‘আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে’
৯ জুন ২০২৪শেখ হাসিনার সঙ্গে আরো কয়েকজন সরকারও রাষ্ট্রপ্রধানেরও নয়াদিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে সেখানে। তারাও নরেন্দ্র মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নয়াদিল্লিতে আছেন।
শেখ হাসিনা শনিবারই নয়াদিল্লি গিয়েছে। ফিরে আসবেন সোমবার। এর আগে গত বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে কথোপকথনের সময় তার সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান। শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তারাও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন দুই দিন আগে ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান,‘‘সোমবার শেখ হাসিনা-মোদীর বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন গুরুত্ব পাবে।”
চলতি মাসেই শেখ হাসিনা আবার ভারত সফরে যাবেন। এটা আগেই ঠিক করা ছিলো। তারপর জুলাইয়ে তার চীন সফরের কথা আছে। পররাষ্ট্র সচিব জানান," ওই সফরের ব্যাপারে আমরা আলাদাভাবে কাজ করছি।”
তবে সেই সফরের আগে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠনে শেখ হাসিনার অংশ নেয়া এবং মোদীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকের আলাদা গুরুত্ব আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের কথায়, এটা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেরই ইঙ্গিত। সেটা বাংলাদেশের নির্বাচনের আগেও দেখা গিয়েছে। সামনেও দেখা যাবে।
তবে তারা মনে করেন, ‘‘এর ফলে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে বা বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু সমধানে কতটা কাজে আসবে সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘ভারতে সরকার পরিবর্তন হলে সাধারণত তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে তেমন পরিবর্তন হয়না। আর ভারতে তো ওই অর্থে সরকার পরিবর্তন হয়নি। মোদীই আবার ক্ষমতায়। পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপারে ভারতে একটা সাধারণ কনসেনসাস আছে। আর বাংলাদেশের ব্যাপারে সেটা আরো নির্ধারিত। দলের পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন আসেনা। মানুষের প্রত্যাশা বা চাহিদার ভিত্তিতে হয়তো কোনো জিনিস হাইলাইটেড হতে পারে।”
তিস্তার পানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে মোদীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো জোরদার হয়েছে। ফলে তিস্তা ইস্যুটা হয়তো আরো জটিল হবে। কারণ মমতার সম্মতি ছাড়া তো আর তিস্তা চুক্তি হবেনা।”
বাংলাদেশে কোনো দলের প্রতি মোদী সরকারের বিশেষ আগ্রহ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এখন যে সরকার বাংলাদেশে আছে তারা তো ভারতের বিভিন্ন কনসার্ন অ্যাড্রেস করেছে। সেটা কংগ্রেস বলেন আর বিজেপি বলেন সবারই বাংলাদেশের এখনকার যে সরকার তাদের প্রতি ঝোঁক আছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ভারতে জোট সরকার হলেও মোদীর ক্ষমতার হেরফের হবে বলে মনে হয়না। এর আগেও তো এনডিএ জোট ছিলো। হয়তো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যাপারে মতানৈক্য হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে আগের অবস্থানই বহাল থাকবে।”
আর সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আসলে দুই দেশের কোনো দেশেই সরকার পরিবর্তন হয়নি। ওখানে হয়তো জোট থেকে কয়েকজন মন্ত্রী হবেন। তাতে তো আর বিরাট কোনো পরিবর্তন হয়ে যাবেনা। দুই দেশের সম্পর্ক যেরকম আছে সেরকমই থাকবে।''
তিনি বলেন, ‘‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন ভারতে ক্ষমতায় ছিলো কংগ্রেস। আওয়ামী লীগের এক টার্ম তো ভারতে কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিলো। ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসলো। তখন তো অনেকে ভেবেছিলো মোদী ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগের অনেক অসুবিধা হবে। কোনো অসুবিধা তো হয়নি।''
তার কথায়, ‘‘ভারতের রাজনীতি ভারতের স্বার্থ দেখে। মোদী অথবা মনমোহন সিং যেই ছিলো তারা ভারতের স্বার্থ দেখেছেন। দেখা গেছে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের সুবিধা। তাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো এবং আরো ভালো হবে। এটা তো পরিবর্তন হওয়ার কোনো কারণ নাই।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তিস্তার পানি , সীমান্ত হত্যাসহ আরো অনেক ইস্যু নিয়ে আমরা কথা বলছি। কিন্তু কোনো সমাধান কি হয়েছে? সামনে কতটা হবে আমি সন্দিহান। কারণ এটা আমাদের বার্গেইনিং ক্যাপাসিটির ওপর নির্ভর করে। আমরা কি সেই অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে পারব?”