1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২০২৪-এ পরিবর্তনের ভারতে আশা ও আশঙ্কার কাহিনি

গৌতম হোড় কলকাতা
২০ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজনীতি থেকে সমাজ, পরিবেশ থেকে আন্দোলন, অপরাধ থেকে বিনোদন সব ক্ষেত্রেই ২০২৪ হলো ভারতে পরিবর্তনের বছর।

https://p.dw.com/p/4oPAy
রাজধানী দিল্লির দৃশ্য৷ পিঠে অক্সিজেনের প্রতীকী ট্যাংক নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের এক যুবক৷
পিঠে অক্সিজেনের প্রতীকী ট্যাংক নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের এক যুবক৷ছবি: Hindustan Times/SipaUSA/picture alliance

প্রতিটি বছরই পরিবর্তন নিয়ে আসে। কখনো কম, কখনো বেশি। ২০২৪-এর ভারতে পরিবর্তনের পাল্লা বেশ ভারি। এই বছর ভারতে এমন কিছু বদল হয়েছে বা হচ্ছে, যা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ। যার প্রভাব দেশ ও মানুষের জীবনে ভালোভাবেই পড়েছে এবং পড়বে।

রাজনীতির দুনিয়ায় পরিবর্তন

২০২৪ সালের বড় পরিবর্তন হলো, কেন্দ্রীয় স্তরে আবার জোট রাজনীতি ফিরে আসা।

২০১৪ ও ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। তারা একার ক্ষমতায় সরকার গঠনের জায়গায় ছিল। সেসময় এনডিএ জোট বহাল থাকলেও এই দশ বছর মূলত ছিল বিজেপি-র শাসন।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয় ৪ জুন। সেই ফল ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। কারণ, বিজেপি সবচেয়ে বড় দল হওয়া সত্ত্বেও পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তারা পায় ২৪০টি আসন, যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে ৩২টি আসন কম। এনডিএ-র বাকি শরিক দলগুলি ৫৩টি আসন পাওয়ায় বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৯৩। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথমবার এনডিএ-র শরিক দলগুলির উপর নির্ভরশীল থেকে সরকার চালাতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড ছুঁতে পারলেও বিজেপিকে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে পারেননি। তাই চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতিশ কুমারদের উপর নির্ভর করেই সরকার চালাতে হচ্ছে মোদীকে। এটা একটা বড় পরিবর্তন।

লোকসভা নির্বাচনের ফলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। তা হলো, ১০ বছর পর ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছে। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে কংগ্রেসের ফল এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার আসনও পায়নি। কিন্তু এবার তারা লোকসভায় ৯৯টি আসনে জিতেছে। রাহুল গান্ধী বিরোধী নেতা হয়েছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জিতেছে ২৩৪টি আসনে। ফলে লোকসভায় বিরোধী দলগুলির শক্তি শুধু যে বেড়েছে তাই নয়, জাতীয় স্তরে কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীর গুরুত্ব বেড়েছে।

লোকসভায় বিজেপি বিশাল ধাক্কা খেয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ৪৩টি আসনে জয়ী হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে গতবারের তুলনায় অনেক খারাপ ফল করেছে বিজেপি। বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদী জিতলেও ভোটের ব্যবধান কমে গেছে অনেকটাই। উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ভোটের আগে প্রচুর ধুমধাম করে নির্মীয়মান রামমমন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরেও যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে এই হার বিজেপি-র কাছে বিশাল ধাক্কা।

রাহুল গান্ধী এবার লোকসভায় দুইটি আসনে লড়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি এবং কেরালার ওয়েনাড়ে। দুইটি কেন্দ্রেই তিনি জেতেন। পরে রাহুল রায়বেরিলি রেখে, কেরালার ওয়েনাড় ছেড়ে দেন। সেখান থেকে উপনির্বাচনে লড়ে জিতে এসেছেন রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কংগ্রেসের নেহরু-গান্ধী পরিবারের আরো এক সদস্য সাংসদে প্রবেশ করলেন।

