1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলাপাকিস্তান

শেষ ম্যাচে ধুঁকে ধুঁকে জিতল পাকিস্তান

সামীউর রহমান
১৬ জুন ২০২৪

আয়ারল্যান্ডকে তিন উইকেটে হারিয়ে হতাশার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শেষ করল সুপার এইট থেকে আগেই ছিটকে যাওয়া পাকিস্তান।

https://p.dw.com/p/4h6v3
শাহিন শাহ আফ্রিদি
পাকিস্তানের বোলারদের সামনে রীতিমতো অসহায় দেখিয়েছে আইরিশ ব্যাটারদের।ছবি: Lynne Sladky/AP Photo/picture alliance

আসরে পাকিস্তান জিতেছে মাত্র দুটো ম্যাচ, কানাডা আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।

আয়ারল্যান্ডের নয়টি উইকেটে করা ১০৬ রানের জবাবে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে হয়েছে ১৯তম ওভার পর্যন্ত, হারিয়েছে সাত উইকেট। সাত বল হাতে রেখে শাহিন শাহ আফ্রিদির ছক্কায় যখন পাকিস্তান ম্যাচটা জিতল, তাতে মাঠে উপস্থিত কিছু পাকিস্তান সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটলেও মন যে ভরেনি সেটা দিনের আলোর মতই স্পষ্ট।

ফ্লোরিডায় টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেন আইরিশ অধিনায়ক পল স্টারলিং। ব্যাট করতে নেমেই তারা বুঝতে পেরেছেন সিদ্ধান্তটা কতখানি আত্মঘাতী ছিল। বল হাতে প্রথম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি সবসময়ই ভয়ংকর। তার উপর বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতে আহত বাঘের মতই হিংস্র হয়ে উঠেছেন পাকিস্তানের বোলাররা।প্রথম ওভারেই শাহিনের জোড়া আঘাত। ম্যাচের তৃতীয় বলেই বিষাক্ত ইনসুইঙ্গারে শাহিন ভেঙ্গে দেন অ্যান্ড্রু বলব্রাইনের স্টাম্প। দুই বল পরেই লোরকান টাকারকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন উইকেটের পেছনে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারটা করতে এলেন মোহাম্মদ আমির, চতুর্থ বলেই পল স্টারলিংকে বানালেন রিজওয়ানের দ্বিতীয় শিকার। তৃতীয় ওভারে আবারও বল হাতে শাহিন, শেষ বলে হ্যারি ট্যাক্টরকে ফেললেন লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে। আয়ারল্যান্ডের রান তখন চার উইকেটে ১৫, শাহিন দুই ওভারে পাঁচ রানে তিন উইকেট।

 শাহিন শাহ আফ্রিদি
বল হাতে প্রথম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদি সবসময়ই ভয়ংকর।ছবি: Lynne Sladky/AP Photo/picture alliance

পাকিস্তানের বোলারদের সামনে রীতিমতো অসহায় দেখিয়েছে আইরিশ ব্যাটারদের। মাসখানিক আগেই আয়ারল্যান্ড সফরে আসা পাকিস্তান দলকে ডাবলিনে হারিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। তাই পাকিস্তানকে শেষ ম্যাচেও যে আইরিশরা চমকে দিতে পারে, সেই সম্ভাবনা তো ছিলই। তবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে আসা পাকিস্তান সমালোচনার চাবুকে জর্জরিত, জবাব দেবার জন্য শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া আইরিশদেরই বেছে নিলেন শাহিন-হারিস-আমিররা। আয়ারল্যান্ডের টপ অর্ডারকে মাত্র ১৫ রানেই ফেরত পাঠিয়ে দেবার পর আইরিশরা যে শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়নি, সেটা গ্যারেথ ডেলানি আর জশ লিটিল এর কল্যাণে। ২৮ রানে উপরের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলার পর রুখে দাঁড়ান ডেলানি, ১৯ বলে তিনটি ছক্কা আর একটি বাউন্ডারিতে ৩১ রান করে দলীয় সংগ্রহটা ভদ্রগোছের একটা চেহারার দিকে নিয়ে যান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষদিকে জশ লিটিল এর ১৮ বলে ২২* রানের ইনিংসে একশ রান পার করে আয়ারল্যান্ড। মার্ক আডাইর করেন ১৫ রান। শুরুর স্পেলের পর আর উইকেট পাননি শাহিন, বোলিং কোটা শেষ করেছেন ৪-০-২২-৩ ফিগারে। মাঝের ওভারগুলোতে আইরিশদের বিপত্তি বাড়িয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম। বল হাতে ছিলেন কৃপণ, উইকেটও নিয়েছেন তিনটি। চার ওভারে মাত্র আট রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন এই বামহাতি স্পিনার।

২০ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ নয় উইকেটে ১০৬ রান। বিশ্বকাপে এই ম্যাচেই প্রথম সুযোগ পাওয়া আব্বাস আফ্রিদি ছিলেন এই কম রানের মাঝেও বেশ খরুচে, তিন ওভারে দিয়েছেন ৩১ রান এবং কোনো উইকেটও পাননি। আয়ারল্যান্ডের ইনিংসের তিনটি ছক্কার দুটোই হজম করতে হয়েছে উমর গুলের ভাতিজাকে।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে মোহাম্মদ রিজওয়ানের বাউন্ডারি আডাইরের বলে। তাতেই স্পষ্ট, ম্যাচটা শুধু জিততে নয় একটা ছাপ রেখে বিদায় নিতে চায় পাকিস্তান। কিন্তু এই আগ্রাসী মেজাজটা বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি পাকিস্তান। টপ-এজ হয়ে সাইম আইয়ুবের ১৭ রানে বিদায়ের পর ফাইন লেগে মার্ক আডাইরের দারুণ ক্যাচে রিজওয়ানও বিদায় নিলে চাপে পড়ে পাকিস্তান। ছোট লক্ষ্যের ম্যাচটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে দুই ওভারেই পাকিস্তান তিন উইকেট হারালে। নবম ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান ফখর জামান, পরের ওভারে প্রথম বলে উসমান খান আর তৃতীয় বলে শাদাব খান আউট হয়ে গেলে আইরিশদের মতই অবস্থা হয় পাকিস্তানের। ৫৭ রানে নেই পাকিস্তানের ৫ উইকেট,পরের ওভারে ইমাদ ওয়াসিমও আউট হয়ে গেলে পাকিস্তানের স্কোরকার্ডের চেহারাটা হয় ১১ ওভার শেষে ৬২/৬। আইরিশদেরও ১৬ ওভার শেষে রান ছিল ৭৫/৬। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে পাকিস্তানের অধিনায়ক এবং সবশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বাবর আজম একটা প্রান্ত আগলে ছিলেন, যেটা আইরিশ ইনিংসে ছিল না।

ধারাভাষ্যে রামিজ রাজা বারবারই বলছিলেন যে যতক্ষণ বাবর আছেন ততক্ষণ চিন্তা নেই। পাকিস্তান অধিনায়ক ঠিকই ম্যাচটা শেষ করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন। বাবর একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অন্যপ্রান্তে আব্বাস আফ্রিদি তার অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিংয়ে ২১ বলে ১৭ রান করে বাবরের সঙ্গে ৩৩ রানের একটা জুটি গড়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে একই সঙ্গে ম্যাচের অত্যন্ত জটিল এক সময়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আইরিশদের ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগও করে দিয়েছিলেন। সেটা হয়নি শাহিন শাহ'র জন্য। বল হাতে শুরুটা করেছিলেন জোড়া শিকারে, শেষটা করলেন জোড়া ছক্কায়। বামহাতি স্পিনার ডেলানির বলে একটা ছক্কা মেরেছেন লং অন দিয়ে। এরপর ফের উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে বলে এক করতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন, তালুতে জমাতে পারেননি স্টার্লিং। একবল পর ফের ছক্কা, আবারো লং অনের উপর দিয়ে। বামহাতি স্পিনারকে টেনে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারা দুই ছক্কায় যাবতীয় রোমাঞ্চের সমাপ্তি আর আরো একটি অঘটনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাচসেরা শাহিন।

বাবর আজম
আগ্রাসী মেজাজটা বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি পাকিস্তান।ছবি: Lynne Sladky/AP Photo/picture alliance

জয় আর ছক্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়েছে পাকিস্তানের। তবে এতে করে সুপার এইটের আগেই বিদায় নেয়ার কষ্টটা আড়াল হচ্ছে না বাবর আজমের,' শেষটা ভাল হয়েছে, তবে আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে আমাদের খেলতে দেখতে চায় আমরা সেই ক্রিকেটটা খেলতে পারিনি। উন্নতির অনেক জায়গা আছে। এই ফল (সুপার এইটের আগেই বিদায়) সত্যিই মেনে নেয়া কঠিন, তবে এত কিছুর পরও আমাদের সমর্থন করার জন্য ফ্যানদের ধন্যবাদ'।

ব্যাটিং গোটা আসর জুড়েই ভুগিয়েছে পাকিস্তানকে। একজন মাত্র ব্যাটসম্যান হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন, মোহাম্মদ রিজওয়ান। বোলিংয়ে শৃংখলার অভাব। সব মিলিয়ে পাকিস্তানকে ব্যাটিং ভাবতে হবে নতুন করে। গোটা আসর জুড়েই ফ্লপ হয়ে থাকা ফখর জামান (৪ ম্যাচে ৩৩ রান) কিংবা ৪ ম্যাচে ২০ রান করা উসমান খানরাই কি দেশের সেরা ব্যাটসম্যান, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে নির্বাচকদেরও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড ১০৬/৯; ডেলানি ৩১,লিটিল ২২*, ইমাদ ৩/৮, শাহিন শাহ ৩/২২

পাকিস্তান ১৮.৫ ওভারে ১১১/৭;বাবর ৩২*,শাহিন ১৩*, ম্যাকার্থি ৩/১৫

ফলঃ পাকিস্তান তিন উইকেটে জয়ী

ম্যাচের সেরা-শাহিন শাহ আফ্রিদি