ঝাড়খণ্ড ভোটে বিজেপি-র প্রচারে শুধু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী
৪ নভেম্বর ২০২৪ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন হবে দুই পর্বে, আগামী ১৩ ও ২০ নভেম্বর। আর এই নির্বাচনেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর বিষয়টিকেই তাদের নির্বাচনী প্রচারের প্রধান বিষয়ে পরিণত করেছে বিজেপি। রোববার বিজেপি-র ইস্তেহার প্রকাশ করতে গিয়ে অমিত শাহ ও ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং সোমবার নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী ঝাড়খণ্ডে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মারা অভিযোগ করেছেন, অনুপ্রবেশকারীরা ঝাড়খণ্ডে গিয়ে জনজাতি এলাকায় গিয়ে জনজাতি মেয়েদের বিয়ে করছে। ফলে সাওতাল পরগনায় আদিবাসীদের সংখ্যা কমছে। এই জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোট সরকার অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী, অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতাদের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তিনি বলেছেন, সীমান্তের সুরক্ষা করা, অনুপ্রবেশ যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা তো কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। তারপর তারা এই কথা বলে কী করে?
বিজেপি নেতাদের প্রচার
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের গারোয়াতে নির্বাচনী জনসভায় বলেছেন, ''জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করে। তারা তুষ্টীকরণকে চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে গেছে। তারা কাজ্যের সামাজিক ঐক্য বিগড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভোট পেতে তারা তাদের ঝাড়খণ্ডে এনে বসিয়েছে।''
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ''আদালতে যখন অনুপ্রবেশের বিষয়টি উঠলো, তখন প্রশাসন তা খারিজ করে দিলো। সরকারি মেশিনারিতেও তারা ঢুকে পড়েছে। তারা আপনাদের রোটি, বেটি, মাটি নিয়ে নিচ্ছে। যদি জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডির খারাপ রাজনীতি বন্ধ না হয়, তাহলে জনজাতির সংখ্যা কমবে।''
অমিত শাহ বলেছেন, ''ঝাড়খণ্ডে বিজেপি রোটি, বেটি, মাটি বাঁচানোর ডাক দিয়েছে। কোনো অনুপ্রবেশকারীর সঙ্গে জনজাতির বিয়ে হলে, তাদের সন্তানকে আর জনজাতির স্বীকৃতি দেয়া হবে না।''
অমিত শাহর দাবি, ''একবার বিজেপি সরকার গঠিত হলে মুখ্যমন্ত্রী থেকে নেতা-কর্মীরা সকলেই তাদের অনুপ্রবেশ আটকাবেন। সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাদের ঝাড়খণ্ডের বাইরে তাড়ানো হবে।''
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, ''পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে রাজ্য প্রশাসন মদত দেয়ায় অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়নি।''
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ''আমরা অনুপ্রবেশকারীদের আটকানোর কথা বলায়, ওদের এত গাত্রদাহ হচ্ছে কেন?''
হেমন্ত সোরেনের জবাব
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন মোদী-শাহর অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ''সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব কার? সেই দায়িত্ব তো কেনদ্রীয় সরকারের। তাহলে অনুপ্রবেশ হলে কার জন্য হচ্ছে? এরপরই তিনি বলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে ঢুকে ঝাড়খণ্ডে আসছে।''
মুখ্যমন্ত্রী সোরেন প্রশ্ন করেছেন, ''বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য কেন ঝাড়খণ্ডকে বেছে নেয়া হলো?''
তিনি একথাও বলেছেন, ''আমি জানতে চাই, বাংলাদেশের সঙ্গে বিজেপি-র ভিতরে ভিতরে কি কোনো সমঝোতা আছে? না হলে, ওদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার কেন ভারতে নামতে দেয়া হলো, কেন তাকে ভারতে থাকতে দেয়া হলো?''
হেমন্ত সোরেন এখানে মোদী-শাহর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টিও তুলেছেন। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এই দুইটি বিষয় এক নয়। শেখ হাসিনা একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতে এসেছেন। তখন ভারত সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছিল, তিনি কিছুদিন ভারতে থাকবেন। এই বিষয়টিকে ভোটের ময়দানে টেনে আনা ঠিক নয়।''
কংগ্রেসের বক্তব্য
কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেছেন, ''বিজেপি ঝাড়খণ্ডের ভোটে মেরুকরণ করতে চাইছে। তারা সাম্প্রদায়িক ভাইরাস ছড়াচ্ছে। যেভাবে অমিত শাহ, হিমন্ত বিশ্ব শর্মারা কথা বলছেন, তা থেকে স্পষ্ট, জেএমএম-কংগ্রেস সরকার যে প্রকল্প মানুষের জন্য রূপায়ণ করেছে, তারপর বিজেপি-র আর কিছু বলার নেই। তাই তারা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়াবার চেষ্টা করছে।''
ঝাড়খণ্ডে ভোটের অঙ্ক
ঝাড়খণ্ডের বিধানসভায় মোট আসনসংখ্যা ৮১। ২০২০ সালে জেএমএম পেয়েছিল ৩০টি আসন। কংগ্রেস জেতে ১৬টিতে। বিজেপি জিতেছিল ২৫টি আসনে। বাকি ছোট দল ও নির্দল জিতেছিল।
এই ৮১টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসন সাঁওতাল পরগনায়। যেখানে গতবার বিজেপি পেয়েছিল মাত্র চারটি আসন। জেএমএম পেয়েছিল নয়টি আসন। তার আগের বারের তুলনায় বিজেপি এখানে চারটি আসন হারায়। এই সাঁওতাল পরগনায় জনজাতির সংখ্যা কমছে বলে বিজেপি অভিযোগ করেছে।
শরদ বলছেন, ''এই সাঁওতাল পরগনায় বিজেপি এবার অধিকাংশ আসনে জিততে চায়। সেই লক্ষ্যপূরণ করতে গিয়ে তারা অনুপ্রবেশের বিষয়টাকে এইভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। মোদী-শাহর আমলে বিজেপি যে কোনো প্রচারের ক্ষেত্রেই প্রবল ঝড় তোলে। এভাবে বিষয়টিকে তারা মানুষের মনে গেঁথে দিতে চায়। ঝাড়খণ্ডেও তারা এটাই করতে চাইছে।
তিনি বলেছেন, ''হেমন্ত সোরেনও বিষয়টিকে অবহেলা করতে পারছেন না। তিনিও পাল্টা অভিযোগ করেছেন। ফলে এই আদিবাসী প্রধান রাজ্যে অনুপ্রবেশ ভোটের প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। বিজেপি-ও মনে করছে, তাদের এই আবেগের ইস্যু সামনে আসায় মানুষ তাদের ভোট দেবে।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)