তবে এই পরিবর্তনের বছরে লোকসভা নির্বাচন কংগ্রেসের কাছে সুখবর নিয়ে এলেও বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে তারা একেবারেই প্রত্যাশামতো ফল করতে পারেনি। একমাত্র ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জেএমএম-কংগ্রেস জোট বিধানসভা ভোটে জিতে আবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। কিন্তু হরিয়ানায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস হেরেছে। তবে তাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে মহারাষ্ট্রেয লোকসভায় পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যে বিজেপি-জোট গোহারান হেরেছিল, সেখানেই বিধানসভা নির্বাচনে তারা হইহই করে জিতেছে।

ফলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেস ও বিজেপি-র ভোটের ফল পেন্ডুলামের মতো পরিবর্তিত হয়েছে।

সেইসঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশে আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন তেলুগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু। ওড়িশায়  ২৪ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর হেরে গেছেন নবীন পট্টনায়েক। মহারাষ্ট্রে আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস। এই সব পরিবর্তন একটা কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে, রাজনীতিতে চিরকাল কারো সমান যায় না। কাউকেই হিসাবের বাইরে রাখা যায় না। জীবনের মতোই এক্ষেত্রে সাফল্য়ের পর ব্যর্থতার মুখ দেখতে হতে পারে। ব্যর্থতার পরেও সাফল্য আসতে পারে।

ভারতের রাজনীতিতে ২০২৪ সালের আরেকটি বড় ঘটনা অবশ্যই জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভার ভোট। লোকসভার সময়ই দেখা গিয়েছিল, জম্মু ও কাশ্মীরে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার ব্যাপারে আগের তুলনায় তারা অনেক বেশি উৎসাহ দেখিয়েছেন। বিধানসভার সময় দেখা গেলো, সেই ধারা বজায় আছে। জম্মু ও কাশ্মীরে গত ১০ বছরের মধ্য়ে প্রথম বিধানসভা ভোট হলো। বিশেষাধিকার বাতিল করার পরও প্রথম ভোট হলো। জম্মু ও কাশ্মীর এখন আর পূর্ণ রাজ্য নয়। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মাত্র। সেখানে বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬৩ শতাংশের বেশি। সেখানে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে এনসি, কংগ্রেস ও বামেদের জোট ৪৯টি আসন পেয়েছে। ওমর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।

ভারতের রাজনীতিতে এত পরিবর্তনের মধ্যে শুধু একটা কথা মনে রাখা ভালো, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে সহিংসতার রাজনীতির ধারা একইরকম আছে। পশ্চিমবঙ্গে ২০২৪ সালে যত নির্বাচন হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে, ভোটের দিন বাইক বাহিনীর তাণ্ডব, ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। বাকি ভারত ভোটে সহিংসতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ ২০২৪ সালেও আগের ধারা অনুসরণ করে ভোটে সহিংসতার পথেই থেকেছে। এখানে তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

আরজি কর-এ চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ব্যাপক আন্দোলন

গত ৯ অগাস্ট আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সরকারি হাসপাতালে এই ঘটনা রাজ্যের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর সামনে আসতে থাকে হাসপাতালের বেনিয়ম, দুর্নীতি, অবিচার, অত্যাচারের একের পর এক কাহিনি। শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তার ও সাধারণ মানুষের আন্দোলন। রাত দখলের ডাক দেয়া হয়। আর সেই আন্দোলনের মধ্যেই আরজি করে দুষ্কৃতীরা ঢুকে ভাঙচুর চালায়। অভিযোগ, সেটা ছিল প্রমাণ লোপের চেষ্টা।

তারপর আরজি করের ঘটনা নিয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাদের সমর্থন করলেন সাধারণ মানুষ। তারাও নেমে এলেন রাস্তায়। মেয়েরা রাতদখল করলেন। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো কলকাতা থেকে জেলা শহরেও। কলকাতায় যে মানুষরা কখনো হয়ত আন্দোলনে, প্রকাশ্য প্রতিবাদে সামিল হননি, তারাও রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করলেন। দাবি জানালেন ন্যায়বিচারের। হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ, ক্ষোভ,অসন্তোষ আছড়ে পড়লো রাজপথে। জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ালেন সিনিয়র ডাক্তাররা। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও সমর্থন করলেন আন্দোলনকারীদের।  সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে মামলার শুনানি শুরু করলো। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও ন্যূনতম সুয়োগসুবিধা নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করা হলো। সিবিআই তদন্ত শুরু করলো।

