‘আইনজীবীদের সম্মান দিতে হবে, বিচারকদের সম্মানটাও আমরা দেবো’
১৩ জানুয়ারি ২০২৩এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির৷
ডয়চে ভেলে : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারালয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা হয়ত জানেন আপনি৷ বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের সুসম্পর্ক ছাড়া কি সুষ্ঠুভাবে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভব?
মমতাজ উদ্দিন ফকির : না, না৷ একেবারে পরিপূরক৷ বার এবং বেঞ্চের সম্পর্ক মধুর থাকতে হবে৷
এই ধরনের ঘটনায় বিচারকদের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে?
প্রভাবটা ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে৷ এগুলো অনেক সময় টলারেন্সের উপর নির্ভর করে৷ কোনো সময় ভুল বোঝাবুঝি কারণে এটা হতে পারে, পরে এটা ঠিক হয়ে যায়৷ অবশ্যই একজন আরেকজনের পরিপূরক৷
একের পর এক এই ধরনের ঘটনা ঘটছে৷ উচ্চ আদালত একাধিকবার তাদের ডেকে সতর্কও করেছে৷ তারপরও কেন বন্ধ হচ্ছে না এই ঘটনাগুলো?
হবে৷ হয়ত আগেও হয়েছে৷ সবজায়গায় এগুলো আছে৷ পৃথিবীর অন্য জায়গায়ও এটা আছে৷ পরিবারেও এটা হয়৷ আপনার পরিবারেও দেখবেন সবাই একরকম হয় না৷ তার অর্থ এই নয় যে, পরিবার নষ্ট হয়ে যাবে৷
এই ধরনের ঘটনাগুলোতে বিচারপ্রার্থীদের যে দুর্ভোগ তা নিরসনে সুপ্রিমকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই কেন?
ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না- এটা ঠিক না৷ আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিমকোর্ট এটা নিয়ে তো ভাবছে৷ বিচার বিভাগ তো স্বাধীন৷ তারা স্বাধীনভাবে এগুলো নিয়ে চিন্তা করে৷ তারা নিশ্চয়ই এগুলো নিয়ে ভাবছে৷
আদালতের ভেতরের কর্মকাণ্ডের ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে, সেটা কি আইনের লঙ্ঘন নয়?
এখন তো হাতে হাতে মোবাইল ফোন৷ এটা অবশ্যই লঙ্ঘন৷ কোনো ঘটনা ফেসবুকে দেওয়া হলে আরো উত্তেজনার সৃষ্টি করে৷ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগুলো করা হয়৷ এ জন্য কিন্তু বিভিন্ন সময় সতর্কও করা হয়৷ বলা হয়, ‘‘তোমরা এগুলো করো না’’৷ তারপরও করে৷ অনেক সময় দেখবেন রাস্তায় হাঁটছেন, আপনি জানেনও না, আপনার ছবি উঠানো হয়েছে৷ আগে কিন্তু অনুমতি ছাড়া কেউ ছবি তুলতে পারতো না৷ এখন তো এগুলো মানা হচ্ছে না৷ এখন তো হাতে হাতে মোবাইল, রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে৷
বারের নেতারা কি এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে বিচারকদের উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন?
এটা আসলে ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে৷ জুডিশিয়ারিতে যারা আছেন, তারা অবশ্যই চেষ্টা করেন যাতে বিচারপ্রার্থীদের ক্ষতি না হয়৷
বিচারকদের সহনশীল মনোভাবের অভাবেই কি বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে?
এটা সবার ক্ষেত্রে একরকম নয়৷ আমার যে টলারেন্স আছে, আরেকজনের জন্য সেটা হয়ত থাকবে না৷ এটা বিচারবিভাগের বিষয় না, ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে৷ পারসোনাল ইগোর কারণে কেউ কিছু একটা করে থাকতে পারে৷ বিচারকদের মধ্যে সবাই তো দুধে ধোয়া না৷ এটার জন্য আইনজীবীরাও খারাপ না, বিচার বিভাগও খারাপ না৷ সাংবাদিকদের মধ্যেও একজন যেভাবে নম্র-ভদ্রভাবে চলেন, আরেকজন সেভাবে না-ও চলতে পারেন৷ পার্থক্য আছে না?
উচ্চ আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ জন আইনজীবীকে তলব করেছেন৷ এখানে কি আরো কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে উচ্চ আদালতের?
বিচারপতিরা তাদের কথা শুনবেন, তারপর সিদ্ধান্ত দেবেন৷
ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকতে হবে৷ এই সম্পর্ক ভালো থাকলে সবার জন্য ভালো হবে৷ আইনজীবীরা ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে৷ আমার পরামর্শ হলো, সবাই সবার জায়গা থেকে সতর্ক থাকবেন, আইন মেনে চলবেন৷ আইনজীবীদের সম্মানটা তাদের দিতে হবে৷ আর বিচারকদের সম্মানটা আমরা দেবো৷ বুঝতে হবে, একজন আরেকজনের পরিপূরক৷ এর ব্যত্যয় ঘটলে ক্ষতি হবে৷