ভারতে সরকারি বুলডোজার নীতিকে বড় ধাক্কা সুপ্রিম কোর্টের
১৩ নভেম্বর ২০২৪গত কয়েক বছরে ভারতের একাধিক রাজ্যে বুলডোজার জাস্টিস বা বুলডোজার নীতি রীতিমতো উদযাপন করা হয়েছে। দিল্লি দাঙ্গার সময় এই নীতি পালন করে দিল্লির একটি অংশে একাংশের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। একই ঘটনা বার বার ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষেরবাড়ি, দোকান। আসামে একই ঘটনা ঘটেছে, একই নীতি পালিত হয়েছে মধ্যপ্রদেশে।
বুধবার এ নিয়ে এক মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতে বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানি চলাকালীনই বিচারপতিদের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছিল, তারা রাজ্য প্রশাসনের এই নীতিকে মান্যতা দিচ্ছেন না। বুধবার মামলার রায়ে বিষয়টি তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
আদালত বলেছে, পুলিশ প্রশাসন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারে না। ঘর-বাড়ি বা কোনো অবৈধ কাঠামো ভাঙতে হলে তা করতে হবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। পুলিশ চাইলেই বুলডোজার নিয়ে গিয়ে ঘর-বাড়ি ভেঙে দিতে পারবে না।
বিচারপতি গাভাই জানান, এই মামলা শুনতে গিয়ে সংবিধানের ১৯ এবং ২১ অনুচ্ছেদের সহায়তা নেয়া হয়েছে। সেখানে বাসস্থানের অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বুলডোজার নীতি ওই অধিকারের পরিপন্থী। নিরাপরাধ মানুষকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অসাংবিধানিক।
রায় শোনানোর সময় বিচারপতিরা জানিয়েছেন, যে সমস্ত ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে তারা মনে করেন। আইনের ঊর্ধ্বে উঠে এধরনের কাজ করা হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন দুই বিচারপতি। এরপরেই তারা জানান, ভবিষ্যতে শোকজ নোটিস ছাড়া এই ধরনের কাজ করা যাবে না। শোকজ নোটিস দেওয়ার পর ১৫ দিন সময় দিতে হবে। গোটা বিষয়টি জেলাশাসককে জানাতে হবে। জেল শাসক একজন নোডাল অফিসার ঠিক করবেন, তার তত্ত্বাবধানে পুরো কাজটি করতে হবে। এবিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
গত কয়েক বছরে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, গুজরাতে বার বার বুলডোজার নীতির ব্যবহার দেখা গেছে। সিএএ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই নীতি রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। দিল্লি দাঙ্গার পরেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশ।
যদিও সরকারের তরফে বার বার বলা হয়েছে, আন্দোলনের জন্য নয়, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অভিযোগ উঠেছে, সরকারের বিরোধিতা করার জন্যই এই কাজ করা হয়েছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা পর তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাম নেত্রী বৃন্দা কারাট। দিল্লিতে বুলডোজার জাস্টিসের বিপক্ষে বার বার সওয়াল করেছেন তিনি। এদিন তিনি বলেছেন, ''আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আরো আগে এই রায় এলে আরো কিছু মানুষের বাসস্থানের অধিকার রক্ষিত হতো। বুলডোজার নীতি যে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, আজ তা আবার স্পষ্ট হলো।''
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)