মিশরে পাখি সংরক্ষণ করতে শিকারির সহায়তা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪এটা এক পরীক্ষার কাহিনি৷ মিশরের উত্তরে বোরোলোস হ্রদে বিপন্ন পাখি এই এক্সপেরিমেন্টের বিষয়বস্তু৷ অন্যদিকে এক পাখি শিকারি উপার্জনের বিকল্প পথ পেলে সেই কাজ থামাতে চান৷ আর আছেন একজন পরিবেশবিদ, যাঁর মাথায় নতুন এক আইডিয়া এসেছে৷ ক ভ্রমণ সংস্থাও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে৷
মিশরের পর্যটকরা সেই পাখি দেখার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করছেন৷ সেই উদ্যোগ কতটা সার্থক? তারা সবাই একেবারে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন৷ বিশেষ করে সালাহ আবদেলআজিজ নামের শিকারির জন্য এটা একেবারে ভিন্ন কাজ৷
সন্ধ্যা নামতেই তিনি পানিতে প্রবেশ করলেন৷ তিনি বোরোলোস হ্রদে নিজের জাল পরীক্ষা করলেন৷ তিনি নকল হাস ব্যবহার করে আসল পরিযায়ী পাখি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন৷ হ্রদের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় সেই পাখি যাতে নকল হাসগুলির সঙ্গে যোগ দেয়, সেটাই তিনি চান৷ হাসের শব্দ নকল করে তাঁর ডাকের উদ্দেশ্যও এক৷ তবে সেই কৌশল মাঝেমধ্যে কাজ করে৷ বরং খাঁটি হাসের ডাকের রেকর্ডিং আরো নির্ভরযোগ্যভাবে অন্য হাসগুলিকে আকর্ষণ করে৷ এই পদ্ধতি বেআইনি বটে, কিন্তু রাষ্ট্র তাঁর মতো শিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না৷ মিশরে কয়েক হাজার এমন শিকারী সক্রিয়৷
পরের দিন সকালে সালাহ টের পেলেন, যে রাতে তিনি কোনো হাস ধরতে পারেন নি৷ তবে তিনটি নাইট হেরন পাখি ধরা পড়েছে৷ তিনি সাধারণ ক্রেতার কাছে ও রেস্তোরাঁয় সেগুলি বিক্রি করেন৷ পাখি শিকারি হিসেবে তাঁর উপার্জনের কোনো বিকল্প পথ নেই৷ পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য তাঁকে আয় করতেই হয়৷ কিন্তু সেই কাজ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে৷ কারণ তাঁর পছন্দের প্রাণীর সংখ্যা কমে চলেছে৷ তিনি জানান, অতীতে একটি ঝাঁকে ২০০ হাস থাকতো৷ এখন বড়জোর ৫০টি দেখা যায়৷
বোরোলস হ্রদের আয়তন প্রায় ৪৬০ বর্গ কিলোমিটার৷ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মাঝেই সেটি অবস্থিত৷ প্রথমবারের মতো বার্ডওয়াচার ট্যুর আয়োজন করা হচ্ছে৷ সেই হ্রদে একশোরও বেশি প্রজাতির পাথির দেখা মেলে৷ এখন সেগুলি বিপন্ন হয়ে ওঠায় স্থানীয় মানুষ সেগুলির দেখা পাওয়ার মূল্য উপলব্ধি করছেন৷ এমনকি তার জন্য মাসুল দিতেও তাঁরা প্রস্তুত৷
যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ এই ট্যুরে অংশ নেবেন কিনা, আয়োজকরা সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না৷ তাছাড়া অনেক খুঁটিনাটী বিষয় স্থির করতে হয়৷ বারালাস ক্যাম্প পর্যটন সংস্থার আবদেল রহমান গালাল বলেন, ‘‘দূরবিন ছাড়া আমরা বার্ডওয়াচিং ভ্রমণ আয়োজন করতে পারি না, কারণ সেগুলি ছাড়া দূরের পাখি দেখা সম্ভব নয়৷''
মিশরে দূরবিন পাওয়া মোটেই সহজ নয়৷ ‘নেচার কনজার্ভেশন ইজিপ্ট' নামের পরিবেশ সংগঠন দূরবিন জোগান দেয়৷ স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গে বার্ডওয়াচিং ট্যুর চালু করা তাদেরই আইডিয়া ছিল৷
মিশরে বার্ডওয়াচিং গাইডের সংখ্যা খুবই কম৷ সালাহ আবদেলআজিজের মতো দক্ষ গাইড পাওয়া কঠিন৷ পরীক্ষামূলক ভ্রমণের দিনে তাঁর উপার্জন ভালোই হয়েছে৷ তার ফলে শিকার না করে হারানো আয় পুষিয়ে গেছে৷
তারপর জাদুময় পরিবেশ সৃষ্টি হলো৷ পাখিগুলি দলের খুব কাছে এসে মাছের জালের উপর বসলো৷ ইউরোপ থেকে এশিয়া যাবার পথে ব্ল্যাক ক্রাউন্ড নাইট হেরন ও স্কোয়াকো হেরনের দেখা পাওয়া গেল৷ সালাহ আবদেলআজিজের কাছো সেটা ছিল আবেগের এক মুহূর্ত৷ পাখি শিকারি হিসেবে এখন তিনি পাখি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান বিতরন করতে পারছেন৷
টোকা ওমর, ভল্ফ গেবহার্ট/এসবি