1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্দোলনের ঝড় ও শাকিব খানের তুফান-এর বছর

জনি হক ঢাকা
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

চলচ্চিত্র, ওটিটি, নাটক, গানসহ বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনে ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাস ছিল মোটামুটি আশাব্যঞ্জক।

https://p.dw.com/p/4oeiV
তুফান
২০২৪ সালের অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে ব্যবসার নিরিখে সুপারহিট হয়েছে ‘তুফান'ছবি: Alpha-I studios

কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বন্যার কারণে বছরের দ্বিতীয় ভাগে সেই আশার গুড়ে বালি!

বিদায়ী বছরে ঢালিউডের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ানে হতাশার পাল্লাই ভারী। চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৯টি ছবি। হিসাব কষে দেখা গেছে, একদশক ধরে বছরে ঢাকাই ছবি মুক্তির সংখ্যা গড়ে অর্ধশত। ২০২৩ সালে ৫২টি, ২০২২ সালে ৫০টি, ২০১৯ সালে ৪৫টি, ২০১৮ সালে ৫০টি, ২০১৭ সালে ৫৮টি, ২০১৬ সালে ৫৯টি ও ২০১৫ সালে ৬৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। মাঝে করোনার কারণে ২০২০ সালে ১৪টি ও ২০২১ সালে ৩০টি ছবি মুক্তি পায়।

বার্ষিক হিসাবনিকাশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে ব্যবসার নিরিখে সুপারহিট হয়েছে কেবল ‘তুফান'। রায়হান রাফী পরিচালিত ও শাকিব খান অভিনীত ছবিটি দর্শককে হলমুখী করে রমরমিয়ে চলেছে। স্টার সিনেপ্লেক্সে টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে বছরের সেরা ১০ চলচ্চিত্রের তালিকায় হলিউড-বলিউডকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে ‘তুফান'। অভিজাত মাল্টিপ্লেক্সটির সব শাখা মিলিয়ে গত ১২ মাসে যত দর্শক ছিলেন, তাদের ২৫ শতাংশই দেখেছেন এই একটি ছবি। টিকিট বিক্রিতে সেরা পাঁচ অ্যাকশনধর্মী ছবির তালিকায়ও সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শিত হলিউডের ছবিগুলোকে টপকে এক নম্বরে রয়েছে আলফা-আই স্টুডিওজ প্রযোজিত ‘তুফান'।

স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ ডিডাব্লিউকে বলেন, "স্টার সিনেপ্লেক্স গত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ‘তুফান'। এর আগে কোনো বাংলা ছবি এতটা ব্যবসাসফল হয়নি। সিনেপ্লেক্সে এ বছর টিকিট বিক্রিতে বলিউডকে তো বটেই, হলিউডের ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রগুলোকে ছাপিয়ে গেছে বাংলা ছবিটি।”

স্টার সিনেপ্লেক্স
স্টার সিনেপ্লেক্স গত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ‘তুফান'। এর আগে কোনো বাংলা ছবি এতটা ব্যবসাসফল হয়নি।ছবি: Johny Hoque/DW

জানা গেছে, ২০২৪ সালে স্টার সিনেপ্লেক্সের পর্দায় চলচ্চিত্র দেখে দর্শকরা সবাই মিলে পার করেছেন ১০ কোটি ৮৪ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ মিনিট! এরমধ্যে ২২ জুন ছিল সবচেয়ে বেশি দর্শক। সেদিন তারা ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬৮০ মিনিট ছবি দেখেছেন। তখন চলছিল ‘তুফান'। গত ১৭ জুন ঈদুল আজহায় মুক্তি পায় এটি। শাকিবিয়ানদের উন্মাদনা, বড় ক্যানভাস, নির্মাণে মুন্সিয়ানা, শ্রোতাপ্রিয় গান, দারুণ ভিএফএক্স ও ব্যাপক প্রচারণার সুবাদে এমন অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে ছবিটি।

বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল মনে করেন, মানসম্পন্ন আর পছন্দসই উপাদান না থাকলে গাঁটের পয়সা খরচ করে ছবি দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে দর্শকরা ভিড় করবে না। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিনেপ্লেক্সসহ এখন দেশে ১০০টি প্রেক্ষাগৃহ আছে। এছাড়া ‘মৌসুমি' কিছু প্রেক্ষাগৃহ শাকিব খানের ছবি মুক্তি পেলে কিংবা শুধু ঈদেই খোলা হয়। এগুলোকে বাঁচাতে হলে ‘পরাণ', ‘হাওয়া', ‘তুফান'-এর মতো সারাবছর ভালো কন্টেন্ট দরকার। দর্শকদের পছন্দসই ছবি না পাওয়ার কারণে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গেছে। সারাবছরে মাত্র একটি সুপারহিট দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখা মুশকিল।”

‘তুফান'-এর উদাহরণ টেনে বলা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকাই ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য ঈদকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দুই ঈদ ছাড়া চলতি বছরের অন্যান্য সময় মুক্তিপ্রাপ্ত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রের খরচ পর্যন্ত উঠে আসেনি। এ কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন একের পর এক প্রযোজক। নিশ্চিত মুনাফার আশায় ঈদেই কেবল বড় বাজেটের চলচ্চিত্র মুক্তির প্রবণতা দেখা গেছে। ‘তুফান'-এর ওপর ভর করে সংকট কিছুটা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা বুকে বেঁধেছিলেন প্রদর্শকরা। কিন্তু রাজনৈতিক উত্তাপ ও বন্যার কারণে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে ঢালিউড বক্স অফিস। হঠাৎ স্থবিরতা নেমে আসে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর কিছু চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও দর্শকখরা ছিল হতাশাজনক। আহামরি ব্যবসা করতে না পারলেও ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের দর্শকদের অভিমতে, ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত ১০ চলচ্চিত্রের তালিকায় থাকতে পারে ‘রাজকুমার', ‘দরদ', ‘লিপস্টিক', ‘কাজলরেখা', ‘ওমর', ‘দেয়ালের দেশ', ‘প্রিয় মালতী', ‘পেয়ারার সুবাস', ‘৮৪০' ও 'ফাতিমা'।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পথ ধরে ক্ষমতার পালাবদলে খেই হারিয়েছিল দেশের বিনোদন অঙ্গন। জুলাই অভ্যুত্থান ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে স্থবিরতা নেমে আসে। এ কারণে চলতি বছর নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত দেশীয় কন্টেন্টের সংখ্যা কম। তাই দর্শকপ্রিয় হওয়া কন্টেন্ট হাতেগোনা।

আইস্ক্রিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিকি জাহেদের ‘চক্র' ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
২০০৭ সালের ১১ জুলাই ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেনের নিচে একই পরিবারের ৯ সদস্যের আত্মহত্যার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত চক্র৷ আইস্ক্রিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিকি জাহেদের ‘চক্র' ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।ছবি: Iscreen

আইস্ক্রিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিকি জাহেদের ‘চক্র' ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ২০০৭ সালের ১১ জুলাই ময়মনসিংহে রেললাইনে ট্রেনের নিচে একই পরিবারের ৯ সদস্যের আত্মহত্যার খবরে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেই সত্যি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত ‘চক্র'তে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিণ।

চরকি ছয়টি ওয়েব সিরিজ মুক্তি দিয়েছে ২০২৪ সালে। এগুলো হলো মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের ‘সিনপাট', ভিকি জাহেদের ‘টিকিট', সালজার রহমানের ‘কালপুরুষ', আরিফুর রহমানের ‘বাজি', কাজী আসাদের ‘আধুনিক বাংলা হোটেল' ও নুহাশ হুমায়ূনের '২ষ'। তবে চলতি বছর চরকির সবচেয়ে সফল কন্টেন্ট হলো শিহাব শাহীন পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া'। এতে অভিনয় করেছেন সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান ও তাসনিয়া ফারিণ। চরকিতে গত ১২ মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত অরিজিনাল ওয়েব ফিল্মের তালিকায় আরও আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘মনোগামী' ও ‘ফরগেট মি নট'।

Bangladesch Film Kacher Manush Dure Thuiya
চলতি বছর চরকির সবচেয়ে সফল কন্টেন্ট হলো শিহাব শাহীন পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া'।ছবি: Chorki

ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশি কন্টেন্ট ছিল কেবল তিনটি। এ তালিকায় আছে ভিকি জাহেদ পরিচালিত ‘রুমি', শিহাব শাহীনের ‘গোলাম মামুন' ও অনম বিশ্বাসের ‘রঙিলা কিতাব'। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে দর্শকদের মতামত অনুযায়ী, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব অভিনীত ‘গোলাম মামুন' আশানুরূপ হয়েছে।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ'-তে কাজল আরেফিন অমির ওয়েব ফিল্ম ‘অসময়' ও ‘ফিমেল ফোর' আলোচিত হয়েছে ও দর্শকদের সাড়া পেয়েছে। বঙ্গ'র ২০২৪ সালের কন্টেন্টের তালিকায় আরও ছিল মোমিন বিশ্বাস ও পলাশ নাজিমের ওয়েব সিরিজ ‘বিএনজি সিজন টু'। এছাড়া মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘অপুরুষ'। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে বঙ্গতে এসেছে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘বুকিং' ও গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘গাঁইয়া'।

বিঞ্জে মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব ফিল্মের মধ্যে ছিল ভিকি জাহেদের ‘একটি খোলা জানালা', রায়হান রাফীর ‘মায়া' ও মাইদুল রাকিবের ‘এপার ওপার'। ওয়েব সিরিজের তালিকায় আছে ভিকি জাহেদের ‘আরারাত', সুমন আনোয়ারের ‘টাইগার থ্রি', সাইফুল হাফিজ খানের ‘মহিলা সমিতি' ও জাহিদ প্রীতমের ‘ফ্রেঞ্জি'। এর মধ্যে ‘আরারাত' কিছুটা দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

দীপ্ত প্লে'তে বিদায়ী বছরে নতুন কন্টেন্ট হিসেবে এসেছে ছয়টি ওয়েব ফিল্ম। সঞ্জয় সমদ্দার পরিচালিত ও তানজিন তিশা অভিনীত ‘পয়জন' এবং জিয়াউল ফারুক অপূর্ব অভিনীত ‘ইউএনও স্যার' আলোচিত ছিল। বাকি চারটি ওয়েব ফিল্ম হলো ‘ক্রিমিনালস', ‘মায়া', ‘বিভাবরী' ও ‘ত্রিভুজ'।

ইউটিউবকেন্দ্রিক নাটক

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতোই ইউটিউবকেন্দ্রিক নাটক সংশ্লিষ্টরা জুলাই অভ্যুত্থান ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লোকসানের মুখে পড়েন। সরকার পতনের পর ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও নাটকের ভিউ আগের চেয়ে কমেছে। ধীরে ধীরে সেই সংকট অবশ্য কাটছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন নাটক মুক্তি পাচ্ছে।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বাংলা নাটকের বিভিন্ন গ্রুপে বছরের আলোচিত ফিকশনের তালিকা এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জাহিদ প্রীতমের ‘বুক পকেটের গল্প'। প্রথম সারির কোনও তারকা না থাকার পরও তিন যুগলের কথা নিয়ে নির্মিত নাটকটির দর্শকপ্রিয়তা অভূতপূর্ব। এতে অভিনয় করেছেন মীর রাব্বি, আইশা খান, শাশ্বত দত্ত, প্রিয়ন্তী উর্বী, আবু হুরায়রা তানভীর ও মারিয়া শান্ত।

‘বুক পকেটের গল্প'
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বাংলা নাটকের বিভিন্ন গ্রুপে বছরের আলোচিত ফিকশনের তালিকায় পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জাহিদ প্রীতমের ‘বুক পকেটের গল্প'। ছবি: KS Films

২০২৪ সালের আলোচিত নাটকের মধ্যে আরও আছে জাহিদ প্রীতমের ‘তিলোত্তমা', ভিকি জাহেদের ‘তিথিডোর', ‘চিহ্ন' ও ‘হাজত', জাকারিয়া সৌখিনের ‘রূপকথা' ও ‘শহরে প্রেমের ঘ্রাণ', আশিকুর রহমানের ‘স্মৃতিস্মারক', ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়' ও ‘গর্ভ', কাজল আরেফিন অমির ‘শেষমেশ', মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘ভিতরে বাহিরে', ‘তখন যখন' ও ‘ফুল হাতা শার্ট', মিশুক মিঠুর ‘বিদায় বসন্তে মধ্যাহ্ন রোদে', পথিক সাধনের ‘এইদিন সেইদিন' ও ‘একদিন স্বপ্নের দিন', ইমরাউল রাফাতের ‘শেষ কিছুদিন' ইত্যাদি।

সংগীতাঙ্গনে নতুন হাওয়া

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রভাবে বিদায়ী বছরে সংগীতাঙ্গনে পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। বেশ কিছু তরুণ প্রতিবাদী গান তৈরি করেছেন। র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা'সহ বেশ কিছু গান আলোচিত হয়েছে। রাজপথে আওয়াজ তুলেছেন সংগীতশিল্পী সায়ান। পারসা মাহজাবীনের গাওয়া 'চলো ভুলে যাই' গানটিও হৃদয় ছুঁয়েছে শ্রোতাদের। র্যাপ সংগীতশিল্পী সেজানের কণ্ঠে ‘কথা ক' গানটি অনেকের মুখে মুখে ফিরেছে। এছাড়া ‘চব্বিশের গেরিলা', ‘আমরা বীর', ‘দেশ কার'সহ বেশ কিছু গান আন্দোলনে তরুণদের উজ্জীবিত করেছে।

২০২৪ সালে স্বাভাবিকভাবেই বেশি আলোচনায় ছিল চলচ্চিত্রের গান। তবে সংখ্যায় কম। ‘তুফান' ছবির ‘দুষ্টু কোকিল' ও ‘লাগে উরাধুরা' সাড়া জাগিয়েছে। এছাড়া আলোচিত হয়েছে ‘রাজকুমার' ছবির গান ‘রাজকুমার' (বালাম ও কোনাল) এবং প্রিন্স মাহমুদের কথা-সুরে 'বরবাদ'।

বরাবরের মতো নাটকের জন্য আলাদা করে গান তৈরি হয়েছে সারাবছর। সেগুলোর মধ্যে অনেক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া সংগীতশিল্পীরা এখন সংগীতনির্ভর স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে গান প্রকাশ করছেন। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি'তে তাহসান ও তাসনিয়া ফারিণের গাওয়া ‘রঙে রঙে রঙিন হবো' গানটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে।

শ্রোতাদের অন্যতম আকর্ষণ কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুম এ বছর শুরু হলেও মাত্র তিনটি গান (‘তাঁতী', ‘মা লো মা', ‘অবাক ভালোবাসা') প্রকাশের পর একটি বিজ্ঞাপনচিত্রকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কের কারণে এই আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। ‘অবাক ভালোবাসা' ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ওয়ারফেজ ব্যান্ডের গান। ৩০ বছর পরেও এর আবেদন এতটুকু কমেনি। কোক স্টুডিও বাংলায় গানটি নিয়ে শ্রোতাদের অভূতপূর্ব সাড়া তারই প্রমাণ।

স্টার সিনেপ্লেক্সের সামনে দর্শণার্থীদের লাইন
স্টার সিনেপ্লেক্সের সামনে দর্শণার্থীদের লাইন ছবি: Johny Hoque/DW

চলতি বছর দেশ-বিদেশে কনসার্ট করেছেন ব্যান্ডসংগীত শিল্পীরা। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য নগরবাউল জেমস, সোলস, শিরোনামহীন, চিরকুটসহ আরও বেশ কিছু শিল্পী ও ব্যান্ড। ১৯ বছর পর প্রথম লাইনআপের সদস্যদের (জন, তাহসান, জাহান, টনি ও মিরাজ) নিয়ে মঞ্চে ফিরে আলোচিত হয়েছে ব্ল্যাক ব্যান্ড। চিরবিদায়ের ছয় বছর পর এসেছে এলআরবি ব্যান্ডের সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর অপ্রকাশিত গান ‘ইনবক্স'। মূলত এজন্য এটি আলোচনায় ছিল। 

বিতর্কিত মঞ্চনাটক

মঞ্চনাটককে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছে বিদায়ী বছর। এসব কারণে ভীষণ সমালোচিত হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও এর নতুন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।

দেশনাটকের একজন সদস্য ফেসবুকে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেওয়ায় দলটির ‘নিত্যপুরাণ' নাটকের প্রদর্শনীতে বাধা দেয় একদল বিক্ষোভকারী। এ ঘটনায় নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে নাটকটির মঞ্চায়ন বন্ধ করে দেন শিল্পকলা একাডেমির নতুন মহাপরিচালক। এর প্রতিবাদ হিসেবে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন  সমাবেশ আয়োজন করে। শিল্পকলা একাডেমির সামনে ওই কর্মসূচিতে নাট্যকর্মীরা অতর্কিত হামলার শিকার হন। সমাবেশ চলাকালে একদল ব্যক্তি নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের দিকে ডিম ছুড়ে মারে। এরপর আরণ্যকের নতুন নাটক ‘কম্পানি'তে অভিনয় থেকে মামুনুর রশীদকে বিরত থাকতে বলে বিতর্কের জন্ম দেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। এছাড়া ডিসেম্বর জুড়ে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ‘ডিসেম্বরের উৎসব' নামকরণের কারণে সমালোচনা হজম করতে হয়েছে তাকে।

নিত্যপুরাণ
নিত্যপুরাণ মঞ্চনাটকের একটি দৃশ্যছবি: Desh Natok

রাজনৈতিক পালাবদলের পরই মূলত মঞ্চে বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। তবে বছরের প্রথম ছয় মাসে চিত্রটা স্বাভাবিকই ছিল। নাট্যশিল্পী নিথর মাহবুব ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ঢাকার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো ও বেইলি রোডে মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নিয়মিত নাট্য প্রদর্শনী হয়েছে প্রথম ছয় মাসে। ৬৬তম প্রযোজনা হিসেবে নতুন নাটক ‘কম্পানি' মঞ্চে এনেছে আরণ্যক নাট্যদল। ঈদুল আজহার দিন থেকে টানা পাঁচ দিন শিল্পকলায় এর মঞ্চায়ন হয়। এটি লিখেছেন ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। নাটকটিতে স্বল্প উপস্থিতির একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

চলতি বছরের প্রথম নতুন নাটক হিসেবে মঞ্চে আসে শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটারের তৃতীয় প্রযোজনা ‘রঙিন চরকি'। প্রয়াত নাট্যকার মান্নান হীরার লেখা শেষ নাটক এটি। এরপর মঞ্চে এসেছে দেশনাটকের ২৫তম প্রযোজনা ‘পারো' ও নতুন নাট্যদল নবরসের ‘ঊনপুরুষ'। প্রাঙ্গণেমোর দুটি নতুন নাটক মঞ্চে এনেছে চলতি বছর। এগুলো হলো ‘অভিনেতা' ও ‘টিনের তলোয়ার'। নজরুলের ‘আলেয়া' নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন করেছে বাঁশরী। মতিঝিল থিয়েটার চক্রের প্রযোজনা 'অসময়ে বৃষ্টি'র প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। শওকত ওসমানের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ মঞ্চায়ন করেছে ‘ক্রীতদাসের হাসি'। প্রাচ্যনাট স্কুলের ৪৫তম ব্যাচের অংশ হিসেবে প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাকটিং অ্যান্ড ডিজাইনের প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী' মঞ্চস্থ হয়েছে। আব্দুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুলের ৩৪তম ব্যাচের সমাপনী প্রযোজনা হিসেবে এসেছে ‘এক যে ছিল রাজা'।

জনি হক ডয়চে ভেলের অতিথি লেখক৷
জনি হক অতিথি লেখক৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান