সাংসদ আসলামুল হকসহ নদী দখলদার ৫৭ হাজার
১৫ ডিসেম্বর ২০২০জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে নদী ও জলাশয় দখলদার ৫৭ হাজার ৩৯০ জন৷ আর এরমধ্যে ঢাকায় আট হাজার ৮৯০ জন৷ সারাদেশে এপর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৭৯ জনকে উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ ঢাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে এপর্যন্ত সাত হাজার ৭৭ জনকে৷ তবে ঠিক কি পরিমান নদী ও জলাশয় দখল হয়েছে তার সঠিক হিসাব তাৎকক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার৷ তিনি বলেন, ‘‘এর পরিমান কয়েক হাজার একর হবে৷''
নদীরক্ষা কমিশন ঢাকা-১৪ (মিরপুর) আসনের সংসদ আসলামুল হকের আবেদনেই তার নদী ও জলাশয় দখলের পরিমান ৫৪ একর বলে হিসাব করেছে৷ আর এই হিসাব হাইকোর্টেও দাখিল করা হয়েছে৷ এরমধ্যে সরাসরি বুড়িগঙ্গা এবং তুরাগ নদী ১৩ একর, নদী বন্দরের (ল্যান্ডিং স্টেশন) সীমার জমি আট একর এবং বাকি জমি ড্যাপের আওতাভুক্ত ফ্লাড ফ্লো জোন৷ নদী দখল করে সেখানে তিনি ‘আরিশা প্রাইভেট ইকোনমিক জোন' এবং ‘ মায়িশা গ্রুপের' পাওয়ার প্লান্ট গড়ে তুলেছেন৷
গত মার্চে বিআইডাব্লিউটিএ উচ্ছেদ করতে গেলে আসলামুল হক বাধা দেন৷ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যান৷ গত সপ্তাহে হাইকোর্ট চূড়ান্ত শুনানি করে উচ্ছেদে কোনো বাধা নাই বলে জানিয়েছে৷
নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, গত সপ্তাহেই তারা বিআইডাব্লিউটিএ, ঢাকা জেলা প্রশাসন ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আসলামুল হকের দখল করা নদী ও জলাশয় উদ্ধার করার জন্য চিঠি দিয়েছে৷ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘উচ্ছেদে যেহেতু কোনো বাধা নাই তাই আমরা দ্রুত উচ্ছেদ শুরু করতে বলেছি৷ তবে অগ্রগতি প্রতিবেদন আমরা পাইনি৷''
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ঢাকার চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলখ্যা নদীর অবৈধ উচ্ছেদ চললেও বিআইডাব্লিউটিএ এমপি আসলামুল হকের অবৈধ দখল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি৷ তারা কারণ হিসেবে আপিল প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷
বিআইডাব্লিউটিএর চেয়াম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ‘‘আমরা গত মার্চেই এমপি আসলামুল হকের নদী ও জলাশয় দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালাই৷ উচ্ছেদও করেছি৷ তবে তার ইকোনমিক জোন ও পাওয়ার প্ল্যান্ট উচ্ছেদের সময় তিনি বাধা দেন এবং আদালতে যান৷''
তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের পর আসলামুল হক এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন৷ তাই আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আছে উচ্ছেদ করা সমীচীন মনে করছিনা৷ তিনি আরো দাবি করেন, বিআইডাব্লিউটিএর উচ্ছেদের দায়িত্ব আট একর, যেখানে নদী দখল করে প্রাইভেট ইকোনামিক জোন ও পাওয়ার প্লান্ট তৈরি হয়েছে৷ বাকি জায়গা উচ্ছেদের দায়িত্ব অন্যান্য সংস্থার৷
২০০৯ সালে নদী রক্ষায় আদেশ দেয় উচ্চ আদালত৷ আর রিটটি করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘আসলামুল হক এখনো আপিল করেননি৷ আপিল করবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন৷ আর হাইকোর্ট বলেছেন উচ্ছেদে কোনো বাধা নাই৷ আমার মনে হচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএ আসলামকে সুবিধা করে দিচেছ৷ প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে তার লোক আছে বলে মনে হচ্ছে৷ যারা নানা অজুহাত তৈরি করছে৷''
নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কমিশনের কথা দেশের যে কোনো সংস্থা মানতে বাধ্য৷ এমনকি সরকারও৷ আসলামুল হকের অবৈধ দখল উচ্ছেদে কোনো বাথা নাই৷ তারপরও বিআইডাব্লিউটিএ যদি শেষ আদালত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার৷''
ঢাকার চারপাশের চারটি নদীতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৯০ ভাগ অবৈধ দখল এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান৷ এর মধ্যে পুরনো ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের একটি কোল্ড স্টোরেজ, একটি গুদাম ও একটি ফিলিং স্টেশনও আছে৷ নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও নোয়াপড়াসহ সারাদেশে উচ্ছেদ অভিযান চলছে৷ নদীরক্ষা কমিশন সারাদেশের যে তালিকা দিয়েছে তা যাচাই বাছাই করেই এই অভিযান বলে তিনি জানান৷ তবে মামলা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু অবৈধ দখলদাদের তারা উচ্ছেদ করতে পারছেন না৷
ঢাকা শহরের চারপাশে উচ্ছেদের পর যাতে আবার নদী ও জলাশয় দখল না হয় সেজন্য ৮৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নও করছে বিআইডাব্লিউটিএ৷ এরমধ্যে রয়েছে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন, ওয়াকওয়ে তৈরি, গার্ডেনিং, পথচারীদের বসার জায়গা ও ছোট ছোট বিনোদন পার্ক৷