২০২৪-এর ভালো-মন্দ
রাজনীতি, আইন-আদালত থেকে খেলার ময়দান- কোথায় কী ভালো বা মন্দ ছিল বিদায়ী বছরে? জেনে নিন এ বিষয়ে কে কী বলছেন...
যেমন ছিল আইন-আদালত: শাহদীন মালিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
আপিল বিভাগের পাঁচজন এবং হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। আরো ১২ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷ সরকার বদলের সাথে সাথে সুপ্রিমকোর্টের আইন কর্মকর্তারা, পাবলিক প্রসিকিউটর ও সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্তরাদের জায়গায় প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পাবলিক প্রসিকিউটর ও সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিচারপতি নিয়োগের নতুন আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যেমন ছিল সংবাদমাধ্যম: মাসুদ কামাল, সিনিয়র সাংবাদিক
২০২৪ সালের আন্দোলনের আগে গণমাধ্যমের বিভিন্ন ধরনের নিষেধ থাকতো। কিন্তু এখন বিটিভির মতো প্রতিষ্ঠানে সরকারের সমালোচনা করা যায়, যা আগে সম্ভব ছিল না। আবার মন্দ দিকটা হলো, আগে সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো। নামসর্বস্ব এক ধরনের গণমাধ্যমকে প্রশ্রয় দিতো। এগুলো এখনো রয়ে গেছে৷ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তার সমালোচনা করতে। গণমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে, তবে সেটা বিবেচনায় নিচ্ছে বলে মনে হয় না।
২০২৪-এ মানবাধিকার পরিস্থিতি: নূর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী
শেষ প্রায় পাঁচ মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তার আগে ছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। এ বছর দুই সরকারের সময় মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে- এটা বলার সুযোগ নেই।এখনো দেশে গণপিটুনি, বন্দিদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। কারাগারে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সংখ্যালঘু-নির্যাতন হচ্ছে। এর আগে মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যাকাণ্ডে পুলিশের অংশগ্রহণ আমরা দেখেছি। এখন পর্যন্ত পুলিশ সেই ভীতিকর পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
ক্রীড়াঙ্গনের ভালো-মন্দ: উৎপল শুভ্র, প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক, প্রথম আলো
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করা। আর দ্বিতীয়, ফুটবলে মেয়েদের সাফ জয়। যদিও মেয়েরা আগেরবার চ্যাম্পিয়ন, তবে এবার শিরোপা ধরে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।দুটো খারাপ দিকের প্রথমটা হলো, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা থাকলেও সেই চেষ্টা না করে কোনোমতে জিততে চাওয়া। দ্বিতীয়টা হলো, সাকিব আল হাসানের দেশের মাটিতে টেস্টে অবসর নিতে চেয়েও তা নিতে না পারা।
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ড. মো. ওবায়দুল হক, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু নির্বাচনের পর পশ্চিমাদের হাসিনা সরকারের সাথে কাজ করে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করে সরকারের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা যায়, যা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। অন্তর্বর্তী সরকার খুব দ্রুতই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করছে।
শিক্ষাঙ্গনের হাল: মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শুধু মবোক্রেসির জন্য এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হয়। এটি ছিল মেধাভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি চরম অপমান, যার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করবো। বিদায়ী বছরটিতে মবোক্রেসির কাছে পরাজিত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিল, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তিগুলো ভেঙে দিয়েছে। আমরা ভুলে গেছি বিদ্যা আর শিক্ষার মধ্যকার ব্যবধান।
যেমন ছিল বিনোদন জগত: মাহমুদ মানজুর, আর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট এডিটর, বাংলা ট্রিবিউন
২০২৪ সালের সবচেয়ে পজিটিভ ঘটনা ড. সৈয়দ জামিল আহমেদকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নিয়োগ। সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর অন্যতমও ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের একাধিক বিতর্কিত কার্যক্রম। চাঁদপুরে সেলিম খান ও শান্ত খানকে পিটিয়ে মেরে ফেলা, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পদায়ন ও এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক, ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ ইসরায়েল ইস্যুতে বন্ধ হওয়া এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল গানবাংলা’র সম্প্রচার বন্ধ হওয়া৷
স্বাস্থ্য অঙ্গনে এবছর: ডা. লেলিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
২০২৪ সালে প্রথম থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত যে সরকার ছিল, তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রদর্শন করার মতো কার্যক্রম যতটা করেছে, বাস্তবে ততটুকু নিয়ন্ত্রণ হয়নি। পরবর্তী অন্তবর্তীকালীন সরকার আসার পরেও তারাও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছে তাদের কে ৫ আগস্টের আগে সেবা প্রদান করা কঠিন ছিল৷ পরবর্তীতেও আমরা লক্ষ্য করছি যে সকলকে দ্রুত সেবা প্রদান করা যাচ্ছেনা।