যেখানে সেখানে ফেলবেন না প্লাস্টিক বোতল!
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা হল, এটা সহজে ভাঙে না৷ জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান পুরোনো পিইটি বোতল থেকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য একরকমের দানা তৈরি করেছে, যা থেকে প্লাস্টিকের পুরো বোতল তৈরি করা যাচ্ছে৷ প্রতিদিন এমন চারশ' বেল বর্জ্য আসে এখানে৷ একেকটা বেলের ওজন আড়াইশ' কেজি৷ প্রতিটিতে থাকে ১০ হাজার বোতল৷ খরচও আছে৷
কোম্পানির নাম আরসিএস কাঁচামাল ব্যবহারকারী কোম্পানি৷ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলেক্সান্ডার রিমার বলেন, ‘‘যেহেতু এটি উচ্চমান সম্পন্ন কাঁচামাল, আমাদের এসব বেলের জন্য টনপ্রতি প্রায় তিনশ' থেকে পাঁচশ' ইউরো খরচ করতে হয়৷''
প্রথমে বেলগুলো খুলে কনভেয়ার বেল্টে বোতলগুলো দেয়া হয়৷ এখানে যা আসে সবই পিইটি বোতল৷
প্রথমে রঙ ও উপাদান মাফিক বোতলগুলো আলাদা করা হয়৷ এই সিস্টেম পিইটি বোতল বাদে বাকি সবকিছু চিনে ফেলে এবং আলাদা করে দেয়, যেমন বোতলের মোড়ক বা থলে৷
এরপর ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে টুকরো করে ধুয়ে ফেলা হয়৷ এই প্লাস্টিকের রাসায়নিক নাম হল পলিইথিলিন টেরেফথালেট৷ এখানেই পিইটি ফ্লেক্স তৈরি করা হয়৷
এই ফ্লেক্সগুলোকে সবশেষ আরেকবার আলাদা করে পরিষ্কার করা হয়৷ প্রক্রিয়াটিকে ঠিকঠাক চালানোর জন্য যন্ত্রগুলোকে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের টুকরো স্ক্যান করতে হয়৷ ফ্লেক্সগুলোকে একটি লেজার রশ্মি সেকেন্ডে লাখ দশেকবার আঘাত করে৷ সেন্সরে তখন ময়লা কণাগুলো ধরা পড়ে৷ এরপর যন্ত্র তা পরিষ্কার করে নেয়৷
জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলের কোম্পানি ইউনিসেন্সর এই যন্ত্রের উদ্ভাবক৷ এর প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন অপটিওইলেকট্রনিক্সের একজন প্রফেসর৷ তার মেয়ে স্টেফানি ক্রিগ এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷
‘‘ফ্লেক্সগুলোর ওপর লেজার আঘাত করে৷ ফ্লেক্সগুলো তখন লেজারের শক্তি শোষণ করে এবং আবার বিকিরণের মত সেই শক্তি পরিবেশে ছাড়ে৷ এই শক্তি আবার যন্ত্রে প্রবেশ করে এবং স্পেক্ট্রোমিটারে তা মাপা হয়,'' বলেন স্টেফানি৷
তারা ১০০টিরও বেশি এমন সিস্টেম বিক্রি করেছেন এবং সামনে আরো বিক্রি করবেন৷ কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু বোতল নয়, দইয়ের কৌটার মত প্লাস্টিক পণ্যেও রিসাইকেল করা পিইটির ব্যবহার বাড়াতে চাইছে৷
শিল্প প্রকৌশলী স্টেফানি ক্রিগের ভাষায়, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ ভাগ ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ ভাগ পণ্য পুনর্ব্যবহার করতে চাইছে৷ এমনকি খেয়াল করলে দেখবেন, ২০১৯ সাল থেকেই এমন যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে৷''
রিসাইকেল যন্ত্রে পিইটি ফ্লেক্সগুলোকে প্রচণ্ড চাপে ও ২৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গলানো হয়৷ এখান থেকেই প্লাস্টিকের দানা তৈরি করা হয়৷
তারা এগুলো বিক্রি করেন এবং এগুলো থেকে নতুন বোতল তৈরি করা হয়৷ এরপর এগুলোকে কয়েকবার রিসাইকেল করা হয়৷ বোতল ছাড়াও অন্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে কি এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না?
আলেক্সান্ডার রিমার বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ হল, আমাদের এখন এমন পদ্ধতি আছে, যাতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুরোটাই ফেরত পাওয়া সম্ভব৷ তার মানে অন্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার সম্ভব৷''
বিরাট থলেতে করে প্লাস্টিকের দানাগুলো বোতল প্রস্তুতকারকদের দেয়া হয়৷
এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিকের বোতলে নতুনের চেয়ে খরচ একটু বেশি পড়ে৷ তবে পরিবেশগত বিধিনিষেধের কারণে এখন পুনর্ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এই কোম্পানিটি নতুন রিসাইকেল প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা করছে৷
বোতলের ক্ষেত্রে রিসাইক্লিং ভাল কাজ করছে৷ যদি নিত্যদিনের বর্জ্যের পাহাড় থেকে মুক্তি পেতে হয়, তবে অন্য পিইটি পণ্যেও এই প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে হবে৷
ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/জেডএ