1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের আজ ও আগামী

৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ঢাকা সফরে দুই পক্ষই নানা বিষয়ে সমর্থন লাভের আশা করছে। রাশিয়ার সমর্থন লাভের বিষয় থাকবে ইউক্রেন, আর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আগামী নির্বাচন নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান।

https://p.dw.com/p/4W4QX
ঢাকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ
ঢাকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিশ্লেষকেরা বলছেন এটা দ্বিপাক্ষিক এবং রাজনৈতিক সফর। এখনকার বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ভ্লাদিমির পুতিনের খুবই নির্ভযোগ্য এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধের পর  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করছেন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নীতির পক্ষে সমর্থন লাভের জন্য। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের ওপর ভালোভাবেই নজর রাখছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । তাই বাংলাদেশের উচিত হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মাথায় রেখে নিজেদের স্বার্থের দিকে নজর রাখা।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন একদিন আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,"আন্তর্জাতিক বিশ্বে সাম্প্রতিক  যেসব কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সার ও জ্বালানি নিরাপত্তা, স্যাংশন, আমাদের যে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা তুলে ধরব। রাশিয়াকে আমরা নিশ্চয়ই অনুরোধ করতে পারি যেন দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যায়।'' জানা গেছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানানো হতে পারে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতার সময় ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়ে  বলছিল,"কিছু দেশ, যারা নিজেদের ‘উন্নত গণতন্ত্র' বলে দাবি করে, তারা অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শুধু হস্তক্ষেপই করে না, এমনকি ব্ল্যাকমেইলও করে।” আর রূপপুরে বাংলাদেশের বৃহৎ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে রাশিয়ান বিনিয়োগে।

‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাশিয়া একটা বড় ভূমিকা নিতে পারে’

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম রাশিয়ান কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। এর আগে আরো দুইবার সফরের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানাগেছে  এই সফরে কোনো চুক্তি সই না হলেও দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই আলোচনা হবে। বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে  রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা। রূপপুরের অর্থ পরিশোধও আরেকটি ইস্যু, আগে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশকে এখনই অর্থ পরিশোধ না করতে। এরপর আর এ বিষয়ে কথা আগায়নি৷ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে রাশিয়ার সমর্থন চাওয়া হবে। এছাড়া প্রতিরক্ষা, সার ও গম আমদানি নিয়ে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাশিয়ায় প্রায় ৬৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, একই সময়ে বাংলাদেশ আমদানি করেছে প্রায় সাড়ে ৪৭ কোটি ডলারের পণ্য।

রাশিয়ার দিক থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় আটকে থাকা তাদের জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়ার অনুরোধ থাকবে বলে জানা গেছে। তাদের দিক থেকে প্রধানত চারটি ইস্যুর কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে অর্থনীতি ও বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সহযোগিতা ও সমর্থন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন শুক্রবার। ওইদিনই তিনি ভারতের দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়বেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক মনে করেন, "এই সফরে দুই দেশেরই রাজনৈতিক প্রত্যাশা আছে। এটা কিছুটা রাজনৈতিক সফর। তবে বাংলাদেশের সতর্ক থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, "রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে।  এটা উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিষেধাজ্ঞার কারণে পেমেন্টে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু  সেটার উপায় বের করতে গিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া যাবে না। এই সরকার আগামী নির্বাচনে তার অবস্থানে রাশিয়ার সমর্থন চাইবে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক নানা ফোরামে বাংলাদেশের সমর্থন চাইবে রাশিয়া। এই বিষয়ে বাংলাদেশের আগের অবস্থানেই থাকতে হবে। কোনো পক্ষে না গিয়ে শান্তির পক্ষে অবস্থান নেয়াই যথার্থ হবে।”

‘রাশিয়ার সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তিতে যাওয়া ঠিক হবে না’

তার কথা, "রাশিয়ার সঙ্গে এখন  বাংলাদেশের নতুন কোনো ইনভেস্টমেন্ট বা চুক্তিতে যাওয়া ঠিক হবে না। এখন শুধু আগের অর্থনৈতিক বিষয়গুলো যাতে সহজ করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।”

তিনি বলেন,"মার্কিন প্রেসার রিলিজের জন্য এমন কিছু বাংলাদেশের জন্য করা ঠিক হবে না যাতে বাংলাদেশের জন্য কোনো সংকট হয়।”

এদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এই ধরনের সফরের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখে। কোথায় কী হয় সব তথ্য তাদের কাছে থাকে। তবে আমাার মনে হয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রোহিঙ্গা ইস্যু,  গম ও সার আমদানিই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে রাশিয়া আগেই বলে দিয়েছে যে এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এবার হয়তো সরকার আশা করতে পারে রাশিয়া সেটা আবার বলুক। আর রাশিয়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সমর্থন চাইবে। তবে এসব বিষয়ে  সরকার নিশ্চয়ই বাংলাদেশের স্বার্থের দিকে নজর রাখবে”।

তার কথা,"রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে রাশিয়া একটা বড় ভূমিকা নিতে পারে। চীনের তো একটা উদ্যোগ আছে। মিয়ানমারকে অস্ত্রসহ নানা ধরনের সহায়তা করে রাশিয়া। আমরা যদি রাশিয়াকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা নেয়ার জন্য রাজি করাতে পারি তাহলে সেটা অনেক বড় কাজ হবে।”