কলকাতায় বাড়ির ছাদ ভেঙে মৃত দুই ভাই
১৮ নভেম্বর ২০২৪রোববার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে এন্টালির কনভেন্ট রোডে। হঠাতই প্রচণ্ড শব্দ করে কনভেন্ট রোডে একটি পরিত্যক্ত কারখানার ছাদের একাংশ ধসে পড়লে মুজিবুর রহমান (৩৪) এবং শাহিদুর রহমান (৪২) নামের দুই ব্যক্তি প্রাণ হারান। নিহতরা দুই ভাই৷ ওই বাড়ির রক্ষী ছিলেন তারা৷
স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ এসে সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই ভাইকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম পরে ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ''বাড়িটিতে আগে রাসায়নিকের কারখানা ছিল। বছর তিরিশ হলো কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।''
মেয়র আরো বলেন, ''কলকাতা পুরসভা আগেই বাড়িটি বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছিল।'' সোমবার (আজ) বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি৷
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র নেতা, পুর প্রতিনিধি সজল ঘোষ বাড়ি ধসে পড়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ছে। পুরসভা কিছুই করছে না।''
জরাজীর্ণ বাড়ি
ডিডাব্লিউর চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউ সোমবার এন্টালির ধসে পড়া বাড়িটিতে যান৷ সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি জানান ''বাড়িটি প্রায় একশ বছরের পুরনো। কিন্তু যেহেতু বহুদিন ধরে অযত্নে পড়েছিল, তাই বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় বড় গাছ গজিয়ে গেছে।''
তিনি আরো জানান, ''কলকাতা পুরসভা অন্তত সোমবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেনি। তবে বাড়ির বাইরে বিপজ্জনক বাড়ির বোর্ড লাগানো আছে। পুলিশ এখন কাউকে বাড়ির ভিতরে যেতে দিচ্ছে না।''
কলকাতার বিপজ্জনক বাড়ি
কলকাতা-জুড়ে এরকম বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। প্রতিবার বর্ষায় বা অন্য সময়ে কয়েকটি বাড়ি ভেঙে পড়ে।
পুরসভা কর্তৃপক্ষ অনেকবার বলেছে সব বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দেবে। অনেক বাড়িতেই মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাস করেন। কিন্তু তারপরেও সেসব বাড়ি ভাঙা হয়নি।
পুরসভার সূত্র ডিডাব্লিউকে জানায়, ''পুরসভার একটা উদাসীনতা আছে এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু সেটাই সব নয়। পুর আইনে বলা হয়েছে, মালিকরা বাড়ি ভাঙলে নিয়মে কিছুটা ছাড় পাবেন। তারা বেশি জায়গা জুড়েও বাড়ি বানাতে পারবেন। কিন্তু তাতে দমকলের আপত্তি আছে।''
সূত্র জানাচ্ছে, ''সেই সঙ্গে আইনি ঝামেলা রয়েছে। ভাড়াটে-মালিক ঝগড়া হলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেন। আর বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলে। ফলে সেই সব বাড়ির কিছু করা সম্ভব নয়। মালিক ও ভাড়াটেরাও এই বিষয়ে কতা শুনতে রাজি হন না।''
সূত্র জানিয়েছে, ''তার উপর আরেকটি সমস্যা আছে। পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফেলে নতুন করে তুলতে গেলেই রাজনৈতিক দাদারা এসে হাজির হন। তাদের দাবি-দাওয়া মেটানোর ক্ষমতা অনেকের থাকে না বা তারা ভয় পান, পরে সেই দাবির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।''
ফলে সবমিলিয়ে সমস্যার মূল অনেক গভীরে চলে গেছে।
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই)