স্থবিরতায় আক্রান্ত ভারতীয় সংসদ
৬ আগস্ট ২০১৩হৈ হট্টগোল, সাংসদদের শান্ত করতে স্পিকারের বৃথা চেষ্টা এবং অবশেষে অধিবেশন মুলতুবি৷
সংসদের বাদল অধিবেশনের মেয়াদ ৩০শে আগস্ট পর্যন্ত৷ এই কয়েকদিনের মধ্যে সরকারকে পাস করাতে হবে ৪৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিল, যার শীর্ষে আছে খাদ্য সুরক্ষা বিল৷ ঐ বিল পাস হলে দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ পাবে খাদ্য সুরক্ষার আইনি অধিকার৷ পাবে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য, ১ থেকে তিন টাকা কিলো দরে৷ তিন মাস পরে দিল্লি, মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানসহ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট৷ আগামী বছর সাধারণ নির্বাচন৷ স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য সুরক্ষা বিল সেদিক থেকে ভোট ধরার বড় হাতিয়ার৷ কিন্তু এই বিল পাস হওয়া এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷
উত্তর প্রদেশে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় ইন্ডিয়ান অ্যাডনিস্ট্রেশন সার্ভিসের এক মহিলা অফিসার দুর্গাশক্তি নাগপালকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে মসজিদ ভাঙার অভিযোগে চার্জশিট দিয়েছে রাজ্যের সমাজবাদী সরকার৷ অন্যায় অভিযোগে একজন সৎ মহিলা অফিসারের সাসপেনশনের ঘটনা সংসদের ভেতরে ও বাইরে একটা রাজনৈতিক সংঘাতের চেহারা নিতে চলেছে৷ কংগ্রেস, বিজেপি, বিএসপি ও বামদলসহ অন্যসব রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়৷ কংগ্রেস দুর্গাশক্তির পাশে দাঁড়ানোয়, খাদ্য সুরক্ষা বিলে সরকারের বিপক্ষে দাঁড়াবে বলে হুমকি দিয়েছে সমাজবাদী পার্টি৷ উল্লেখ্য, সংসদে সমাজবাদী পার্টির ২২ জন সাংসদ৷
সংসদের বর্তমান অধিবেশনে এছাড়া রয়েছে জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিল, বিমা ও পেনসন বিল, লোকপাল বিল, তথ্য জানার অধিকার আইনের সংশোধনী বিল, পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন বিল ইত্যাদি৷ অথচ উভয়সভার অধিবেশন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হয়ে যায় এক নাগাড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি, স্লোগান৷ অন্ধ্র প্রদেশ বিভাজনের সপক্ষে ও বিপক্ষে এবং পৃথক বোড়োল্যান্ড গঠনের দাবিতে অধিবেশন তোলপাড়৷ জিরো আওয়ার অর্থাৎ প্রশ্নোত্তর পর্বের পর তাঁদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেয়া হবে বলে স্পিকারের বারংবার আশ্বাসে কেউ কান না দেয়ায়, অধিবেশন মুলতুবি রাখতে হয়৷
নাগরিক সমাজের প্রশ্ন, এভাবে প্রতিবার সংসদের অধিবেশন চলতে না দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা দেশের ভালো করছেন না মন্দ করছেন? সরকারের সমালোচনা করা, সরকারের পদক্ষেপের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া, শুধরে দেয়া সাংসদ বা বিধায়কদের দায়িত্ব ও অধিকার৷ কিন্তু তার জন্য পুরো ইস্যু নিয়ে বিতর্ককালে যুক্তিসহ সরকার ও বিপক্ষ নিজেদের বক্তব্য রাখবেন, এটাই সংসদীয় রীতিনীতি৷ শুধু হৈচৈ করে সভার কাজকর্ম পণ্ড করে সংসদকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখাটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না সুশীল সমাজের কাছে৷ সংসদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা, সাংসদদের দায়বদ্ধতা তলানিতে এসে ঠেকেছে এইসব কারণে – এমনটাই ধারণা আমজনতার৷ গুরুত্বপূর্ণ সব বিল অনেক সময় বিনা আলোচনাতেই তাই পাশ করাতে হয়৷
অভিযোগ, অনেক সাংসদ নির্বাচিত হন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, অর্থ ও পেশিশক্তির বলে৷ অনেকের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, তোলাবাজির অপরাধে মামলা চলছে৷ কেউ কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন৷ সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, দোষী সাব্যস্ত সাংসদ বিধায়করা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলি এককাট্টা৷ তারা এই সংক্রান্ত আইন সংশোধন করতে চলেছে৷ ফলে অদূর ভবিষ্যতে সংসদ আর গণতন্ত্রের পবিত্র মন্দির হয়ে থাকতে পারবে কি?