে উঠছে৷''
কটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর, সেটা সকলের উপলব্ধি করা উচিত৷''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে এ অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)