তারপর? তুষের আগুনের মতো যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল, তা একদিন হঠাতই শেষ হয়ে গেল। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি সম্বল করে আবার কাজে ফিরলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সংগঠিত রাজনীতির কাছে ওই প্রতিবাদ থেমে গেলো। ২০২৪-এ আরজি করের ঘটনা ও পরবর্তী আন্দোলন অন্তত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, নারীদের অবস্থা, নির্যাতনের বহর, দেখিয়ে দিয়েছে, সাধারণ মানুষের ধৈর্য়ের বাঁধও একসময় ভেঙে যায়। তারা তখন প্রতিবাদে সামিল হয়। হয়ত সে আন্দোলন ব্যর্থ হয়, কিন্তু তা আমাদের অনেককিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়।

মণিপুর এখনো জ্বলছে

শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৩ মে। মণিপুরে মেইতেই বনাম কুকিদের সংঘাত। এক বছর পর ২০২৪ সালের ২৪ মে সরকারি হিসাব হলো, ২২১ জন মারা গেছেন, এক হাজার জন আহত, ৩২ জন নিখোঁজ। ৬০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। চার হাজার ৭৬৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহিংসতা থামেনি।

ডিসেম্বরের শেষে এসেও বোঝা যাচ্ছে না, কবে এই সহিংসতা থামবে। কী হবে সেই সমাধানসূত্র। মেইতেই এলাকায় একাধিক ত্রাণশিবিরে ঘরছাড়া মানুষ বসবাস করছেন। আবার কুকিদের এলাকাতেও আছে এরকম অসংখ্য ত্রাণশিবির। দুই এলাকাতেই ছড়িয়ে আছে পোড়া ঘরবাড়ি। একই দেশের একই রাজ্যের মানুষ লড়াই করে যাচ্ছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। ভুল বলেছিলাম, ২০২৪ তো শুধু পরিবর্তনের বছর নয়। মণিপুরের পরিস্থিতির তো পরিবর্তন হয়নি। আশা করব, ২০২৫ মণিপুরে পরিবর্তন আনবে। শান্তি ফিরবে। বন্দুকের আওয়াজ নয়, সেখানে থাকবে সৌহার্দ্য়ের বাতাবরণ। যে পরিবর্তন আমরা ২০২৪-এ দেখতে পাইনি, তা যেন ২০২৫-এ পাই।

গরম, বৃষ্টি, বন্যা, ধস, বায়ুদূষণের বছর

তবে যে পরিবর্তনের বিপদ ভারতে প্রতিবছর বাড়ছে, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। ২০২৪ আবার বুঝিয়ে দিয়েছে, অসচেতন মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কাজের ভার আর প্রকৃতি নিতে পারছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফল ভয়ংকর হচ্ছে। ২০২৪ সাল-জুড়ে বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্য়া হয়েছে, ভয়াবহ ধসের কবলে পড়েছে একের পর এক এলাকা, জলের তলায় চলে গেছে চেন্নাই, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বেহাল হয়েছে জনজীবন, রাজস্থান ও দিল্লির কিছু জায়গায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, আর বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে দিল্লি।

জুন মাসে আসামে ভয়াবহ বন্যা হয়। ১০৯ জন মারা যান। প্রায় দেড় হাজার গ্রাম ও চার লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ৪০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হন। ব্রক্ষ্মপুত্রের জলে ভেসে যায় কাজিরাঙ্গা ন্য়াশনাল পার্ক। ১০টি গণ্ডার-সহ দুইশ পশুর মৃত্যু হয়। ব্রক্ষ্মপুত্র-সহ ১৩টি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকে। আসাম ছাড়াও মণিপুর, সিকিম, অরুণাচলেও বন্যা হয়।

