নিরবে বিদায় নিলেন রুনি
১০ জুলাই ২০১৭১৮ বছর বয়সের সেই উদ্যমী তরুণের কথা মনে আছে? ক্ষিপ্র, অপ্রতিরোধ্য৷ বল নিয়ে ছোটাই যেন তাঁর নেশা৷ এভার্টনের নীল পোশাক ছাড়িয়ে থিয়েটার অফ ড্রিমসে রক্তিম অভিবাদনে তাঁকে সিক্ত করলেন স্যার অ্যালেক্স৷ ঐ অভিবাদনের কি জবাবটাই না দিলেন সেই তরুণ৷ ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফেনাবাচের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে অভিষেক৷ প্রথমার্ধেই নিস্টেলরয়ের বাড়ানো বলটিকে বাঁ পায়ের জোড়ালো শটে জালে জড়িয়ে জানিয়ে দিলেন, ইতিহাস রচনা করতে এসেছেন তিনি৷ এর কিছু পর রায়ান গিগসের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান পায়ে অসাধারণ শট৷ কোনো সুযোগ নেই গোলরক্ষকের৷ দ্বিতীয়ার্ধে স্পটকিক থেকে তৃতীয় গোল৷ তিনটি শটই ডি-বক্সের বাইরে থেকে৷ এ যেন এক স্বপ্নময় অভিষেক৷
এরপরের অংশটুকু শুধু এক ছুটতে থাকা অজেয় ইংলিশ সিংহের গল্প৷ লাল জার্সি গায়ে নামের পাশে লিখেছেন পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি ইউরোপা লিগ, একটি এফএ কাপ, তিনটি লিগ কাপ ও একটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের শিরোপা৷ জুনিয়র হিসেবেই ইংলিশ ফুটবলের সেরার মুকুট পড়েছেন দু'বার, সিনিয়র লেভেলে একবার ২০১০ সালে৷ এছাড়া ফুটবল লেখকদের ভোটেও সেরা নির্বাচিত হয়েছেন একবার৷ গেল মৌসুমেই পেরিয়েছেন ম্যানইউর পক্ষে স্যার ববি চার্লটনের ২৪৯ গোলের রেকর্ড৷ ক্লাবের পক্ষে তাঁর গোল সংখ্যা সর্বোচ্চ ২৫৩টি৷ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘শহুরে শত্রু' ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে শূন্যে ভেসে করা তাঁর সেই বাইসাইকেল কিক গোলটি অবিস্মরণীয় করে রাখবে তাঁকে৷ কোচ ফার্গুসন তো বলেই ফেলেছেন যে তাঁর সাড়ে ছাব্বিশ বছরের ক্যারয়ারে দেখা সেরা গোল এটি৷
গেল কয়েক মৌসুমে কিছুটা ব্রাত্য হয়ে উঠেছিলেন ক্লাব ও সমর্থকদের কাছে৷ তিন তিনবার ক্লাব ছেড়ে দেবারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল৷ যেমন, ২০১০ সালে হঠাৎ করেই ঘোষণা দিলেন যে তাঁকে নিয়ে ক্লাবের ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা সম্পর্কে ‘অনিশ্চিত' তিনি৷ গুজব রটল যে সেই ‘শহুরে শত্রু'র ঘরেই ঠাঁই করে নিচ্ছেন তিনি৷ দু'দিন পরই আবার পুরো ইউটার্ন নিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডেই নতুন চুক্তি করলেন৷ সাপ্তাহিক বেতন বাড়ল দ্বিগুণ৷ প্রশ্ন উঠল, বেতন বাড়াতেই কি তাঁর এই উল্লম্ফন? মনক্ষু্ণ্ণ হলেও মেনে নিলেন সমর্থকরা৷ কিন্তু কিসের কি? আবারো এমন কান্ড করলেন ইংলিশ তারকা৷
২০১৩ সালে স্যার অ্যালেক্সের অবসর গ্রহণের পর নতুন কোচ ময়েসের সঙ্গে ঝগড়া বাধল৷ এবার চেলসিতে চলে যাবার হুমকি৷ এবারও আরেক বাম্পার ডিল তাঁকে থামিয়ে রাখল৷ সমর্থকদের ভালোবাসাও অনেকটা কমতে থাকল৷ সঙ্গে যোগ হলো বাজে পারফরম্যান্স৷ গেল কয়েক মৌসুমে গোলের দেখা পাওয়াটাই যেন কঠিন হয়ে পড়ছিল তাঁর জন্য৷
তবে এত কিছুর পরও ওল্ড ট্রাফোর্ডের সঙ্গে তাঁর ১৩ বছরের সম্পর্ক যেন এক অটুট বন্ধন৷ তাই তাঁর বিদায়ে আবেগঘন এক ভিডিও বানানো হয়েছে ক্লাবের পক্ষ থেকে৷
আর সতীর্থরাও নিরব টুইটারে স্মরণ করছেন তাঁকে৷ জানাচ্ছেন অভিবাদন৷
‘‘ও আমার দেখা ইউনাইটেডের সেরা স্ট্রাইকার৷'' নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে এই টুইটটি করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লিজেন্ড গ্যারি নেভিল৷
ওল্ড ট্রাফোর্ডের আরেক সেনসেশন অ্যান্ডার হেরেরা লিখেছেন, ‘‘একদিন আমি আমার নাতি-নাতনিদের কাছে গল্প করতে পারব যে, আমি তোমার সাথে খেলেছি৷ অনেক শুভকামনা এবং ধন্যবাদ৷''
ক্লাবে থেকে যাওয়া ২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দলের একমাত্র সদস্য মাইকেল ক্যারিক লিখেছেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই তিনি আমাকে মুগ্ধ করেছেন৷ অনন্যসাধারণ৷ চড়াই উৎড়াই ছিল৷ তবে কী অসাধারণ পথচলা! তাঁকে খুব মিস করব৷ শুভকামনা বন্ধু ও লিজেন্ড৷''
বিদায়বেলায় এমনই অশ্রুসজল হয়েছেন নতুন-পুরোনো সতীর্থরা৷
হয়ত ফিটনেস ও কলাকৌশলে মেসি-রোনালদোর কাঁতারে কখনোই দাঁড়াতে পারেননি৷ কিন্তু ফুটবল বিশ্ব জানে, ওল্ড ট্রাফোর্ড জানে, তিনি ক্ষণজন্মা৷ গুডিসন পার্কে যেই নীল জার্সি পড়েছিলেন ছোটবেলায়, যেই জার্সি খুলিয়ে রক্তিম অভিবাদন জানিয়েছিলেন ফার্গি, সেই লাল জার্সি খুলে ৩১ বছর বয়সে আবারো ছেলেবেলার গুডিসন পার্কেই ফিরেছেন এই ইংলিশ মায়েস্ত্রো৷