বিহারে আবার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ, ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশন ৭০টি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। পরীক্ষার্থীদের দাবি, সেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। তাদের দাবি-, আবার পরীক্ষা নিতে হবে।কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী পাটনার গান্ধী ময়দানে সমবেত হন। তারা ঠিক করেন, মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে এই দাবি জানাবেন।
ভোটকুশলী ও জন সুরাজ পার্টির নেতা প্রশান্ত কিশোর এই দাবিকে সমর্থন করেন এবং দলের নেতাদের সঙ্গে তিনি গান্ধী ময়দানে চলে আসেন।
প্রশান্ত কিশোর প্রথমে জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী না হল মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করবেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু তারা জানিয়ে দেন, শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই তারা দেখা করবেন। পরীক্ষার্থীরা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে যেতে যান। তখন পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালায়। জলকামান ব্যবহার করে। ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ পরীক্ষার্থীদের মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে।
পরে পুলিশ প্রশান্ত কিশোর, কয়েকটি কোচিং সেন্টারের মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া কারো নাম উল্লেখ না করে সাতশ জনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বেআইনি জমায়েত, উসকানি দেয়া, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ, বিশৃঙ্খলা তৈরির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রতিবাদ মিছিলের কোনো অনুমতি ছিল না। বারবার বলা সত্ত্বেও পরীক্ষার্থীরা কথা শোনেনি। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
ঘটনার প্রতিবাদ
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, ''যেভাবে পরীক্ষার্থীদের মারা হয়েছে, এই ঠান্ডার মধ্যে জলকামান থেকে ঠান্ডা জল ফেলা হয়েছে, আমরা তার কড়া নিন্দা করছি। আমি ক্ষুব্ধ। আমি পরীক্ষার্থীদের জানাতে চাই, তেজস্বী যাদব আপনাদের সঙ্গে আছে।''
এই ঘটনার প্রতিবাদে বামপন্থি ছাত্র সংগঠন আইসা সোমবার বিহারে ‘চাক্কা জ্যাম', অর্থাৎ পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা পাটনায় ধরনাও দিচ্ছেন।
বিহারে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা
বিহারে প্রশ্নফাঁস কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, নীতীশ কুমারের রাজ্যে নিয়মিত এই অভিযোগ ওঠে। গত ১ ও ২ ডিসেম্বর কমিউনিটি হেলথ অফিসার নিয়োগের জন্য পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের কারণে বাতিল করা হয়। এরপর প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ৩৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাসে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্টের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। গত ২২ নভেম্বর এ নিয়ে পঞ্চম চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই।
রোববার বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরিক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলো।
২০২৩ সালে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২৪ সালে বিহার বিধানসভায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়। তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রশ্নফাঁস
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকদিনের মধ্যে মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরাজি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। মোট ২০ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়। তারা মোবাইলের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস করেছিল বলে অভিযোগ।
উচ্চ মাধ্যমিকে জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হায়ার সেকেন্ডারি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, পরীক্ষা শুরুর আড়াই ঘণ্টা পরে প্রশ্নের প্রতিলিপি ছড়িয়ে যায়। এটা বড় কোনো ব্যাপার নয়।
সারা দেশে সাত বছরে ৭০ বার
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত সাত বছরে ভারতের ১৫টি রাজ্যে ৭০ বার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এক কোটি ৭০ লাখ পরীক্ষার্থী তাতে প্রভাবিত হয়েছেন।
২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় প্রশ্নপত্র ঘটনা ঘটেছে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্টের প্রশ্নপত্র ফাঁসকে কেন্দ্র করে। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এই কেন্দ্রীয় স্তরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা মেনে নেয়। সিবিআই তদন্ত হয়। সেই তদন্তে দেখা গেছে, বিহার থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। পরে তা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র কাজ করে, তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর খবরও প্রকাশিত হয়।
গত সাত বছরে যে ১৫ রাজ্যে ৭০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে আগে রয়েছে, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও গুজরাট। ২০১৫ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে রাজস্থান ও গুজরাটে ১৪বার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে হয়েছে নয়বার।
এরপরেই আছে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহার ও হরিয়ানা।
২০২৪ সালেও প্রশ্নফাঁসের ঘটনা বারবার ঘটেছে। আইন বদল করে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়েও প্রশ্নফাঁস কমানো যায়নি।
জিএইচ/এসিবি (পিটিআই, এএনআই)