অগাস্টের শেষে ঘূর্ণিঝড় আসনা আছড়ে পড়ে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশে। প্রবল বৃষ্টির জলে ভাসে কচ্ছ ও সৌরাষ্ট্র অঞ্চল। বন্য়ায় ৪৯ জন মারা যান। ১৭টা শহর, প্রায় সাত হাজার গ্রাম, চার হাজার ১৭৩ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্য়ার ফলে গুজরাটের ক্ষতি হয়েছিল ২৫০ কোটি টাকা।

গত বর্যায় ৫১বার ক্লাউডবার্স্ট বা মেঘফাটা বৃষ্টিতে ভেসেছে হিমাচল। এর ফলে চকিত বন্য়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ধস নেমেছে। ৩১ জন মারা গেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ধসের ফলে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার ক্লাউডবার্স্ট ও ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।

জুলাই মাসে কেরালার ওয়েনাড়ে প্রবল বৃষ্টির পর একের পর এক ধস নামতে তাকে। কেরালার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর এই প্রাকৃতিক দুর্য়োগে ২৫৪ জন মারা যান, ৩৯৭ জন আহত হন, ১১৯ জন নিখোঁজ হন। নির্বিচারে জঙ্গল কাটা, বাড়ি বানানো ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এই অবস্থা বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। 

উত্তরপ্রদেশে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে বন্যায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, মানুষ মারা গেছেন। কয়েক মাস আগে অন্ধ্রের বিজয়ওয়াড়ায় বৃষ্টি ও বন্যার ফলে ৩৫জন মারা যান। দুই লাখ ৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।

২০২৪ সালের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা বলে দিচ্ছে, জয়বায়ু পরিবর্তনের বিপদ কতটা বাড়ছে। এটাও বলে দিচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় আমরা এই বিপর্যয় রুখতে কিছুই করছি না। ন্যূনতম সচেতনতা পর্যন্ত নেই। ২০২৫-এর এই মানসিকতার পরিবর্তন হবে কি? কে জানে?

রেল দুর্ঘটনার বছর

২০২৪-এ ভারতে একের পর এক রেল দুর্ঘটনাহয়েছে। রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে ২৯টি রেল দুর্ঘটনা হয়েছে। ১৭জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৭১ জন। এই দুর্ঘটনার পিছনে আছে যান্ত্রিক গোলয়োগ, মানুষের ভুল ও অন্তর্ঘাতের মতো বিষয়গুলি।

এতগুলি রেল দুর্ঘটনা অন্তত একটা বিষয় মনে করিয়ে দিচ্ছে, রেল ব্যবস্থায় সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের প্রবণতা হলো, রেল ব্যবস্থার সংস্কার না করে জনমোহিনী প্রকল্প হাতে নেয়া। একের পর এক ট্রেন চালানো। সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, পুরনো রেল লাইনের বদল, বিকল্প রেলপথ, দ্রুতগতির ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা না করে জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন চালালে সমস্যার সমাধান হয় না। রেল হলো ভারতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। ২০২৫ সালে ভারতীয় রেলের হাল ফিরবে কি?

বিদায় ২০২৪

২০২৪ শেষ হচ্ছে। একটা বছর কিছু ভালো জিনিস নিয়ে আসে, কিছু খারাপও হয়। এটা এমন একটা বছর যখন বিশ্বে দুইটি যুদ্ধ চলছে। অনেক দেশে অস্থিরতা দেখা গেছে। তার প্রভাব ভারতের উপরেও পড়েছে। অর্থনীতির উপর চাপ বেড়েছে। জিনিসের দামও ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। তবে সেসব সামলেও দেশের গরিবদের কাছে বিনা পয়সায় রেশন পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। কিছু ক্ষেত্র চাপে  থাকলেও তথ্যপ্রযুক্তি, পরিষেবা-সহ অনেক ক্ষেত্রে ভালো কাজ হচ্ছে। পরিবর্তনের বছরের শেষে কিছু উদ্বেগ থাকলেও আশাও আছে।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য