ফাঁসি রদে জার্মানির হস্তক্ষেপ প্রার্থনা
১৮ এপ্রিল ২০১৩১৯৯৩ সালে এক গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অপরাধে তার ফাঁসির আদেশ হয়৷
শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন খালিস্তান লিবারেশন বাহিনীর সদস্য দেবীন্দরপাল সিং ভুল্লার ১৯৯৩ সালে দিল্লিতে এক গাড়ি বোমা বিস্ফোরণকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে, নিম্নআদালতে তার ফাঁসির আদেশ হয় ২০০১ সালে৷ উচ্চ আদালত এবং তারপর সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ বহাল রাখে গত শুক্রবার৷ ঐ বিস্ফোরণে মারা যায় নয়জন এবং আহত হয় ১৭ জন৷ এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল যুব কংগ্রেস নেতা এম.এস বিট্টা৷ তিনি গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে আছেন পঙ্গু হয়ে৷
ভুল্লার ঐ বোমা হামলার পর পালিয়ে যান জার্মানিতে৷ কিন্তু সন্ত্রাসী কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জার্মানি ভুল্লারকে তুলে দেয় ভারতের হাতে ৯৫ সালে৷ গত মঙ্গলবার এক শিখ প্রতিনিধিদল দিল্লির জার্মান দূতাবাসে এক স্মারকলিপি দিয়ে ভুল্লারের ফাঁসি মকুবের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন৷ স্মারকপত্রে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন বিষয়টি সরকার ও রাষ্ট্রপতির কাছে তোলে৷ তাঁদের মতে, পুলিশ তার ওপর অত্যাচার করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল৷ বর্তমানে ভুল্লার মানসিকভাবে অসুস্থ এবং গত প্রায় দু'বছর ধরে তিনি রয়েছেন মানসিক হাসপাতালে৷ দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সর্বসম্মত নয়৷ তিনজন বিচারকের একজন এর বিরুদ্ধে রায় দেন৷
ভুল্লারের ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক৷ আগামী বছরের নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গত মঙ্গলবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন৷ ফাঁসি কার্যকর হলে পাঞ্জাবে এবং অন্যত্র যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এবং পাঞ্জাবে যে শান্তি, শৃঙ্খলা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে সে বিষয়ে তাকে অবহিত করেন ৷
সরকার ভুল্লারের মানসিক পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথা ভাবছে৷ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলের নেতৃত্বে শিখ রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলি প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর সঙ্গে দেখা করে ভুল্লারের ফাঁসি মকুব করার আবেদন জানিয়ে বলেন, ভুল্লার ইতিমধ্যেই নয় বছর ধরে যথেষ্ট শাস্তি ভোগ করেছেন৷ কাজেই তার শাস্তি লঘু হওয়া উচিত৷ ভুল্লারের আইনজীবী রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছেন৷
আদালত মনে করে, ফাঁসি কার্যকরে বিলম্ব হওয়া বা অপরাধীর মানসিক অসুস্থতা শাস্তি মকুবের কারণ হতে পারে না৷ যাঁরা অপরাধীর প্রতি দয়া ও অনুকম্পার কথা বলছেন, তাঁরা কিন্তু অপরাধীর হাতে অন্য যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি এতটুকু অনুকম্পা বা সহানুভূতি দেখাচ্ছেন না৷
ভারতে বিরলতম বিরল অপরাধে ফাঁসি হয়৷ সুপ্রিম কোর্ট ফাঁসির আদেশ দিলেও তা কার্যকর হয় না সময় মতো৷ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন পড়ে থাকে বছরের পর বছর৷ বর্তমানে সরকার একটু কড়া হয়েছে এ বিষয়ে৷ সম্প্রতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি হবার পর, এ যাবৎ ১০ জনের ফাঁসির আবেদন নাকচ করে দেন তিনি৷
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের সন্ত্রাসী হামলা ১৯৮৪'তে শিখ ধর্মস্থান গোল্ডেন টেম্পল-এ সরকারের হানা দেয়ার বদলা হিসেবে দেখা হয়৷ ঐ ঘটনার জের ধরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন তাঁরই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে৷