যাদবপুরে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দেবে এআই?
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হোস্টেলে এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে তুমুল শোরগোল হয়। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, গত ৯ আগস্ট মৃত্যুর আগে নাবালক ছাত্রটি হোস্টেলেই র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে মোট ১৩ জন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কমিটি তদন্ত হাতে নেয়।
সেই তদন্তের ভিত্তিতে কমিটি সুপারিশ করেছে, ছাত্রমৃত্যুতে মূল অভিযুক্ত চার আবাসিক পড়ুয়াকে আজীবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। এই চারজনই মেন হোস্টেলে থাকতেন। এদের নাম দীপশেখর দত্ত, মনোতোষ ঘোষ, মহাম্মদ আরিফ ও সত্যব্রত রায়।
আরো কয়েকজন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে অভ্যন্তরীণ কমিটি। ছয় জন প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে এফআইআর করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে।
৩১ জনকে কয়েকটি সেমিস্টারে সাসপেন্ড করার কথা বলেছে কমিটি। পাঁচ জনকে চারটি সেমিস্টার, ১১ জনকে দুটি ও ১৫ জনকে একটি সেমিস্টারের সাসপেন্ড করার সুপারিশ দিয়েছে কমিটি।
এই সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কী পদক্ষেপ নেবে, তা স্থির হবে কর্মসমিতির বৈঠকে। অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ জানিয়েছেন, চলতি মাসেই কর্মসমিতির বৈঠক ডাকা হবে। তার আগে র্যাগিং বিরোধী কমিটি বৈঠকে বসবে।
সুরক্ষার তোড়জোড়
ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ইতিমধ্যে একাধিক দফায় তারা যাদবপুর পরিদর্শন শেষ করেছে। ক্যাম্পাসের কোন 'জোন' ও গেটে সিসিটিভি বসানো যাবে, তা খতিয়ে দেখছে ইসরো। ভাবনা রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন বা আরএফডিআই-এর মতো প্রযুক্তি কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ফেসিয়াল রেকগনিশন বা মুখ চিহ্নিতকরণ, পড়ুয়াদের ক্লাউড ডেটাবেস তৈরির ব্যাপারে কথা হয়েছে।
এই পরিকল্পনা রিপোর্টের আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশ করা হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন কর্তৃপক্ষ। অন্তর্বর্তী উপাচার্য বলেন, "অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো একই ধাঁচে হবে না এখানকার সুরক্ষার আয়োজন। ইসরোর প্রতিনিধিরা দেখেছেন কোন জ়োন বেশি সুরক্ষিত, কোন জ়োন তুলনামূলক কম সুরক্ষিত।"
ইসরোর কাছ থেকে মূলত প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চাইছেন তারা। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে যে সময় লাগবে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন উপাচার্য।
ইউজিসি-র প্রশ্নের মুখে
পড়ুয়ার মৃত্যুর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র প্রশ্নের মুখে পড়েছেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। র্যাগিং বিরোধী কমিটি কেন এই প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় নয়, সেই প্রশ্ন ফের তুলেছেন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ইউজিসি জানতে চেয়েছে, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের বসবাসের ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের পৃথক হোস্টেলে রাখার কথা। যদিও যাদবপুরে সেই নিয়ম মানা হয়নি।
যাদবপুরের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, "শুধু যাদবপুর নয়, গোটা রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ডামাডোলের মধ্যে রয়েছে। রাজ্য, রাজভবন সেদিকে নজর দিচ্ছে না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই। সব জায়গায় অস্থায়ী উপাচার্যও নেই। যাদবপুরে যাকে নিযুক্ত করা হয়েছে, ইউজিসির মানদণ্ড অনুযায়ী তার নূন্যতম যোগ্যতা নেই। তা হলে নিয়ম মেনে সঠিক পদক্ষেপ কে নেবে?"
আদালতের নির্দেশ
ছাত্রের মৃত্যুর পর দাবি উঠেছিল, ছাত্রাবাস থেকে প্রাক্তনীদের বার করে দেওয়া হোক।এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম বলেছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পড়ুয়াদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হোস্টেল ছাড়তে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই।
কর্তৃপক্ষ শুধু প্রাক্তনীদের বার্তা দিয়ে ক্ষান্ত থাকলে হবে না। হাইকোর্ট এমনও নির্দেশ দিয়েছে, কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের প্রতিটি ঘরে যেতে হবে। ঘর খালি করার কথা বলতে হবে। প্রথম বর্ষের ছাত্রটির মৃত্যুর পরও আদালতকে ঘর খালি করানোর নির্দেশ দিতে হচ্ছে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ছাত্রমৃত্যুর প্রায় এক মাস পরেও কেন কর্তৃপক্ষ সাবেক ছাত্রদের হোস্টেলে থাকতে দিয়েছেন?
নানা বিষয়ে এভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন যাদবপুরের কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্সির সাবেক অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "অভ্যন্তরীণ কমিটি রিপোর্ট দিতে এতো সময় নিল কেন? কর্তৃপক্ষ সময়সীমা বেধে দিতে পারতেন যে, কোন তারিখের মধ্যে সুপারিশ জানাতে হবে। সিসিটিভি বসানো, প্রাক্তনীদের হোস্টেলে রাখার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া যেত। তা হলে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।"