সাক্ষী নিরাপত্তা
১৪ মার্চ ২০১৩বাংলাদেশের এই সংগীত ব্যক্তিত্ব প্রস্তাবিত সাক্ষী সুরক্ষা আইনের কার্যকারিতা নিয়েও সন্দিহান৷
সাক্ষী সুরক্ষা আইন এখনো হয়নি৷ হলে ছোট ভাই মিরাজ উদ্দিন আহমেদের লাশ পাওয়ার পর সুরকার, গীতিকার এবং সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে সাত মাস ধরে নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এমন কথা বলতে হতো না৷ ইতিমধ্যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমন আইন কার্যকর করে সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইনটি আগে সংসদে পাশ করতে হবে৷ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া কেউ কেউ নিখোঁজ হয়েছেন, কারো কারো হয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যু, তাঁদের পরিবার নিখোঁজ এবং মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন যু্দ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তিকে৷
সোমবার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ভাইয়ের লাশ উদ্ধারের পর গণমাধ্যমে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মুখেও শোনা গেছে একই কথা৷ ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না', ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে', ‘সেই রেল লাইনের ধারে', ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য'. ‘ও আমার আট কোটি ফুল', ‘একাত্তুরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল', ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি'সহ অনেক কালজয়ী এবং জনপ্রিয় গানের সুরকার জানান গত সাতমাস ধরে প্রায় গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে বুলবুল অবশ্য জানিয়েছেন ভাইয়ের মৃত্যুর পর সরকার তাঁর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে৷
অনেকদিন ধরেই প্রচার মাধ্যম বলে আসছে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল গোলাম আযমের একটি মামলার প্রথম এবং প্রধান সাক্ষী৷ একুশে পদক এবং জাতীয় ও বাচসাস পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি পাওয়া বুলবুল মনে করেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা অন্যভাবে বলা উচিত৷ তাঁর দাবি, ট্রাইব্যুনালে তিনি একাত্তরে যে নির্মম একটা হত্যাকাণ্ড দেখেছেন সে কথাই বলেছেন৷ ঘটনাস্থলে যাঁরা উপস্থিত ছিল, তাঁদের প্রত্যেকের নাম তিনি বলেছেন৷ কিন্তু গোলাম আযম সেখানে ছিলেন না৷ ছিল রাজাকার, শান্তি কমিটি এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ কিন্তু এক নিহত ব্যক্তির মা-র দাবি, তাঁর সন্তানের হত্যার সঙ্গে গোলাম আযমও জড়িত৷
নিজের নিরাপত্তা এমনি এমনি পাননি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল৷ ছোট ভাইয়ের হত্যার পর গণমাধ্যমে এর জোর দাবি জানিয়েছিলেন সে কথা এই সাক্ষাৎকারেও বলেছেন৷ ভাইকে কারা হত্যা করেছে তা জেনে জানানোর ভার আপাতত তদন্ত কর্তৃপক্ষের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন৷ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য মামলা করেছেন বলে এ হত্যাকাণ্ড এখন বিচারাধীন, তাই এ বিষয়ে কথা বলায় তাঁর আরো আপত্তি৷ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল মনে করেন সাক্ষী সুরক্ষা আইন শিগগিরই প্রণয়ন এবং কার্যকর করা দরকার৷ প্রশ্ন ছিল, সাক্ষীদের পরিবারের সদস্যদেরই যেখানে হত্যা করা হচ্ছে এ অবস্থায় শুধু সাক্ষীকে সুরক্ষা দিলেই কি হবে? আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বললেন, ‘‘শুধু সাক্ষীর নিরাপত্তা দিলে সাক্ষীদের দেশেই থাকা উচিত নয়৷''
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন