1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করার আলোচনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা৷ প্রধান উপদেষ্টা এমন কথায় রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা পক্ষে-বিপক্ষে মত দিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/4ofQh
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ছবিছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৭ ডিসেম্বর ‘জাতীয় সংলাপ-২০২৪'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত৷'' তিনি বলেন, ‘‘তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি৷ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী৷ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত৷'' তবে যেকোনো সংস্কারের ব্যাপারে তিনি জাতীয় এবং রাজনৈতিক ঐক্যমতের কথা বলেন৷

তার এমন কথার ব্যাপারে প্রেক্ষিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷ রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, এটি নির্বাচনের আয়োজনের ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ করবে৷ তাই এই ধরনের সংস্কার নির্বাচিত সরকার করতে পারে৷ আর ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর করার সঙ্গে আরো অনেক বিষয় জড়িত, যেগুলো সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে জড়িত৷ বাংলাদেশে ভোটার হওয়া,  নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াসহ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও  রাষ্ট্রপতি হওয়ার বয়স সংবিধান দ্বারা নির্ধারত৷

অবশ্য সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এর আগে বলেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর নির্ধারণের চিন্তা রয়েছে৷ আলী রিয়াজের এমন বক্তব্যের পর তেমন কোনো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি৷ 

তবে প্রধান উপদেষ্টার কথার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, ‘‘এখন তাহলে কী করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে৷ আমি মনে করি, এ বিষয়কে এভাবে না বলে, এ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তার পরে এ বিষয় আনতে পারলে ভালো হতো, কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না৷ এখন তো আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা সরকারের প্রধান নির্বাহী, তিনি বলে দিচ্ছেন, ১৭ বছর হলে ভালো৷ যদি এক বছর কমাতে চান, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক৷ প্রধান উপদেষ্টা যখন বলে দেন, তখন চাপ তৈরি হয় নির্বাচন কমিশনের জন্য৷’’

আগামী ৩ জানুয়ারি প্রধার উপদেষ্টার কাছে ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন' প্রতিবেদন জমা দেবে৷ ওই কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘‘আমরা ভোটারদের বয়স নিয়ে কোনো  সুপারিশ করছি না৷ এটা আমাদের কাজও নয়৷ সংবিধানেই ভোটারদের বয়স এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স নির্ধারণ করা আছে৷ এব্যাপারে কোনো সুপারিশ থাকলে সংবিধান সংস্কার কমিশনের থাকতে পারে৷’’

বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদ সদস্য ২৫ এবং রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৩৫ বছর বয়স হতে হবে৷ আর প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা অন্যান্য পদের জন্য সংসদ সদস্য হওয়ার বয়স মানে সর্বনিম্ন ২৫ বছর হলেই চলবে৷ ভোটাধিকারের জন্য সর্বনিম্ন ১৮ বছর৷

বাংলাদেশে ভোটার হওয়া বয়স একটু বেশি হওয়া উচিত: ড. জাহেদ উর রহমান

১৭ বছর হলে ভোটার কত বাড়বে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর সংখ্যা এক কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০৷ ১৭ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা আলাদা করে প্রতিবেদনে নেই৷ তবে গড় হিসাবে ১৭ বছর বয়সির সংখ্যা ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩০৷

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৭৷ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন৷ পাঁচ বছরে ভোটার বৃদ্ধি পায় এক কোটি ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৬ জন৷ বছরে ভোটার বৃদ্ধি পায় ৩১ লাখের বেশি৷

বিবিএস ও নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটারের বয়স ১৭ নির্ধারণ করলে ৩০ লাখের বেশি মানুষ ভোটার হওয়ার যোগ্য হবে৷ প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষদিকে নির্বাচন হলে দুই বছরে আরও ৬০ লাখের বেশি তরুণ যোগ হবেন ভোটার তালিকায়৷ বয়স কমিয়ে ১৭ করা হলে প্রায় এক কোটি নতুন ভোটার যোগ হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে৷

ভোটার হওয়ার বয়স কোন দেশে কেমন

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সীরা শিশু৷ তাই যেসব দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, এর অধিকাংশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮৷

তবে  বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এবং তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় কিছু দেশে ভোটার হওয়ার বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর৷ আবার ১৮ বছরেরর কমও আছে৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ বলছে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় ভোটার হওয়ার বয়স ১৬৷ আর্জেন্টিনায় ১৫ বছর বয়সীরাও প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিতে পারে, যদি নির্বাচনের সময় ১৬ বছরে উত্তীর্ণ হয়৷ যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসে ভোটের বয়স ১৮৷ তবে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারে৷  গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, নেপাল, সুদান, পূর্ব তিমুরে ভোটের বয়স ১৭ বছর৷ বসনিয়া ও সার্বিয়ায় কর্মজীবী হলে ১৬ বছর বয়সীরাও ভোট দিতে পারে৷ কিউবা, ইকুয়েডর, মাল্টায় ভোটের বয়স ১৬৷

রাজনৈতিক দলগুলো কী ভাবছে

ভোটারদের বয়স বাড়ানোর বিসয়ে বিএনপি মূলত সময় ক্ষেপণের দিক নিয়েই বেশি চিন্তিত৷ দলটি মনে করছে, ১৭ বছর করা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ এর সঙ্গে আরো অনেক সংস্কার যুক্ত৷ সেটা  হলে তারা যে দ্রুত নির্বাচন চায় সেটা বিলম্বিত হবে৷

সেইসাথে ভোটের হিসাবও করছে তারা৷ কারণ এখনকার যে ভোটের হিসাব, তাতে নির্বাচনে বিএনপির কোনো সংকট বা আশাহত হওয়ার কারণ নেই৷ কিন্তু ১৭ বছর হলে যে এক কোটি নতুন ভোটার হবে তারা কোন দিকে যাবে সে ব্যাপারটি তাদের জন্য ভাবনার৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘‘এখন ১৭ করা হলে আরেক গ্রুপ বলবে ১৬ বছর কেন নয়? তখন নানা দিক থেকে নানা দাবি উঠবে৷ নানা ধরনের আন্দোলন শুরু হবে, যা একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করবে৷ অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে৷ আর তাতে সামনের নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে৷ আমরা সেটা চাই না৷’’

‘‘আর ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের তো বাংলাদেশে শিশু মনে করা হয়৷ আমরা শিশুদের ভোটাধিকার দেব কী না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷ যদি ১৭ বছর করার প্রয়োজন হয় তাহলে নির্বাচিত সরকার সেটা সংসদে আলোচনা করে দেখতে পারে৷ সংবিধান এবং আইনের  সংস্কারের যদি প্রয়োজন হয় সেটা নির্বাচিত সরকার দেখবে৷''

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, ‘‘নির্বাচনসহ নানা ধরনের সংস্কারের জন্য কতগুলো কমিশন কাজ করছে৷ তারা এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেনি৷ বসবে কী না জানি না৷ কিন্তু ওই কমিশনের প্রস্তাবের আগেই যদি প্রধান উপদেষ্টা ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ বছরের কথা বলেন তাহলে এটা কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে৷ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হয়ে এই চাপ দেয়া ঠিক হয়েছে বলে আমি মনে করি না৷''

‘‘আসলে ভোটারের বয়স ১৭ করতে হলে আরো অনেক পরিবর্তন লাগবে৷ এটা সময় সাপেক্ষ৷ এখন অনেক নন -ইস্যুকে ইস্যু করে এই সরকারের যে মূল কাজ তা থেকে তারা দূরে সরছে৷ আমাদের দরকার নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ৷ সংবিধানকে সামনে রেখে সেই দিকে তাদের মনোযোগ দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি,'' বলেন তিনি৷

১৭ বছর করার প্রয়োজন হলে নির্বাচিত সরকার সেটা সংসদে আলোচনা করে দেখতে পারে: আসাদুজ্জামান রিপন

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামির  প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘‘ভোটারের বয়স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে ১৭ বছরের কথা বলেছেন সেটা নিয়ে আমরা দলীয়ভাবে আলোচনা করিনি৷ ফলে দলের পক্ষ থেকে কোনো মতামত এখনো দেয়া সম্ভব নয়৷ তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ৷ আগের  সময়ের চয়ে ম্যাচিউরিটি এবং সচেতনতা কম বয়সেই আসে৷ ফলে ১৭ বছর বয়সে ভোটার করা যেতে পারে৷''

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘বিশ্বের কিছু কিছু দেশে ১৭ বছর বা তার কম বয়সেও ভোটাধিকার আছে৷ এটা একেক দেশ একেক প্রেক্ষাপটে করেছে৷ আমাদের দেশে ১৮ থেকে এক বছর কমিয়ে ১৭ হতে পারে বলে আমি মনে করি৷ প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, আমার বিবেচনায় সেটা হতে পারে৷’’

তার কথা, ‘‘জেন জেড-এর যে ডেফিনেশন তাতে ১৭ বছর বয়সীরা তাদের ভালো মন্দের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ তারা রাজনৈতিব সিদ্ধান্ত নিতেও সক্ষম বলে আমি মনে করি৷  তবে ভোটার হওয়ার বয়স সর্বনিম্ন ১৭ বছর বললেই তো হয়ে যাবে না৷ এটার জন্য সময় লাগবে৷ সংবিধান ও আইনের পরিবর্তন করতে হবে৷''

এদিকে অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, গ্লোবালি এখন সবাই ১৮ বছরের নিচে শিশু হিসেবে বিবেচিত৷ আমাদের দেশেও আইনে যারা ১৮ বছরের নিচে যারা তাদের শিশু মনে করি৷ তাদের আমরা জেলে নিই না, সংশোধনকেন্দ্রে পাঠাই৷ বাংলাদেশে ভোটার হওয়া বয়স একটু বেশি হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি৷ কারণ এখানে পলিটিক্যাল ডিনামিকসটা বেশ জটিল৷ আর প্রার্থীর বয়স কমানোর ব্যাপারেও কথা হচ্ছে৷ বড় বড় দেশে আমরা ৩০ বছর বা তার কম বয়সেও প্রধানমন্ত্রী হতে দেখেছি৷ ওইসব দেশে সহজ৷ কারণ সেখানে সব কিছু সিস্টেমেটিক৷ ফলে দেশ চালানো সহজ৷ কিন্তু বাংলাদেশে এত সহজ নয়৷ এখানে সিস্টেমের সমস্যা আছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান