1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের প্রভাব বাড়ছে'

২০ ডিসেম্বর ২০২৪

কেমন ছিল ২০২৪-এর ফেলে আসা দিনগুলো? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সে বিষয়েই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল হক।

https://p.dw.com/p/4oQHx
Bangladesch Dhaka | Professor Obaidul Haque von der Universität Dhaka
ছবি: Sazzad Hossain/DW

ডয়চে ভেলে: বিশ্বরাজনীতিতে এই বছরটি কেমন ছিল? নতুন বছরে এই রাজনীতি কেমন হতে পারে?

মো. ওবায়দুল হক: এই বছর ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য- এগুলোই মোটামুটি প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। দক্ষিণ চীন সাগর বা পূর্ব এশিয়া- এখানে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ। আরেকটা হলো তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে তাদের মধ্যে সবসময় এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করে। বিগত কিছু বছরের তুলনায় এই বছরে কিছুটা স্তিমিত ছিল। নর্থ কোরিয়া নিয়েও এবার খুব বেশি আলোচনা দেখিনি। মূল বিষয় ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধটা একটি অঞ্চলে হলেও এর ফলআউট অনেক বড়। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রভাব। বিশ্বের অনেক দেশে এর প্রভাব আছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, এমনকি আমাদের দেশেও যদি দেখি এর প্রভাব আছে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন। সিরিয়ার একটা পরিবর্তন হলো। এর প্রভাব সামনে পড়বে।

ট্রাম্প আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রভাব কী হবে?

ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধের একটা পরিসমাপ্তি হতে পারে। কিন্তু সেটা কখন হবে, কীভাবে হবে, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া একটা প্রভাব ফেলবে। সেটা ইমিগ্রেশন পলিসি থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যর রাজনীতিসব খানেই প্রভাব পড়বে। সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের পতন- এগুলোর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে বিশ্বরাজনীতিতে।

সেই প্রভাব কেমন হবে?

মধ্য প্রাচ্যের যে রাজনীতি বা ভূ রাজনীতি- সেটার ল্যান্ডস্কেপটা পুরোপুরি বদলে যেতে পারে। ইরান ও তার প্রক্সিগুলো, যেমন হিজবুল্লাহ, হামাস বা হুতিদের কথা যদি বলেন, সেই ব্যালেন্স অব পাওয়ারটা হঠাৎ করে ভেঙে পড়েছে। পুরোটাই এখন ইসরায়েল বা পশ্চিমাদের দিকে ঢলে পড়েছে। বাশার আল আসাদের পতন নিয়ে রাশিয়া তেমন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। কারণ, সে নিজেই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ঝামেলায় আছে। ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের প্রভাব আরো বেড়ে যাচ্ছে।

ট্রাম্পের নীতিতে অর্থনীতি সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। সে দিক থেকে বিশ্বের চিত্রটি কেমন হতে পারে?

বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এখন সামনে ট্রাম্প চীনের সাথে বণিজ্য যুদ্ধে জড়াবেন।  চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াবেন। তিনি তার অর্থনীতির জন্য সংরক্ষণবাদী নীতিতে যাবেন। তার প্রভাব কত দূর পরে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর করোনার পর বিজ্ঞানীরা কিন্তু এখন বিশ্বে আরো একটি মহামারির আশঙ্কা করছেন। সেটি যদি হয়, তাহলে কী পরিস্থিতি হবে তা-ও আমাদের ভাবতে হবে।

 জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে। বিশ্বে শরণার্থী সংকটও বাড়ছে। নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে এর জন্য কি কোনো ইতিবাচক দিক আছে?

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সাত বিলিয়ন মানুষের জীবনে প্রভাব পড়ছে।  যে যেখানেই বসবাস করুক না কেন,  এরজন্য উন্নত বিশ্বই প্রধানত দায়ী। উন্নয়নশীল দেশগুলো এরজন্য জোর দাবি তুলছে। ফান্ডেরও হিসাব হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটা পুরণ হচ্ছে না। এরসঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে এক্সট্রিম ওয়েদার। এখন শরণার্থীসংকট তৈরি হচ্ছে। এটা যে যুদ্ধ বা রাজনৈতিক কারণেই শুধু হচ্ছে, তা নয়। এটা এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও হচ্ছে। এখন এই বার্ডেন শেয়ারিংয়ের প্রশ্ন আসছে। এটা এখন আর ভলান্টারি না। কিন্তু যতই কথা বলা হোক, পশ্চিমা বিশ্ব কিন্তু তেমন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে, তা আশা করি না।

শরণার্থী সংকটের সঙ্গে অভিবাসী সংকট কী বাড়বে?

ট্রাম্প তো এখনই হিসাব করছেন তাদের দেশে কাদের রাখবেন , কাদের রাখবেন না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন এক ধরনের জাতীয়তাবাদী ধারণা তৈরি হচ্ছে। বিদেশি খেদাও এই  প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। কোনো কোনো দেশ তার অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য বিদেশিদের দায়ী করছেন।

রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন মোড় নেবে কিনা...

আসলে ট্রাম্পের নীতিতে চীন হচ্ছে সবার আগে । চীনই যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বদ্বী হিসেবে উঠে আসছে এটা ট্রাম্প ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। ফলে চীনকে ঠেকানোর চেষ্টায়ই ট্রাম্প তার বন্ধু বা শত্রুনির্ধারণ করবেন।

ন্যাটো বা সামরিক জোটগুলোর অবস্থা কী হবে?

ন্যাটো এখনো প্রাসঙ্গিক এবং টিকে থাকবে । কিন্তু ন্যাটোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থের পরিমাণ কমাবে। এর ফলে ইউরোপীয় সদস্যদের বার্ডেন বাড়বে। এটা তারা নিতে চাচ্ছে না। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের টানাপোড়েন বাড়তে পারে।

জঙ্গিবাদ, মানবাধিকারের বিষয়গুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

জঙ্গিবাদ এখন একটি বিতর্কিত ইস্যু।  এটা পরিস্কার হচ্ছে এবং গবেষণায়ও দেখা গেছে যে, এটা যতটা না ভয়ের ছিল, তার চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থে এটা কার্ড হিসেবে প্লে করেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে শত্রুদের ঘায়েল করা, যুদ্ধ টিকিয়ে রাখা, অস্ত্র ব্যবসা- এগুলো এখন স্পষ্ট হচ্ছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা না দিয়ে হলেও এক ধরনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন শত্রু খুঁজে পেয়েছে। সেটি চীন বা অন্য কোনো শত্রু। আর মানবাধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র উন্নত বিশ্বের নীতির কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে করি না। তারা এটাকে গুরুত্ব দেবে। কিন্তু সেটা তাদের মতো করে।

’ট্রাম্প তো এখনই হিসাব করছেন তাদের দেশে কাদের রাখবেন , কাদের রাখবেন না’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে  চীন ও ভারতকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে তার অবস্থান কেমন হবে?

জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ একটা নতুন এবং অভিনব সময় পার করছে। এটা শুধু সরকারের পরিবর্তন নয়। এখানে নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কাজ চলছে। দিন শেষে সেটাকে মানুষ কীভাবে নেয় সেটাই আসল কথা। কিন্তু সেই কারণে তো বাংলাদেশের ব্যাপারে ভূ-রাজনীতি বদলে যাবে না। ভারত- চীন-যুক্তরাষ্ট্র এই তিন শক্তির রাজনীতিকে বাংলাদেশকে হ্যান্ডেল করতে হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখবে? বলা হয়ে থাকে, ট্রাম্পের ওপর মোদীর প্রভাব আছে।

আমার মনে হয় না তারা ভারতের চোখে বাংলাদেশকেদেখবে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চোখে বাংলাদেশকে দেখে তার যে স্বার্থ যেটা সে অ্যাচিভ করতে চায়, সেটা সে পারবে না। এখানে ভূ-রাজনীতির কারণেই সম্পর্ক হবে ইস্যুভিত্তিক। এখানে অনেক ইস্যু আছে, এনার্জি আছে, বঙ্গোপসাগর আছে, মিয়ানমার আছে। চীন ও তাইওয়ান ইস্যু, চীন বাংলাদেশে কতটা প্রভাব তৈরি করে- এইসব অনেক বিষয় আছে।

বিশ্বে তো স্বৈরশাসকদের পতন ঘটছে। শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশ, তারপর সিরিয়া। এই পতন কি অব্যাহত থাকবে?

স্বৈরশাসকদের এই পতন কিন্তু কো-ইনসিডেন্টাল নয়। এগুলো যে হঠাৎ করে এমনিতেই হয়েছে, তা-ও নয়। আসলে মানুষ কিন্তু ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জনতা যে ম্যাটার করে, সেটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে। মানুষ কিন্তু আবার জেগে উঠছে।