1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শেখ হাসিনার কূটনীতির আম কি তিস্তার জল দেবে?

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ
১৩ জুন ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বরাবরই ইলিশ, আম পাঠিয়ে থাকেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মমতাও হাসিনাকে উপহার পাঠান। এ কি কেবলই সৌজন্য না কি কূটনীতি?

https://p.dw.com/p/4SVA5
শেখ হাসিনা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: DW/Prabhakar

পুজো এবং ইদে পশ্চিমবঙ্গের তাঁতের শাড়ি উপহার পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি হাসিনা মমতার কালীঘাটের বাড়িতে ছয়শ কেজি আম পাঠিয়েছেন। সরকারি সৌজন্য নয়, ব্যক্তিগত উপহার। সেই আম আবার মমতা তার পরিচিত মহলে বিলিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কেজি ইলিশ উপহার পাঠান হাসিনা। ইলিশ অবশ্য সরকারি বাণিজ্যিক পথ ধরেই পদ্মাপার থেকে গঙ্গাপারে প্রবেশ করে। প্রশ্ন হলো, এ কি কেবলই সৌজন্য? না কি কূটনীতি?

'৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু। এ বন্ধুত্ব বরাবরই অটুট থেকেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের একাধিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক আছে। যার মধ্যে অন্যতম তিস্তা জলবন্টন বিতর্ক। বাংলাদেশ বরাবরই মনে করে, তিস্তার প্রাপ্য জল ভারত ছাড়ছে না। বাঁধ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সেই জল আটকে রাখছে নিজের সীমান্তে। এনিয়ে কয়েকদশক ধরে বাংলাদেশ সরব।

তিস্তার ধারে তিস্তা বিতর্ক

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একসময় জলবন্টন চুক্তিতে রাজিও হয়ে গেছিলেন। কিন্তু বাধ সেধেছেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিস্তার জলবন্টন চুক্তি তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অসন্তোষ দিনকে দিন বেড়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন হলো, এত কিছুর পরেও তা হলে মমতার সঙ্গে এই ব্যক্তিগত সৌজন্য দেখাচ্ছেন কেন হাসিনা? এর আগে দিল্লি সফরে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দিল্লি মমতাকে সেই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রুষ্ট হয়েছিলেন। হাসিনা বলেছিলেন, মমতা তার ছোট বোনের মতো। তাদের সম্পর্ক ব্যক্তিগত। কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করেন, হাসিনার এই প্রতিটি কথা, প্রতিটি উপহারই আসলে কূটনৈতিক। সম্পর্ক খারাপ করে তিস্তা জলবন্টন চুক্তির আশা একেবারে বিসর্জন দিতে তিনি চান না। বরং সম্পর্ক বজায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপর একটি চাপ বজায় রাখতে চান তিনি।

স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের দুই হাজার ২১৭ কিলোমিটার সীমান্ত। এই সীমান্ত পশ্চিমবঙ্গের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের জন্যও ততটাই। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যপথের অধিকাংশটাই পশ্চিমবঙ্গ-নির্ভর। নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত-নির্ভর। ফলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে বাংলাদেশের সমস্যা হবে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গও চায় না প্রতিবেশী বাঙালি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে। সীমান্তে শান্তি বজায় না থাকলে পশ্চিমবঙ্গ সার্বিকভাবে সমস্যায় পড়বে। ফলে কূটনৈতিক বিতর্ক কূটনৈতিক সৌজন্য দিয়েই মোকাবিলা করতে চাইছেন এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। ইংরেজিতে মাইন্ড-গেম বলে একটি শব্দবন্ধ পরিচিত। হাসিনা-মমতার সৌজন্যকে বহু কূটনীতিক ওই মাইন্ড-গেম হিসেবেই পড়তে চাইছেন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