জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ঘর ভেঙে তৃণমূলের অফিস?
৯ নভেম্বর ২০২২জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান। দ্বারকানাথের তৈরি বাড়িটি এখন হেরিটেজ সম্পত্তি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যে অংশে আছে, সেখানে ঘর ভেঙে তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিস করার অভিযোগ উঠলো। জনৈক স্বদেশ মজুমদার কলকাতা হাইকোর্টে এনিয়ে মামলা করেছেন। তার আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে অভিযোগ করেছেন, দুইটি ঘর ভেঙে দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। ওখানে তৃণমূলের শিক্ষাবন্ধু সমিতির অফিস হয়েছে।
শ্রীজীব জানিয়েছেন, যে ঘরে রবীন্দ্রনাথ প্রথম গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করেছিলেন, সেই ঘরই ভাঙা হয়েছে। ঘরটি ব্যবহার করা হতো না। শ্রীজীব বলেছেন, ঘরের দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথের ছবি খুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরছবি টাঙানো হয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এই হেরিটেজ ভবনে কোনো ভাঙচুর করা যাবে না। কোনো নির্মাণ চলবে না। বিচারপতিরা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন। আগামী ২১ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়কে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। বিচারপতিরা বলেছেন, কার নির্দেশে হেরিটেজ ভবন ভাঙা হচ্ছিল, কোনো অনুমতি নিয়ে কি ভাঙা হচ্ছিল, এই সব প্রশ্নের জবাব সেই রিপোর্টে থাকতে হবে।
বিচারপতিরা জানিয়েছেন, এই নির্দেশের পর যেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কোনো অংশ ভাঙা না হয়। যদি ভাঙা হয়, তাহলে রাজ্য সরকার দায়ী থাকবে।
কী বলছেন বুদ্ধিজীবীরা
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূলের শিক্ষাসেল থাকতেই পারে। তারা অফিসও বানাতে পারে। কিন্তু জোড়াসাঁকোর মতো ঐতিহাসিক ভবনে প্রতিটি ঘরের তাৎপর্য আছে। সেই ঘরে এমন অফিস তৈরি অপরাধ। আমার বিশ্বাস, তৃণমূলের শিক্ষাসেলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা ঘরটি ছেড়ে দেবে।''
লেখক ও প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, ''জোড়াসাঁকো একটা হেরিটেজ ভবন তো বটেই, তার সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতি, মননের যে সম্পর্ক তা বোঝার ক্ষমতা থাকলে এই কাজ হতো না।'' ডয়চে ভেলেকে শুভাশিস বলেছেন, ''শিক্ষার রাজনীতিকরণ ও দুর্নীতি নিয়ে নিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। বাম আমলেও হত। কিন্তু এখন যেন সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। জোড়াসাঁকোর ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।''
জিএইচ/এসজি (টিভি৯বাংলা, আনন্দবাজার)